অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম দিনই দারুণ এক চমক হয়ে এসেছেন স্পেনের নারী টেনিস খেলোয়াড় ক্রিস্তিনা বুকসা। ভাবা যায়, এ যুগে গ্র্যান্ড স্লাম টেনিস প্রতিযোগিতায় খেলতে এসেছেন নিজের কেনা র্যাকেট নিয়ে। স্পনসর, এনডোর্সমেন্টের যুগে বুকসা খেলছেন কোনো স্পনসর ছাড়াই!
টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন না, কেবল টেনিসের জন্য ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ২০২৩ সালে এসে বুকসা সত্যিই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে বড় এক চমক।
এখন ইনস্টাগ্রাম ছাড়া কোনো তারকাকে কল্পনা করা যায়? নিজের দৈনন্দিন জীবনের অনেকটাই তারকারা ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করে দেন। তাতে লাভ বই ক্ষতি নেই। একেকজনের যে অনুসারীর সংখ্যা, তাতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন হোক, কিংবা বাইরের জীবন—সবটাই যে বিক্রয়তুল্য।
অন্যদের কথা বাদ দিন, হালের টেনিস খেলোয়াড়েরাই তো ইনস্টাগ্রাম পোস্ট কিংবা স্টোরি বা রিল থেকে মিলিয়ন ডলার আয় করেন। অনুসারীর সংখ্যা দেখে নিজেদের পণ্যের প্রচারের জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও হন্যে হয়ে ঘোরে তারকাদের পেছনে। নোভাক জোকোভিচ কিংবা সেরেনা উইলিয়ামসদের ইনস্টাগ্রাম তো পণ্য বিক্রির মাধ্যমও। কিন্তু বিশ্বাস করুন, মলদোভান বংশোদ্ভূত বুকসার কোনো ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট নেই।
এসব নিয়ে ভাবছেনও না বুকসা, ‘ইনস্টাগ্রাম বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে আমার কোনো চিন্তাই নেই। আমি কেবলই নিজেকে নিয়ে ভাবি। নিজের খেলা নিয়ে ভাবি। আমি কখনোই আমার ছবি বা আমার ব্যক্তিগত জীবন সবাইকে দেখাতে চাই না। আমার জীবন পুরোপুরি আমার একান্ত নিজের।’
টেনিসে লাকস্ত ব্র্যান্ডের জার্সি, নাইকির শর্টস, এসিকসের স্নিকার্স বা উইলস র্যাকেট খুবই জনপ্রিয়। সেই সঙ্গে অ্যাডিডাস বা পুমার সরঞ্জাম ছাড়া কি হালের টেনিস খেলোয়াড়েরা কোর্টে নামতে পারেন? টেনিসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো তারকাদের খুঁজে বেড়ায়। এ নিয়ে ইঁদুর–বিড়াল খেলাও চলে।
কিন্তু বুকসার কেন এসব নিয়ে ভাবনা নেই, তার ব্যাখ্যায় বললেন, ‘আমি মুক্ত থাকতে চাই। মুক্তির চেয়ে চমৎকার ব্যাপার আর কীইবা হতে পারে। আমি যেটা খুশি সেটাই পরব, সেটিই ব্যবহার করব। আমার অনেক পোশাক, অনেক স্নিকার্স ইত্যাদির দরকার তো নেই।’
এই পর্যায়ে বুকসার মালিকানায় পোশাকসংক্রান্ত যা কিছু আছে, সেটির হিসাব শুনলে চোখ চড়কগাছ হতে পারে। বুকসা ব্যবহার করেন মাত্র সাতটি শার্ট, সাতটি শর্টস আর সাতটি স্কার্ট। তাঁর কাছে এগুলোই অনেক, ‘আমার এর বেশি দরকার নেই। যথেষ্ট আছে আমার। আমি পোশাকের পেছনে খুব বেশি খরচ করতে রাজিই নই। হ্যাঁ, স্পনসর এলে কথা বলতে পারি।’
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে আসার আগে নতুন র্যাকেট কিনেছেন। নিজেই স্ট্রিং করিয়েছেন তাতে। অবশ্য এ ব্যাপারে বুকসার বাবা তাঁকে যথেষ্ট সহায়তা করেন, ‘আমি আসলে কী ধরনের র্যাকেট নিয়ে খেলতে হবে, সেটিই ভালো বুঝি না। আমার বাবারই সব ব্যবস্থা করে দেন। তিনি পড়তে খুব পছন্দ করেন। সারাক্ষণ বই পড়ছেন। মনোবিজ্ঞান, দর্শন তো আছেই, মানবদেহের বিভিন্ন দিক নিয়েও তিনি অনেক পড়াশোনা করেন।’
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কেমন করতে চান বুকসা। এ ব্যাপারেও আছে তাঁর নিজস্ব ভাবনা, ‘আমি আসলে ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। আমি কোর্টে নেমে বুঝতে চাই, আমি কতটা উন্নতি করলাম। শীর্ষ ১০০–তে থাকতে পেরেই আমি খুশি। কিন্তু এটা তো স্থায়ী কিছু নয়। কোয়ালিফায়ার খেলতে হলে খেলব। বড় ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে সেটিও খেলব। আমি টেনিসটা অন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখি।’
পড়াশোনাতে মনোযোগ বুকসার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন মনোবিজ্ঞান নিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর। পরীক্ষাটা দিতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কারণে। তবে এ ব্যাপারে তাঁর ভাবনা পরিষ্কার, ‘একটা পেতে গেলে আরেকটা জিনিস তো ছাড়তেই হয়।’ বুকসা যেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পাশের বাড়ির মেয়েটি, যে খেলাধুলাটা খুব ভালোবাসে।