গত বছর ব্যাংকে ছিল ১ লাখ, এক ম্যাচ জিতেই পাচ্ছেন ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা
প্রথম যেবার কোনো গ্র্যান্ড স্লামের মূল পর্বে খেলেছিলেন সুমিত নাগাল, প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিলেন রজার ফেদেরারকে। ২০১৯ সালের ইউএস ওপেনে প্রথম রাউন্ডের ওই ম্যাচে হারলেও প্রথম সেটটি জিতেছিলেন নাগাল। ভারতের পুরুষ টেনিসের সিঙ্গেলসের পরবর্তী তারকা ভাবা হচ্ছিল তাঁকে আগে থেকেই।
তবে নাগাল হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। আজকের আগে গ্র্যান্ড স্লামের মূল পর্বে সর্বশেষ খেলেছিলেন ২০২১ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। সেটিও ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে। প্রথম রাউন্ডে হেরে যান, পরের তিন বছর কোনো গ্র্যান্ড স্লামের মূল পর্বে খেলারই সুযোগ পাননি। কখনো বাছাইপর্বে হেরেছেন, কখনো বাধা হয়ে এসেছে চোট।
সেই নাগাল আজ ফিরিয়ে আনলেন ৩৫ বছরের পুরোনো স্মৃতি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম রাউন্ডে র্যাঙ্কিংয়ের ২৭ নম্বর ও টুর্নমেন্টের ৩১তম বাছাই কাজাখস্তানের আলেক্সান্ডার বুবলিককে সরাসরি সেটে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি ৬-৪, ৬-২, ৭-৬ (৭/৫) গেমে। ১৯৮৯ সালের পর প্রথম কোনো ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে কোনো গ্র্যান্ড স্লামের বাছাই প্রতিপক্ষকে হারালেন ২৬ বছর বয়সী নাগাল। ভারতের ১ নম্বর ও বিশ্বের ১৩৭ নম্বর র্যাঙ্কিংয়ের সুমিত অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এবার এসেছেন বাছাইপর্ব পেরিয়েই।
সুমিতের আগে ভারতীয় কোনো খেলোয়াড়ের এমন কীর্তি ছিল রমেশ কৃষ্ণানের। ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেরই দ্বিতীয় রাউন্ডে সে সময়ের ১ নম্বর ম্যাটস ভিলান্ডারকে হারিয়েছিলেন কৃষ্ণান। তবে এ রেকর্ড ঠিক জানা ছিল না সুমিতের। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১০ মিনিট আগেও জানতাম না। অবশ্যই উপভোগ করছি। কারণ, এগুলো চিরস্থায়ী নয়, এর ফলে এমন মুহূর্ত উপভোগ করতে হবে।’
গত বছর নাগাল ভারতে ভাইরাল হয়েছিলেন ভিন্ন একটি কারণে। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে ৯০০ ইউরোর (১ লাখ ৭ হাজার টাকা) মতো আছে, পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে জীবনযাপনই কঠিন হয়ে উঠেছে তাঁর। আজকের জয়ের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যাওয়া সুমিত পাবেন ১ লাখ ৮০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা)। ২০২৩ সালের পুরো মৌসুমের আয় থেকেই এটি বেশি তাঁর।
স্বাভাবিকভাবেই নাগালকে আবেগ ছুঁয়ে যাচ্ছে, ‘বছরটা শুরু হয়েছিল চ্যালেঞ্জারে (বাছাইপর্ব) সুযোগ না পেয়ে, সেখানে বৃহস্পতিবার স্লামে (দ্বিতীয় রাউন্ডে) খেলব—আবেগঘন ব্যাপার। আমার দলের সঙ্গে অনেক খেটেছি এবং যেসবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, সেগুলো সামলাতে পেরে আমি গর্বিত। যেভাবে চাই, সেভাবে পারফর্ম করতে পেরেও গর্বিত।’
টেনিসের স্বপ্নটা টিকিয়ে রাখতে ভারত থেকে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন নাগাল। মেলবোর্নে তাঁর সাফল্যের পর ভারতের টেনিস সংস্কৃতি বদলাবে বলেও আশা করেন তিনি, ‘কেন সব টেনিস খেলোয়াড় ভারতের বাইরে চলে যাচ্ছে সুযোগ পেতে? আমাদের এই প্রশ্নটা তোলা উচিত। অবশ্যই সারা দিন বসে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তবে সহজ করে এককথায় বলতে বললে বলব—সিস্টেম বদলান। আর কিছু নয়।’
বিশাল অঙ্কের প্রাইজমানির ব্যাপারটিও এখনো হজম হয়নি তাঁর, ‘অবশ্যই কাঁদছি না, তবে অবশ্যই এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। জানেন তো, অ্যাথলেট হিসেবে এসবের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। মাঝেমধ্যে আপনার ভালো একটি বছর কাটবে, মাঝেমধ্যে বাজে কাটবে।’
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে নাগালের প্রতিপক্ষ চীনের জুনচেং শাং। ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে এসে তিনি হারিয়েছেন এটিপি র্যাঙ্কিংয়ের ৪২ নম্বর খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকেঞ্জি ম্যাকডোনাল্ডকে।