মুখে টেপ পেঁচিয়ে কেন এমন অনুশীলন টেনিসের ১ নম্বর সিওনতেকের
অনুশীলনের জন্য অ্যাথলেটদের অভিনব পথ বেছে নেওয়ার ঘটনা নতুন নয় মোটেও। মেয়েদের টেনিসের ১ নম্বর তারকা ইগা সিওনতেক এবার আলোচনায় এসেছেন তেমনই এক পদ্ধতিতে অনুশীলন করে। কানাডিয়ান ওপেনের আগে পোলিশ টেনিস তারকাকে অনুশীলন করতে দেখা গেছে মুখে টেপ পেঁচিয়ে।
সিওনতেকের এমন অনুশীলনের ছবি আসার পর সরব হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কেন এমন করতে পারেন এ ২২ বছর বয়সী, সে আলোচনাও চলেছে। সংবাদ সম্মেলনে সিওনতেক অবশ্য নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন অনুশীলনে তাঁর এমন পদ্ধতির কারণ। মুখে টেপ পেঁচিয়ে অনুশীলনের পরামর্শ সিওনতেককে দিয়েছেন তাঁর ফিটনেস কোচ মাসিয়েই রিশচুক। ‘এনডিউরেন্স’ বা ‘লম্বা সময় ধরে টিকে থাকা’র সামর্থ্য বাড়াতে অক্সিজেন নেওয়ার পথ রুদ্ধ করতেই এমন পদ্ধতি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্ট্রিয়লে সাংবাদিকদের সিওনতেক বলেন, ‘শুধু নাক নিয়ে নিলে নিশ্বাস নেওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। হার্ট রেট (হৃদ্কম্পন) সহজেই বাড়ে এতে। আমি অবশ্য একেবারে পুরোপুরি এটি ব্যাখ্যা করতে পারব না, কারণ আমি বিশেষজ্ঞ নই। মাঝেমধ্যে তারা আমাকে এমন কিছু করতে বলে, যা আমি বুঝি না। তবে দীর্ঘ সময় ধরেই এমন কিছু করে আসছি। এর ফলে এখন (মানিয়ে নেওয়া) সহজ হয়ে গেছে।’
ঠিক না বুঝলেও সিওনতেক এটিকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘তবে মুখে টেপ পেঁচালে কোর্টে যা কিছু করছি, সেসব কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বেশ। এর ফলে আমাকে খুব দ্রুত দৌড়াতে না দিয়ে এটি এনডিউরেন্স বাড়াতে এবং আরও কঠিন কাজ করতে সহায়তা করবে বলে আমার অনুমান।’
সিওনতেকের প্রস্তুতির তালিকায় টেপ-পদ্ধতিই অবশ্য প্রথম ব্যতিক্রমী কিছু নয়। তিনি একমাত্র খেলোয়াড়, যাঁর সঙ্গে পূর্ণ মেয়াদে একজন স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট (ক্রীড়া মনোবিদ) থাকেন। তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের কার্যক্রমতা পরীক্ষা করতে মেডিকেল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। বুদ্ধিমত্তা পরিমাপে তাঁর জন্য ধাঁধা এবং ছোটখাটো খেলারও ব্যবস্থা থাকে।
মন্ট্রিয়লে দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্যারোলিনা প্লিসকোভার মুখোমুখি হবেন সিওনতেক। এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালের প্রতিপক্ষ ক্যারোলিনা মুখোভার মুখোমুখি হতে পারেন তিনি শেষ ১৬-তে। সর্বশেষ উইম্বলডনে কোয়ার্টার ফাইনালেই বাদ পড়লেও কানাডায় আসার আগে নিজ দেশে ওয়ারশ ওপেন জিতেছেন এখন পর্যন্ত চারটি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সিওনতেক।
তবে এ মাসের শেষে শুরু হতে যাওয়া ইউএস ওপেন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী গতবারের চ্যাম্পিয়ন। ওয়ারশতে হার্ড কোর্টে খেলা আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে তাঁকে, ‘গত বছর ঘাসের কোর্ট থেকে লাল মাটি, এরপর আবার হার্ড কোর্টে খেলা বেশ কঠিন ছিল। এবার ওয়ারশতে হার্ড কোর্টে খেলা আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। এ বছর সুন্দর একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি বলেই মনে হচ্ছে। নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়াটা সহজ হচ্ছে। ইউএস ওপেনের আগে এটিকে দারুণ মনে হচ্ছে।’
গত বছর টানা ৩৭টি ম্যাচ জেতার পর উইম্বলডন এবং পরে ওয়ারশতে হেরে ইউএস ওপেনে যেতে হয়েছিল সিওনতেককে। এবার পরিস্থিতিটা ভিন্ন, ‘আমার ভালোভাবেই মনে আছে, টেকনিক্যাল কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। এর ফলে কোথায় উন্নতি করতে হবে, সে ব্যাপারে আরও মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু এমন কিছু শটে আটকে যাচ্ছিলাম, যেগুলো আমার পছন্দ নয়। এ বছর তেমন কিছু হচ্ছে না, নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে।’
মন্ট্রিয়লে এর আগে খেলেননি সিওনতেক। তবে কানাডায় তাঁর সুখস্মৃতিই আছে। ২০১৯ সালে টরন্টোতে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা সিওনতেক তিন সেটের ম্যাচে চমকে দিয়েছিলেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে। এরপর নাওমি ওসাকার সঙ্গেও স্মরণীয় লড়াই হয়েছিল তাঁর। বড় মঞ্চে খেলার আত্মবিশ্বাস কানাডাতেই পেয়েছিলেন তিনি।
সে অভিজ্ঞতার দিকে ফিরে তাকিয়ে সিওনতেক বলেছেন, ‘যখন টরন্টোতে খেললাম, আমার কাছে এটা ব্রেকথ্রুর মতো ছিল। কারণ, এর পরই আমার উপলব্ধি হয়েছিল যে আমি বড় খেলোয়াড়দের হারাতে পারি, অভিজ্ঞদের হারাতে পারি। কারণ, আমার মনে আছে, প্রথম সেট ৬-০-তে হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। এর ফলে সবকিছু ঝেড়ে ফেলে ম্যাচে মনোযোগ দিতে পেরেছিলাম।’