সৌদি আরবে ডব্লিউটিএ ফাইনালস চান না এভার্ট–নাভ্রাতিলোভা

টেনিসের দুই কিংবদন্তি ক্রিস এভার্ট (বাঁয়ে) ও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাএএফপি

সৌদি আরবে মেয়েদের টেনিসের ডব্লিউটিএ ফাইনালস আয়োজনের সম্ভাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই কিংবদন্তি ক্রিস এভার্ট ও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ প্রকাশিত এক মতামত কলামে ট্যুর অফিশিয়ালসদের সমালোচনা করেছেন তাঁরা।

৬৯ বছর বয়সী এভার্ট ও ৬৭ বছর বয়সী নাভ্রাতিলোভা ১৮টি করে গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিতেছেন। ১৯৭৩ সালে মেয়েদের টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউটিএ) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শুরুর দিকের তারকা ছিলেন তাঁরা। যৌথভাবে লেখা কলামে দুজনেই সৌদি আরবে ডব্লিউটিএ ফাইনালস আয়োজনের ভাবনার জন্য ট্যুর অফিশিয়ালদের সমালোচনা করেছেন, ‘সৌদি আরবের ব্যবহারের জন্য আমরা মেয়েদের টেনিসের ভিত গড়তে সাহায্য করিনি।’

আরও পড়ুন

এভার্ট ও নাভ্রাতিলোভা বলেছেন, ‘পুরুষশাসিত এই বিশ্বে মেয়েদের ক্ষমতায়ন ও সাম্যতার লক্ষ্যে’ তারা হৃদয় নিংড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ‘সেই কাজ এখন বিপন্ন’ বলে মনে করেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই কিংবদন্তি যৌথ কলামে সোজাসাপটা লিখেছেন, ‘খেলোয়াড়েরা এই খেলার মূল ভিত। তাদের সঙ্গে পর্যাপ্ত কথা না বলেই ডব্লিউটিএ ট্যুর অফিশিয়ালরা সৌদি আরবে ডব্লিউটিএ ফাইনালস আয়োজনের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। ডব্লিউটিএ এবং মেয়েদের টেনিসের চেতনা ও লক্ষ্যের সঙ্গে এটা কোনোভাবেই মানানসই নয়।’

তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘রিয়াদে ট্যুরের সেরা টুর্নামেন্টটি আয়োজনের বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সম্মান জানাই।’

সৌদি টেনিস ফেডারেশনের দূত হয়েছেন রাফায়েল নাদাল
সৌদি টেনিস ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট

কয়েক বছর ধরে খেলাধুলায় প্রচুর টাকা ঢালছে সৌদি আরব। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) মাধ্যমে ফুটবলে সৌদি প্রো লিগের চেহারাই পাল্টে ফেলেছে তারা। ইউরোপ থেকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, নেইমার ও সাদিও মানের মতো তারকাদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই লিগে। ১৬ জানুয়ারি স্প্যানিশ টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালকে নিজেদের দূত হিসেবে ঘোষণা করে সৌদি টেনিস ফেডারেশন।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনজয়ী তারকা ক্যারোলিন ওজনিয়াকি এরপর বলেছিলেন, ‘আমি চাই এই খেলা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক। সৌদি আরব এ ক্ষেত্রে সত্যিই সম্ভাবনাময় দেশ...আমি মনে করি, এটা অনিবার্য, এটা হতে চলেছে। যখন এটা ঘটবে, তখন সেখানে আমাদের পরিবর্তন আনার এবং ভালো কিছু করার সুযোগ আছে।’

আরও পড়ুন

কিন্তু সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বহু আগে থেকেই সোচ্চার উন্নত বিশ্ব। সমালোচকেরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হলে সৌদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। খেলাধুলাকে ব্যবহার করে সৌদির আন্তর্জাতিক খ্যাতি বাড়ানোর এ চেষ্টা সমালোচকদের চোখে ‘স্পোর্টস ওয়াশিং’ ছাড়া আর কিছু নয়। যদিও এরই মধ্যে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে জেদ্দায় নেক্সট জেন এটিপি ফাইনালস আয়োজন করেছিল সৌদি টেনিস ফেডারেশন।

এ ছাড়া নোভাক জোকোভিচ-কার্লোস আলকারাজ এবং আরিয়ানা সাবালেঙ্কা-উনস জাবিরের মধ্যে দুটি প্রদর্শনী ম্যাচও হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, এ বছর ডব্লিউটিএ ফাইনালসও আয়োজন করবে সৌদি। এর আগে পেশাদার গলফের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট পিজিএ ট্যুরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এলআইভি গলফ ট্যুর চালু করে সৌদি, যা পরে একীভূত করা হয়। সৌদির বিনিয়োগ আছে ফর্মুলা ওয়ানেও।

এভার্ট ও নাভ্রাতিলোভা নিজেদের কলামে লিখেছেন, ‘যাঁরা আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন, ডব্লিউটিএর মূল্যবোধ তার বিপরীত। সেটা শুধু এ কারণে নয় যে সেখানে মেয়েদের সমান চোখে দেখা হয় না; বরং এটা এমন এক দেশ, যেখানে আইনগুলো পুরুষের মুঠোবন্দী, আর তাই নারীরা সেখানে তাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।’ তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘নারীদের অসম অবস্থান সৌদির আইনেই গভীরভাবে প্রোথিত এবং এই অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার নারীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবাসের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। তাই আমরা খোলামেলা এবং সততার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সৌদিকে টুর্নামেন্ট উপহার দেওয়া বসে বসে দেখতে পারি না।’

টেনিসের হল অব ফেমে জায়গা করে নেওয়া দুই কিংবদন্তি জোর দিয়ে বলেছেন, বিশ্বে যত দিন নারীরা বৈষম্যের শিকার হবে, তত দিন ডব্লিউটিএকে অবশ্যই মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করতে হবে। শেষ কথায় তাঁরা লিখেছেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা এই কথা বলছি; শুধু ট্রফি ও আয়ের কারণে কেউ চ্যাম্পিয়ন হয় না, বরং আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে নিজের আদর্শের পক্ষে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকেই চ্যাম্পিয়নের জন্ম হয়।’

আরও পড়ুন