সাক্ষাৎকারে শেখ জামালের গাম্বিয়ান স্টাইকার ওমর জোবে
জোবের ছোট্ট একটু ঝলকই দেখেছেন
প্রিমিয়ার লিগে এবার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে রানার্সআপ করার পেছনে বড় অবদান পা ওমর জোবের। লিগে প্রতিপক্ষের জালে ৫৩ গোল দিয়েছে শেখ জামাল এবং এর ১৯টিই গাম্বিয়ান স্ট্রাইকার জোবের। বসুন্ধরা কিংসের রবসন রবিনহোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত যুগ্মভাবে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। কাল গুলশানে ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুটবলারদের দেওয়া সংবর্ধনায় এসে প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ক্যারিয়ার, বাংলাদেশের ফুটবল ও অন্যান্য বিষয়ে।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: লিগ শুরুর আগে কত গোলের আশা করেছিলেন?
ওমর জোবে: এবার ৩০টি গোল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হলো না। তবে যা করেছি, তাতেই খুশি। দলকে রানার্সআপ করতে সাহায্য করেছি।
প্রশ্ন :
সলোমন কিং, সুলাইমান সিল্লাহ, ওমর জোবে—শেখ জামালের এই ত্রিমূর্তি তো প্রতিপক্ষের কাছে ছিল আতঙ্কের নাম...
জোবে: (হাসি) সলোমনের সঙ্গে দেশে দীর্ঘদিন খেলেছি। মাঠে তাই আমাদের বোঝাপড়া ভালো ছিল। সিল্লাহও ভালোই মানিয়ে নিয়েছে আমার সঙ্গে। গোল পাওয়াটা তাই সহজ হয়েছে। আসলে ফুটবলে তো একটাই ভাষা। সবাই সবাইকে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল ভালোবাসে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ হয় না। অথচ এখানে অনেক প্রতিভাবান বিদেশি ফুটবলার খেলে। বড় সমস্যা বেশির ভাগ ভালো মানের দেশি ফুটবলার খেলে বসুন্ধরা, আবাহনীতে। ভালো ফুটবলার উত্তর বারিধারা, ব্রাদার্সের মতো দলেও থাকতে হবে। তা না হলে লিগ জমজমাট হবে না। আর লিগ জমজমাট না হলে জাতীয় দলও কখনো শক্তিশালী হবে না।
প্রশ্ন :
মাঝারি মানের দল গড়েও শেখ জামাল রানার্সআপ হলো। পেছনের রহস্যটা কী?
জোবে: মাঠের বাইরেও আমরা সব সময় একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। ম্যাচের আগে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। অধিনায়ক হিসেবে সলোমনের কাজটা তাই বেশ সহজ হয়ে গেছে। স্থানীয় ফুটবলারদের অবদানকেও খাটো করে দেখার উপায় নেই। ওরাও কঠোর পরিশ্রম করেছে। শুধু সলোমন কিং, সিল্লাহ, ওতাবেক খেলেনি। ওরাও খেলেছে। সবাই একটা দল হয়ে খেলেছি।
প্রশ্ন :
শিরোপাদৌড়ে কোন জায়গায় পিছিয়ে পড়েছিল শেখ জামাল?
জোবে: প্রথম রাউন্ডে বেশ কিছু ম্যাচে বাজে গোল খেয়েছি। আমাদের রক্ষণভাগ তত ভালো ছিল না। এমনও ম্যাচ গেছে ৩ গোল দিয়ে ২ গোল হজম করেছি। আবাহনীর সঙ্গে দ্বিতীয় লেগে এগিয়ে থেকেও হেরেছি বাজে রক্ষণের কারণে। রক্ষণ ও মাঝমাঠে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।
প্রশ্ন :
আপনি সেনেগাল, তুরস্ক, বেলজিয়ামে ফুটবল খেলেছেন। এবার বাংলাদেশেও খেললেন। অন্য দেশের লিগের তুলনায় কেমন মনে হলো বাংলাদেশের লিগ?
জোবে: বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল ভালোবাসে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ হয় না। অথচ এখানে অনেক প্রতিভাবান বিদেশি ফুটবলার খেলে। বড় সমস্যা বেশির ভাগ ভালো মানের দেশি ফুটবলার খেলে বসুন্ধরা, আবাহনীতে। ভালো ফুটবলার উত্তর বারিধারা, ব্রাদার্সের মতো দলেও থাকতে হবে। তা না হলে লিগ জমজমাট হবে না। আর লিগ জমজমাট না হলে জাতীয় দলও কখনো শক্তিশালী হবে না।
প্রশ্ন :
আগামী মৌসুমে এএফসি কাপের প্লে-অফে খেলার সম্ভাবনা আছে শেখ জামালের। সুযোগ পেলে কি আশা থাকবে?
জোবে: পরের মৌসুমেও সবাই দেখতে চাইবে, জোবে কেমন খেলে। আমি আমার সামর্থ্য জানি। যদি মাঠে সেভাবে খেলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের কোনো ডিফেন্ডার আমাকে আটকাতে পারবে না। তপু বাংলাদেশের সেরা ডিফেন্ডার। সে আমাকে প্রায়ই বলে, ‘তুমি আমাকে প্রচুর বিরক্ত করো।’ আমি হেসে বলি, ‘ইয়েস ব্রাদার। এটাই ফুটবল।’ আপনারা জোবের ছোট্ট একটু ঝলকই দেখেছেন। পুরো ঝলক এখনো দেখানো হয়নি।
প্রশ্ন :
কেন সম্ভব হয়নি?
জোবে: এখানে ভালো খেলায় বড় বাধা মাঠ। যদি একবার দেশের বাইরে কোনো ক্লাবের সঙ্গে খেলতে পারতাম, তখন দেখতেন জোবে কী করতে পারে। বর্ষাকালে খেলতে হচ্ছে, কাদাভরা মাঠে। কেন এখানে আরও তিন–চারটি ভালো মাঠ থাকবে না?
প্রশ্ন :
আপনার ফুটবলার হওয়ার গল্পটা বলবেন?
জোবে: ফুটবল আমার রক্তে। বাবা–চাচা সবাই ফুটবলার ছিলেন। আমি ১৬ বছর বয়সে একাডেমিতে ভর্তি হই। গাম্বিয়ার বিমানবন্দরের পাশের ইউনডুম গ্রামে আমার জন্ম। কৈশোরে সারাক্ষণই ফুটবল খেলতাম। তখন থেকেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বড় ভক্ত আমি। মনে হয়, যদি রোনালদোর মতো খেলতে পারতাম!