জোকোভিচের দাবি, অস্ট্রেলিয়ায় তাঁকে ‘বিষাক্ত’ খাবার দেওয়া হয়েছিল
ছেলেদের টেনিসে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী নোভাক জোকোভিচ দাবি করেছেন, ২০২২ সালে মেলবোর্নে আটক থাকার সময় তাঁকে সিসা ও পারদমিশ্রিত ‘বিষাক্ত’ খাবার দেওয়া হয়েছিল।
সেবার করোনার টিকে নিতে অনিচ্ছুক জোকোভিচ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে দেশটিতে যাওয়ার পর তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়। একটি ডিটেনশন হোটেলে তাঁকে আটকেও রাখা হয়েছিল। তখন আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলেন র্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শুরুর আগে তাঁকে দেশটি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ছেলেদের বিখ্যাত জিকিউ ম্যাগাজিন গতকাল ছেলেদের টেনিসে ২৪ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী এই মহাতারকার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। সেখানে খাবারে বিষপ্রয়োগের দাবি করে জোকোভিচ বলেন, ‘স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যায় ভুগছিলাম, মেলবোর্নের হোটেলে যেটা আমি বুঝতে পারি। যে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তাতে বিষক্রিয়ায় ভুগছিলাম।’
জোকোভিচ এরপর বলেন, ‘সার্বিয়ায় ফেরার পর কিছু বিষয় আবিষ্কার করেছি। জনসমক্ষে এটা আমি কখনো বলিনি, তবে যেটা আবিষ্কার করেছিলাম, (শরীরে) উচ্চমাত্রার ধাতব রয়েছে। উচ্চমাত্রার সিসা ও পারদ ছিল।’
৩৭ বছর বয়সী এই সার্বিয়ানের কাছে সরাসরি জানতে চাওয়া হয়েছিল, খাবারে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল, সেটা তিনি সত্যিই বিশ্বাস করেন কি না? জোকোভিচের উত্তর, ‘এটাই একমাত্র পথ।’
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র বিভাগের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘গোপনীয়তার স্বার্থে’ ব্যক্তিগত এসব বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারেন না। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জোকোভিচ যে হোটেলে ছিলেন, সেই পার্ক হোটেলের সঙ্গে লিজ চুক্তি হয়েছিল। আটক ব্যক্তিদের জন্য সেখানে দুপুর ও রাতে রান্না করা সতেজ খাবার দেওয়া হয়েছে।
খাদ্যাদি পরিবেশনের সঙ্গে জড়িত সব কর্মীর নিরাপদ খাবারের বিষয়ে সার্টিফিকেট নেওয়া আছে বলে জানানো হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেলটির পক্ষ থেকে আটক থাকাদের জন্য দেওয়া প্রতি বেলার খাবারের নমুনা ডিটেনশন সার্ভিসের কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুষ্টিকর, সাংস্কৃতিকভাবে খাপ খায় এবং তার পাশাপাশি মেডিকেল ও পথ্য বিচারে উপযোগী বিভিন্ন রকম খাবার বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল আটক ব্যক্তিদের জন্য।
সকালের নাশতার খাবার হিসেবে নুটি, সেরেল, নুডলস, চা ও কফির ব্যবস্থাও ছিল, যেটা দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময় সরবরাহ করা হতো।
মেলবোর্ন পার্কে আগামী রোববার শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। জোকোভিচ সেখানে এই প্রতিযোগিতায় নিজের ১১তম এবং সব মিলিয়ে রেকর্ড ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের লক্ষ্যে কোর্টে নামবেন। জোকোভিচ জানিয়েছেন, ২০২২ সালের সেই বিতর্কের পরও ‘অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি তাঁর কোনো ক্ষোভ নেই।’
২০২২ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলার সুযোগ না পেলেও পরের বছর প্রতিযোগিতাটি জেতেন তিনি।
জোকোভিচ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় কিংবা বাইরে গত কয়েক বছরে অনেক অস্ট্রেলিয়ানের সঙ্গেই পরিচয় হয়েছে। যে আচরণ আমি পেয়েছি, সে জন্য তারা ক্ষমা চেয়েছে এবং নিজ দেশের সরকারের জন্য লজ্জিত হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর তারা আমার ভিসা পুনর্বহাল করেছে এবং সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি আসলে জায়গাটা ভালোবাসি। আর ফলই বলে দিচ্ছে টেনিসের প্রতি আমার সেনসেশন এবং সেখানে আমি থাকতে পছন্দ করি।’
জোকোভিচ আরও জানিয়েছেন, ‘কয়েক বছর আগে দেশটি থেকে যারা আমাকে বের করে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছাও নেই। যদি কোনো দিন তা হয়েও যায়, অসুবিধা নেই। তাদের সঙ্গে আনন্দ নিয়েই হাত মেলাব।’