সাক্ষাৎকারে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার ডম্মারাজু গুকেশ
‘যতক্ষণ জেগে থাকি, দাবা নিয়েই থাকি’
জয়তু শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অনলাইন দাবায় অংশ নিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার (রেটিং ২৫৬৩) ভারতের ডম্মারাজু গুকেশ। কাল প্রতিযোগিতার শেষ দিনে জুম অ্যাপসের অন্য প্রান্তে পাওয়া গেল চেন্নাইয়ের ১৪ বছর বয়সী দাবাড়ুকে। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গুকেশ শোনাল এত অল্প বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার রহস্য ও তার উঠে আসার গল্প-
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের কোনো টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেললে। কেমন অভিজ্ঞতা হলো?
ডম্মারাজু গুকেশ: টুর্নামেন্টটিতে খেলতে বেশ ভালো লেগেছে। যদিও র্যাপিড দাবার চেয়ে আমি স্ট্যান্ডার্ড গেমটাই বেশি উপভোগ করি। এখানে আমি কোনো ম্যাচই হারিনি (৯ ম্যাচে ৪ জয়, ৫ ড্রয়ে সাড়ে ছয় পয়েন্ট। অবস্থান ষষ্ঠ)। এ জন্যই বেশি ভালো লাগছে।
প্রশ্ন :
গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পাওয়ার সময় তোমার বয়স ছিল ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন। এত অল্প বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার (বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ) খেতাব অর্জন করে কেমন লেগেছিল?
গুকেশ: তখন এতই ছোট ছিলাম যে ঠিক বুঝিইনি কী করেছি। একটা অর্জন যে হয়েছে, সেটা বুঝতে কিছুদিন সময় লেগেছে। এত কম বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারার আনন্দটাই অন্য রকম।
প্রশ্ন :
রাশিয়ান দাবাড়ু সের্গেই কারিয়াকিন সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পেয়েছিলেন ১২ বছর ৭ মাস বয়সে। অল্প কয়েক দিনের জন্য রেকর্ডটা তোমার হয়নি...
গুকেশ: কারিয়াকিনের রেকর্ড ভাঙতে পারিনি বলে একটু খারাপ লেগেছিল। ওই সময় আমি বার্সেলোনায় একটা টুর্নামেন্টে খেলছিলাম। ওই টুর্নামেন্টে শেষ জিএম নর্মটা করতে পারলেই হতো। কষ্টটা ভুলতে সময় লেগেছিল। কিন্তু একসময় মনে হলো যদি ম্যাগনাস কার্লসেন সর্বকনিষ্ঠ জিএম খেতাব না পেয়েও বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু হতে পারেন, তাহলে আমি কেন পারব না? ওসব ভুলে গেছি। এখন শুধু সামনের দিকে তাকাতে চাই।
প্রশ্ন :
কত বছর বয়সে দাবা খেলা শুরু করেছিলে?
গুকেশ: যখন খেলা শুরু করি, তখন আমার বয়স ছিল সাড়ে ছয় বছর। বাবার সঙ্গে দাবা খেলতাম। বাবাই আমাকে দাবা খেলা শিখিয়েছেন।
প্রশ্ন :
মা-বাবা কী করেন? তোমরা কয় ভাইবোন?
গুকেশ: আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা রজনীকান্ত চেন্নাইয়ের নাক, কান ও গলার চিকিৎসক। মায়ের নাম পদ্মা। তিনি পেশায় মাইক্রোবায়োলোজিস্ট। আমাকে দাবাড়ু বানাতে দুজনই প্রচুর কষ্ট করেন। নিজেদের পেশায় সেভাবে সময় দেন না। মা-বাবা না থাকলে এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না।
প্রশ্ন :
এখন কোন ক্লাসে পড়ছ? দাবা খেলতে গিয়ে কি পড়াশোনায় কোনো সমস্যা হয়?
গুকেশ: আমি চেন্নাইয়ের ভেলাম্মাল বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছি। কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে গেলে অনেক সময় ক্লাস করতে পারি না। তবে এসব ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকেরা অনেক সহযোগিতা করেন।
প্রশ্ন :
দিনে কয় ঘণ্টা অনুশীলন করতে হয়?
গুকেশ: দিনের বেশির ভাগ সময় দাবার বোর্ড নিয়েই ব্যস্ত থাকি। যতটুকু সময় জেগে থাকি, দাবা নিয়েই সময় কাটে আমার।
প্রশ্ন :
ক্যারিয়ার নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য আছে?
গুকেশ: দাবা এমন একটা খেলা, যেখানে প্রতিনিয়ত উন্নতি করতে হবে। আমার কাছে এখনো মনে হয়, সর্বশেষ গেমটা যদি আরও ভালো খেলতে পারতাম!
প্রশ্ন :
দাবা খেলা তো অখণ্ড মনোযোগের ব্যাপার। কীভাবে নিজেকে তৈরি কর?
গুকেশ: মাথা ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিন মেডিটেশন করি। তামিল সিনেমার হাসির দৃশ্যগুলো দেখতে ভালো লাগে। নিজেকে হালকা করতে এগুলো বেশ কাজে আসে। আমার কোচ প্রসন্ন স্যার (গ্র্যান্ডমাস্টার বিষ্ণু প্রসন্ন, তিনিও খেলেছেন জয়তু শেখ হাসিনা টুর্নামেন্টে) আমাকে ধৈর্য ধরতে ও শান্ত থাকতে শিখিয়েছেন। জিতি বা হারি, সব পরিস্থিতিতেই তিনি আমাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে শিখিয়েছেন।
প্রশ্ন :
রমেশবাবু প্রজ্ঞানানন্দের রেকর্ডটা (ভারতের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার) তুমিই ভেঙেছ। রেকর্ড ভেঙে কেমন লেগেছে?
গুকেশ: এটা অবশ্যই ভালো লাগার মতো একটা ব্যাপার। আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু। প্রায়ই নিজেদের মধ্যে খেলা নিয়ে আলোচনা করি।
প্রশ্ন :
বিশ্বের কোন দাবাড়ুর খেলা বেশি ভালো লাগে?
গুকেশ: ম্যাগনাস কার্লসেন, ববি ফিশার, বিশ্বনাথন আনন্দ-সবার খেলাই ভালো লাগে। এঁদের খেলা দেখলে অনেক কিছু শেখা যায়।