জয়ের বিকল্প আসলে কিছু নেই: মাশরাফি
>
সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। এমন ম্যাচের আগে কী পরিকল্পনা বাংলাদেশের? গতকাল টন্টনে ম্যাচের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা
প্রশ্ন: আপনাদেরও ৩ পয়েন্ট, ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। দুই দলের জন্যই এই ম্যাচটা শুধু নিজেরা পয়েন্ট পেয়ে এগিয়ে যাওয়ার নয়, অন্য দলটাকে ছিটকে দেওয়ার চ্যালেঞ্জও। প্রায় নকআউট এই ম্যাচ নিয়ে আপনিও কি এভাবেই ভাবছেন?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: হ্যাঁ। দুই দলেরই এখন সমান পয়েন্ট। কিন্তু আমি মনে করি, এখন শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবার সময়। টুর্নামেন্টের দিকে তাকালে বলব, অবশ্যই অল্প কয়েকটা ম্যাচই শুধু হাতে আছে। কিন্তু কাল আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ। শেষ তিন ম্যাচে আমরা কিছু পয়েন্ট হারিয়েছি। সুতরাং আমরা কাল অবশ্যই ভালো খেলতে চাই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু তারাও অনেক সমস্যায়ও পড়েছে। বাংলাদেশের অফ স্পিন ওরা খেলতে পারছে না। মেহেদী ভালো বল করছে। আপনারা কি এটা নিয়ে ভাবছেন? যদিও ম্যাচটা খুব ছোট মাঠে।
মাশরাফি: হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা অফ স্পিনার নিয়ে খেলে ওদের বিপক্ষে বেশ কিছু সাফল্য পেয়েছি। এটা নিয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে। আমরা যদি গত কয়েকটা ম্যাচ দেখি তাহলে দেখব মেহেদী ওদের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেছে। ২০১৯ বিশ্বকাপেও সে ভালো বল করছে, এমনকি ডানহাতিদের বিপক্ষেও। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম পাঁচজনই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে মাঠ এখানে বেশ ছোট। আমাদের তাই এটা নিয়েও ভাবতে হবে। অবশ্য ছোট মাঠ আমাদের জন্যও ভালো। আমি মনে করি, এটা দুই দলের জন্যই ভালো।
প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাম্প্রতিককালে ভালো করছেন আপনারা। এটা কি আপনাদের বোলিংয়ের কারণে? নাকি আগের চেয়ে আপনারা অনেক ভালো খেলছেন?
মাশরাফি: আমি মনে করি, বোলাররা কঠিন পরিশ্রম করছে। এবং ওরা যেমন ক্রিকেট খেলছে সেটা সব সময়ই ইতিবাচক। সর্বশেষ দুই-তিন সিরিজে ওদের বিপক্ষে আমাদের বোলিং চমৎকার হচ্ছে। সুতরাং আমাদের এই ইতিবাচক বিষয়টা ধরে রাখতে হবে এবং সেরাটা খেলতে হবে।
প্রশ্ন: মুশফিকুর রহিমের কী অবস্থা? কাল কি খেলতে পারবেন? একজন ব্যাটসম্যানকে বসিয়ে কি বাড়তি পেস বোলার নেওয়ার কথা ভাবছেন?
মাশরাফি: প্রথমত বলব, আমরা এখনো কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি। কিন্তু মুশফিক খুব ভালো আছে। তার এক্স-রে করানো হয়েছে। এই মুহূর্তে তাকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা কাল সে-ই নেবে। কিন্তু এই মুহূর্তে তাকে ভালোই মনে হচ্ছে।
আর বোলিং নিয়ে বলব, ওদের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে একজন ব্যাটসম্যান কম নেওয়াটা ভালো ব্যাপার হবে না। আমাদের এটা নিয়েও ভাবতে হবে। আমরা যদি সব উইকেট হারিয়ে ফেলি, এতে দলের সমস্যা হবে। কিন্তু আবারও বলব, আমাদের ম্যানেজমেন্ট আছে। সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে, সেরাটা দিতে হবে।
প্রশ্ন: গ্রুপ পর্বের মাঝামাঝি টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কেমন খেলেছে বলে মনে করেন? সেমিফাইনালে যেতে হলে আপনাদের আর কী করতে হবে?
মাশরাফি: এখনো আমাদের হাতে পাঁচটি ম্যাচ আছে। তাই এখনই কিছু বলা যাবে না। তবে আপাতত ওই পাঁচটা ম্যাচ নয়, কালকের ম্যাচটাই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটা একটা করে ম্যাচ ধরে এগোতে চাই।
প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে এখন রাসেল, গেইল এসেছে। আপনি কি মনে করেন এ জন্য বাংলাদেশের বোলারদের চ্যালেঞ্জটা বেশি থাকবে?
মাশরাফি: ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলতে গেলে যেকোনো দলই প্রথম পরিকল্পনা সাজায় তাদের ব্যাটিং নিয়ে। ওরা সব সময় অনেকটা টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে চায়। ওয়ানডেও তারা ওভাবেই খেলে। সুতরাং তারা যখন সফল হবে তখন বোলারদের জন্য মাঠে কাজটা খুব কঠিন হবে। আমাদের প্রথম থেকেই চেষ্টা করতে হবে যেন আমরা দ্রুত উইকেট নিতে পারি।
প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ৯ ম্যাচে ৭টা জয় বাংলাদেশের। এই জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে কী করতে হবে? একাদশে রুবেল হোসেনের আসার সম্ভাবনা কতটুকু?
মাশরাফি: প্রথমত, জয়ের ধারাবাহিকতা নিয়ে বলব, এ ধরনের টুর্নামেন্ট আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এক না। এ ধরনের টুর্নামেন্টে একটা দলের পর অন্য দল নিয়ে চিন্তা করতে হয়। দ্বিতীয়ত, হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে যেকোনো কিছু করা সম্ভব পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা এর আগে ৭টা জিতেছি মানে এই না যে আমরা এখানেও জিতব। আর রুবেলের ব্যাপারে বলব, হতে পারি আমি টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ। কিন্তু এখানে নির্বাচক আছেন। কোচ আছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে আসলে এই মুহূর্তে রুবেলকে দলে নেওয়া হবে কি না, সেটা বলা কঠিন।
প্রশ্ন: মাঠটা ছোট, এটা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কতটা সুবিধা বা অসুবিধার?
মাশরাফি: ওয়েস্ট ইন্ডিজ যত বড় মাঠেই খেলুক না কেন, ওদের মিস হিটও অনেক সময় ছয় হয়ে যায়। আমি বলব, বড় মাঠে যেটা ছয় হবে, সেটা তো এখানে আর ১২ হয়ে যাবে না! কিন্তু মাঠ ছোট হওয়াতে আমাদের ব্যাটসম্যানদের সুবিধা একটু বাড়বে। আমাদেরও ওই সুযোগগুলো থাকবে। তাই আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি থাকবে। কারণ, মাঠ ছোট বলে যেগুলো এজ হবে, আউট হওয়ার ফিফটি–ফিফটি সুযোগ, সেগুলোও এখানে হয়তো ছয় হয়ে যাবে। এমনিতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলতে গেলে বোলারদের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই থাকে।
প্রশ্ন: মাঠের বাইরে নানা কারণে আপনার দলের সমালোচনা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এই ম্যাচে জয়টা দলের জন্য কতটা জরুরি?
মাশরাফি: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর শেষ কথা হচ্ছে জয় আমাদের সব সময়ই প্রয়োজন। আমরা যদি আরও একটা ম্যাচ জিতে থাকতাম তাহলেও এই ম্যাচে আমাদের জয় প্রয়োজন হতো। জয়ের বিকল্প আসলে কিছু নেই।
প্রশ্ন: উইকেট দেখে কী মনে হয়েছে? আর উইকেট ঠিকঠাক বুঝতে পারাটা ব্যাটসম্যান বা বোলারদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মাশরাফি: আসলে একটা ম্যাচের হার বা জিত অনেকটাই নির্ভর করে উইকেট বুঝতে পারার ওপরে। আমার কাছে মনে হয়, নিউজিল্যান্ড ম্যাচে এটা আমরা মিস করেছি। আমরা যদি উইকেট ঠিকভাবে বুঝতে পারতাম তাহলে হয়তো অনুধাবন করতে পারতাম ২৬০ বা ২৭০–ই ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট রান ছিল। এখানকার উইকেটেও একই রকমের বিভ্রান্তি আছে। প্রথম দিকে শুনেছি ঘাস থাকতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছে শুরুর দিক থেকেই উইকেট ফ্ল্যাট থাকবে। আমি মনে করি, যারা উইকেট যত দ্রুত বুঝতে পারবে, তারাই লাভবান হবে। উইকেট বুঝতে পারলে মোটামুটি খেলেও অনেকটা এগিয়ে থাকা যায়।