এবার কসোভো নিয়ে বিতর্কে জড়ালেন জোকোভিচ
যত সময় যাচ্ছে, ততই যেন বিতর্কের সমার্থক হয়ে যাচ্ছেন নোভাক জোকোভিচ। আবারও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস তারকা। কাল ফ্রেঞ্চ ওপেনে প্রথম রাউন্ডে আলেকসান্দর কোভাচেভিচকে হারিয়ে ক্যামেরার ওপর একটি বার্তা লেখেন সার্বিয়ান তারকা, ‘সার্বিয়ার হৃদয় কসোভো। সহিংসতা থামাও।’
ফ্রেঞ্চ ওপেনে সার্বিয়ান সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কসোভা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন জোকোভিচ, ‘কসোভো আমাদের আঁতুড়ঘর, আমাদের দুর্গ, আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর কেন্দ্রবিন্দু...ক্যামেরায় কেন ওটা লিখেছি তার অনেক কারণ আছে।’
কসোভোর উত্তরাঞ্চলে সম্প্রতি আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত একজন মেয়র নির্বাচিত হন। এতে জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে দেশটিতে। জাতিগত সার্ব বিক্ষোভকারীরা কসোভোর উত্তরাঞ্চলে ন্যাটোর শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ৫০ জন প্রতিবাদকারীর সঙ্গে ৩০ শান্তিরক্ষীও আহত হয়েছেন।
কসোভোর সার্বরা গত মাসে উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোয় নির্বাচন বয়কট করেন। আলবেনিয়ান মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় স্থানীয় কাউন্সিলে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন আলবেনিয়ান নাগরিকেরা। কিন্তু সেখানে মোট ভোটারসংখ্যার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ আলবেনিয়ান। গত সপ্তাহে নির্বাচিত মেয়রদের আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেন কসোভোর প্রেসিডেন্ট আলবিন কুর্তি।
প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কোভাচেভিচকে ৬-৩, ৬-২, ৭-৬ (৭/১) গেমে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছেন র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় জোকোভিচ। রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াতে চান না, এমন কথা বললেও তাঁর বক্তব্যে বিতর্ক ওঠাই স্বাভাবিক। জোকোভিচ বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই, আর রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ানোর ইচ্ছাও নেই। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। কসোভোয় যা ঘটছে, তা সার্ব হিসেবে দেখাটা আমার জন্য কষ্টের। পৌরসভা অফিস থেকে আমাদের লোকদের যেভাবে বের করে দেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য আমি অন্তত এতটুকু করতে পারতাম।’
সার্বিয়ার ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হলেও জোকোভিচ মনে করেন, দেশের মানুষ হিসেবে এ বিষয়ে দায়িত্বটা তিনি এড়াতে পারেন না, ‘তারকা হলেও আমি এমন একজনের সন্তান, যাঁর জন্ম কসোভোয়। আমাদের মানুষ এবং গোটা সার্বিয়ার প্রতি সমর্থন জানানোর দায়িত্বটা তাই অনুভব করি। এ নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই এবং এটাই আমার অবস্থান। আমি যুদ্ধ, সহিংসতা ও যেকোনো সংঘর্ষের বিরুদ্ধে, যা আগেও বলেছি। অবশ্যই সব রকম মানুষের প্রতিই আমি সহমর্মী। কিন্তু কসোভোয় যা ঘটছে, তাতে আন্তর্জাতিক আইনের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।’
ফিলিপ শাতরিয়ে কোর্টের পাশে টিভি ক্যামেরার ওপর ‘সার্বিয়ার হৃদয় কসোভো’ কথাটা লেখেন জোকোভিচ। যুগ্মভাবে রেকর্ড ২২টি গ্র্যান্ডস্লামজয়ী জোকোভিচ এমন মন্তব্যের জন্য শাস্তি পাওয়ার ভয় করছেন না। সার্বিয়ার সংবাদমাধ্যম জোকোভিচের এমন অবস্থানের প্রশংসা করেছে। সেখানকার একটি ট্যাবলয়েড জোকোভিচকে নিয়ে লিখেছে, ‘জোকোভিচ নির্ভেজাল কথার মানুষ। সার্বিয়ানদের হৃদয়ে যা বইছে, জোকোভিচ সেটাই প্যারিসে করে দেখিয়েছেন।’
গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন জোকোভিচ। ৩৬ বছর বয়সী তারকা করোনাভাইরাসের টিকা না নিয়েই মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা বাতিল করে তাঁকে ফেরত পাঠিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া সরকার। এ নিয়ে তখন প্রচুর বিতর্ক হয়েছে এবং টিকা না নেওয়ায় গত বছর ইউএস ওপেনেও খেলতে পারেননি জোকোভিচ।