সময়ের মুখ
সাকিব ভাইয়ের খেলাই আমার ভালো লাগে
ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে গিয়েই বাংলাদেশের মেয়েরা হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে (১৪ মার্চ)। সেদিন ৩৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাহিমা খাতুন হন ম্যাচসেরা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ জুবাইর।
প্রশ্ন :
ক্রিকেটে হাতেখড়ি কীভাবে?
ফাহিমা: ছোটবেলায় ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলতাম বড় ভাইদের সঙ্গে। এটা ছিল শুধু ভালো লাগা থেকে। বাবাও খেলাপাগল ছিলেন। ২০১১ সালের দিকে মাগুরা জেলায় মেয়েদের ক্রিকেটের প্রচারণা চলছিল। তখনই আমি নিজেকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করি। সেখান থেকেই সবকিছুর শুরু।
প্রশ্ন :
শুরু থেকেই কি লেগ স্পিনার ছিলেন?
ফাহিমা: এটা কাকতালীয়। আমি ব্যাটার ছিলাম। সঙ্গে মিডিয়াম পেস বোলিং করতাম। জাতীয় দলে ডাক পাই ব্যাটার হিসেবে। একবার মাগুরায় নেট সেশন শেষে ক্লান্ত ছিলাম। দৌড়ে এসে বল করার জোর পাচ্ছিলাম না। তাই মজা করেই লেগ স্পিনারের মতো বল করি। যে ভাইয়া ব্যাট করছিলেন তিনি টার্নে পরাস্ত হন। তখন লেগ স্পিন কী, আমি সেটা জানতামই না। ওই ভাইয়াই আমাকে নিয়মিত লেগ স্পিন করতে বলেন। সেখান থেকেই শুরু।
প্রশ্ন :
লেগ স্পিনারদের মধ্যে কার বোলিং সবচেয়ে পছন্দ?
ফাহিমা: শেন ওয়ার্ন।
প্রশ্ন :
শেন ওয়ার্ন কিছুদিন আগেই মারা গেছেন…
ফাহিমা: হ্যাঁ। অনেক খারাপ লেগেছে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে।
প্রশ্ন :
পড়াশোনার চাপ সামলে খেলা চালিয়ে গেলেন কীভাবে?
ফাহিমা: পরিবার চাইত, আমি পড়াশোনা করি। খেলতে হলে সেটা পড়াশোনার পাশাপাশি। আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) করছি। এমনও দিন গেছে আমি দিনে ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলে রাতে জার্নি (যাতায়াত) করে কুষ্টিয়ায় গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।
প্রশ্ন :
শুনেছি আপনার বড় ভাই খেলার পক্ষে ছিলেন না?
ফাহিমা: হ্যাঁ, ভাইয়া খেলার কথা শুনলে রাগ করতেন। আমি তাঁকে না জানিয়ে খেলাধুলা করতাম। ভাইয়া ঢাকায় থাকতেন বলে টের পেতেন না। আমার বড় বোন আমাকে এ ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছেন। ভাইয়া চাইতেন আমি ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হই। এখন অবশ্য তিনি অনেক সমর্থন করেন।
প্রশ্ন :
ক্রিকেটে আপনার অনুপ্রেরণা কে?
ফাহিমা: যেহেতু আমি মাগুরার মেয়ে, আমাদেরই এলাকার সাকিব ভাইয়ের (সাকিব আল হাসান) খেলাই আমার খুব ভালো লাগে। তিনিও স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার। আমিও তা–ই। সাকিব ভাইয়ের কোচ, আমার কোচও একই। আমাদের দুজনেরই হাতেখড়ি সাদ্দাম হোসেন স্যারের কাছে।
প্রশ্ন :
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কখনো ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়েছে?
ফাহিমা: আমি একবার ছেলেদের সঙ্গে একটা ম্যাচ খেলছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘যখন ছেলেদের সঙ্গে খেলবে, তখন একবারও ভাববে না যে তুমি ছেলেদের বিপক্ষে খেলছ। তুমিও তাদের মতোই খেলোয়াড়। তোমার হাতে অস্ত্র হিসেবে ব্যাট আছে। তুমি এটা নিয়েই যুদ্ধ করবে।’
প্রশ্ন :
বিশ্বকাপ কেমন কাটছে?
ফাহিমা: এই বিশ্বকাপে দলগুলোর মধ্যে ওয়ানডে (এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচ) খেলার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম আমাদের। পাকিস্তানকে হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও হারিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছিল (৪ রানে পরাজয়)। এমন ক্লোজ (হাড্ডাহাড্ডি লড়াই) ম্যাচে অভিজ্ঞতাই পার্থক্যটা গড়ে দেয়। আমরা সেই জায়গায় পিছিয়ে ছিলাম। এই উপলব্ধিটা এসেছে। আশা করি, পরের ম্যাচগুলোতে এসব কাজে লাগাব।
প্রশ্ন :
প্রায় প্রতি ম্যাচেই তো বাংলাদেশ দল ভালো খেলছে।
ফাহিমা: এই বিশ্বকাপে আমাদের হারানোর কিছু নেই। কিন্তু পাওয়ার অনেক কিছু আছে। এটা মাথায় রেখেই খেলছি। যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি, প্রতিটিতেই কিন্তু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এটা আমাদের নারী ক্রিকেটের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।