২৪তম গ্র্যান্ড স্লামের চূড়ায় উঠে ৫০ বছরের পুরোনো রেকর্ড ছুঁলেন জোকোভিচ
মার্গারেট কোর্টের ২৪তম গ্র্যান্ড স্লামের রেকর্ড ছোঁয়ার সুযোগ এর আগে এসেছিল কেবল সেরেনা উইলিয়ামসের সামনে। সেরেনা একাধিকবার চেষ্টা করেও পারেননি। কিন্তু সেরেনা না পারলেও পেরেছেন নোভাক জোকোভিচ। গতকাল রাতে রাশিয়ার দানিল মেদভেদেভকে সরাসরি ৩-০ সেটে হারিয়ে জিতেছেন নিজের ২৪তম গ্র্যান্ড স্লাম। এর ফলে ৫০ বছর অক্ষত থাকার পর মার্গারেট কোর্টের এককভাবে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসালেন কেউ।
আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে লড়াইটা শুনতে যতটা একপেশে মনে হচ্ছে, মোটেই তেমনটা ছিল না। প্রথম সেটে জোকোভিচ ৬-৩ গেমের অনায়াসে জয় পেলেও দ্বিতীয় সেটে অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মেদভেদেভ। দুজনের হার না মানা লড়াইয়ের কারণে সেই সেটের স্থায়িত্ব হয় ১ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শেষ হাসি হেসেছেন জোকোভিচই। সেটটি তিনি জেতেন ৭-৬ (৭-৫) গেমে। দ্বিতীয় সেটে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া মেদভেদেভ তৃতীয় সেটে আর পারেননি। হেরে যান ৬-৩ গেমে। আর এতেই রেকর্ডের চূড়ায় ওঠেন জোকোভিচ।
২৪তম গ্র্যান্ড স্লাম নিশ্চিত করার পর ধীরপায়ে জোকোভিচ এগিয়ে যান প্রতিপক্ষ মেদভেদেভের দিকে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর দুই হাত ওপরে তুলে র্যাকেট ছুড়ে দিয়ে শুরু করেন উদ্যাপন। এরপর সিজদার ভঙ্গিতে মাটিতে উপুড় হয়ে বসে থাকেন কিছু সময়। হয়তো যে কীর্তি নিজের করে নিয়েছেন সেটার মাহাত্ম্য বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
একটু পরই বোঝা যায় তখন আসলে কাঁদছিলেন এই টেনিস মহাতারকা। এরপর উঠে গিয়ে কন্যাকে জড়িয়ে ধরে রাখেন কিছু সময়। আবার কোর্টে ফিরে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে, দর্শকদের উদ্দেশে চুমু পাঠিয়ে চলে যান পরিবার ও দলের সদস্যদের কাছে। তাঁদের সঙ্গে স্ট্যান্ডে গিয়ে চলে উন্মাতাল উদ্যাপন।
রেকর্ড গড়া এই জয়ের পর উচ্ছ্বসিত জোকোভিচ বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে পৃথিবীর সবকিছু। আমি সত্যিই আমার শৈশবের স্বপ্নের ভেতর আছি। যখন আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম এই খেলাটির সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার লড়াই করার। এ জন্য আমাকে ও আমার পরিবারকে অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল।’
ইতিহাসের চূড়ায় ওঠা নিয়ে জোকোভিচ বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি এ পর্যন্ত আসতে পারব। তবে কয়েক বছর ধরে মনে হচ্ছিল ইতিহাস গড়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। যখন সেটি সামনে আছে, কেন তা নিজের করে নেব না!’
এই জয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালের সঙ্গেও নিজের ব্যবধানটা আরও বাড়িয়ে নিলেন জোকোভিচ। নাদালের ২২তম গ্র্যান্ড স্লামের বিপরীতে জোকোভিচের গ্র্যান্ড স্লাম সংখ্যা এখন ২৪। চলতি বছরই চার গ্র্যান্ড স্লামের তিনটি জিতেছেন জোকোভিচ। উইম্বলডনের ফাইনালে গিয়েও অল্পের জন্য হার মানতে হয়েছিল। সে জন্য অবশ্য কিছুটা দুঃখ বোধও আছে জোকোভিচের, ‘উইম্বলডন জিততে না পারায় কিছুটা দুঃখ আছে। কিন্তু দিন শেষে আমার কাছে খুশি হওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে।’
তবে এই মুহূর্তে জোকোভিচ যে ছন্দে আছেন, তা যদি ধরে রাখতে পারেন, মার্গারেট কোর্টের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে এককভাবে সবার ওপরে উঠে যাওয়াটা শুধুই সময়ের ব্যাপার। কে জানে, আগামী বছরের অস্ট্রেলিয়া ওপেনেই হয়ে যেতে পারে সেই কীর্তিও।