নাদালকে সম্মান জানাতে একটি পোস্ট জোকোভিচের কাছে যথেষ্ট নয়
শত্রু তুমি, বন্ধু তুমি!
কোর্টে তাঁরা শত্রু। কিন্তু কোর্টের বাইরে? বন্ধু—এ কথা সরাসরি বলা না গেলেও তাঁদের একে–অপরের প্রতি যে সম্মানবোধ ও আন্তরিকতা, সেই বিচারে তো বন্ধুই! আর সেই বন্ধুর নাম যদি হয় রাফায়েল নাদাল তাহলে তিনি অবসর ঘোষণা করায় শুভকামনা ও সম্মান জানাতে বিশেষ কিছুই লিখতে হয়। নোভাক জোকোভিচ এমন এক লেখাই লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
২২ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী নাদাল গতকাল টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। আগামী নভেম্বরে স্পেনের হয়ে ডেভিস কাপ খেলে টেনিস কোর্টকে বিদায় জানাবেন স্প্যানিশ কিংবদন্তি। রজার ফেদেরার থেকে নোভাক জোকোভিচ নিশ্চয়ই নাদালের এই সিদ্ধান্তে ভেতরে ভেতরে পোড়ার গন্ধ পেয়েছেন। কারণ, নাদাল তো তাঁদের কাছে শুধু নাম নয়, স্মৃতির এক আস্ত উপাখ্যান। প্রায় দুই দশক ধরে টেনিস–কোর্টে তাঁর চেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আর কে ছিলেন ফেদেরার–জোকোভিচের সামনে!
টেনিসকে আগেই বিদায় বলে দেওয়া ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী ফেদেরারও নাদালের অবসর ঘোষণার পর চুপ থাকেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা এক পোস্টে বলেছেন, ‘কী ক্যারিয়ার রাফা! আমি সব সময় চেয়ে এসেছি, এ দিনটা যেন কখনো না আসে। আমাদের ভালোবাসার খেলাটিতে তোমার অবিস্মরণীয় স্মৃতি আর অসাধারণ সব অর্জনের জন্য ধন্যবাদ।’
কিন্তু এমন দিন তো আসেই। একসময় নিজের জায়গা থেকে সবাইকেই সরে দাঁড়াতে হয়। ফেদেরার–জোকোভিচরা যে এই বাস্তবতা বোঝেন না, তা নয়। সবকিছু বুঝেই তাঁরা বিদায়ী অর্ঘ্য দিয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীকে।
জোকোভিচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাদালের জন্য লিখেছেন একটু বড় করে। বৃহস্পতিবার করা পোস্টে ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী সার্বিয়ান কিংবদন্তি লিখেছেন, ‘রাফা, তোমার জন্য আমার যে সম্মানবোধ এবং খেলাটির জন্য তুমি যা করেছ, তা একটি পোস্টে বোঝানো সম্ভব না। তুমি লাখো শিশুকে টেনিস খেলতে উদ্ভুদ্ধ করেছ এবং আমি মনে করি এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হয় না।’
ছেলেদের টেনিসে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী জোকোভিচ এরপর লিখেছেন, ‘তোমার দৃঢ়তা, নিবেদন, লড়াইয়ের চেতনা দশকের পর দশক ধরে শেখানো হবে। তোমার লিগ্যাসি চিরকালীন। শুধু তুমিই জানো টেনিস ও খেলাধুলার আইকন হয়ে উঠতে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তুমি অনেকবারই আমাকে সামর্থ্যের শেষ সীমায় ঠেলে দিয়েছ, যা খেলোয়াড় হিসেবে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছে। স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করার প্রতি তোমার প্যাশনও অসাধারণ। স্পেনের ডেভিস কাপ দলের হয়ে মালাগায় তোমার জন্য সেরা বিদায়ী সংবর্ধনা কামনা করছি। তোমার দুর্দান্ত ক্যারিয়ারের প্রতি সম্মান জানাতে আমি নিজে সেখানে উপস্থিত থাকব।’
টেনিস কোর্টে ধ্রুপদী সব লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছেন নাদাল–জোকোভিচ। টেনিসের উন্মুক্ত যুগে সবচেয়ে বেশি ৬০ বার মুখোমুখি হয়েছেন দুই কিংবদন্তি। ৩৮ বছর বয়সী নাদাল ও ৩৭ বছর বয়সী জোকোভিচ সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছেন রোলাঁ গারোতে, প্যারিস অলিম্পিকের দ্বিতীয় রাউন্ডে। দেড় যুগ আগে ২০০৬ সালে দুজনের প্রথম দেখাও ছিল একই কোর্টে, ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে। দুজনের দ্বৈরথে ৩১-২৯ ব্যবধানে এগিয়ে জোকোভিচ।