১৪-২২ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হকির জন্য জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মালয়েশিয়ার গোবিনাথান কৃষ্ণমূর্তিকে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) উপদেষ্টা হকি কোচ। প্রিমিয়ার লিগ শেষে ৩০ নভেম্বর তাঁর অধীন শুরু হবে জাতীয় দলের ক্যাম্প। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। এ টুর্নামেন্ট ও চলমান লিগ সম্পর্কে কাল বিকেএসপিতে বসে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন মালয়েশিয়ার ৪৩ বছর বয়সী এই কোচ।
প্রশ্ন :
বিদেশিদের মধ্যে আপনিই প্রথম, যিনি তৃতীয়বারের মতো জাতীয় হকি দলের কোচ হলেন। নিশ্চয়ই খুব রোমাঞ্চিত!
গোবিনাথান: অবশ্যই। কোচের দৃশ্যপটেই তো আমি ছিলাম না। অসুস্থ থাকায় (মাহবুব) হারুন ভাই দায়িত্ব নিতে পারেননি। দুই সপ্তাহ আগে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিকেএসপিতে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেন, আমার সহযোগিতা চান। আমি যেহেতু বিকেএসপিতে কর্মরত, তাই বিকেএসপি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিই। হয়তো খেলোয়াড়দের সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা থাকায় ফেডারেশন আমাকে বেছে নিয়েছে।
প্রশ্ন :
সোমবার ৩২ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করা হয়েছে। হঠাৎ করে কোচ হওয়ায় দল নির্বাচনে আপনার সম্পৃক্ততা কেমন ছিল?
গোবিনাথান: কাল রাতে খেলোয়াড় নির্বাচক কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয়েছিল। তবে দলে কারা আছে, আমি এখনো দেখি নাই। আসলে বাংলাদেশে মানসম্মত হকি খেলোয়াড়ের সংখ্যা খুবই কম। যারা ভালো খেলোয়াড়, তাদের আমরা সবাই চিনি। আমার পছন্দের কোনো খেলোয়াড় দলে না থাকলে পরবর্তী সময় ফেডারেশন আমাকে ডেকে নিতে বলেছে। লিগের ম্যাচগুলোর ভিডিও আমি দেখেছি। আমার বিকেএসপির ছাত্ররা লিগে খেলছে। ওদের সমস্যা সমাধানের জন্য ভিডিও দেখতে হয়। তাই সব খেলোয়াড় সম্পর্কেই আমার ধারণা আছে।
প্রশ্ন :
সার্ভিসেস কোটার ‘বলি’ হিসেবে ক্লাব না পাওয়ায় লিগ খেলতে পারেননি জাতীয় দলের নিয়মিত গোলরক্ষক অসীম গোপ। এতে জাতীয় দল সমস্যায় পড়বে না?
গোবিনাথান: দেখুন, কে খেলেছে কে খেলেনি, জাতীয় দলে আমি এগুলো দেখব না। আমার এখানে এসে যে সেরা পারফরম্যান্স করবে, আমি তাকেই খেলাব। আমি আইসক্রিম বিক্রেতা নই যে সবাইকে খুশি করব। অসীম আমার কাছে আগে প্রথম পছন্দ ছিল বলেই যে এখনো প্রথম থাকবে, তা কিন্তু নয়। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ২০১৫ সালে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন। এখনো কি তাই? একজন কোচের কাছে সবশেষ পারফরম্যান্স-ই শেষ কথা।
প্রশ্ন :
স্বাগতিক হিসেবে প্রথমবারের মতো এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে প্রত্যাশা কী?
গোবিনাথান: বাংলাদেশ সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে। অর্থাৎ তিন বছরেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে আছি আমরা। এবার প্রতিপক্ষের দিকে তাকান। সবশেষ টোকিও অলিম্পিকে তৃতীয় হয়েছে ভারত। জাপানও খেলেছে দুর্দান্ত। এই টুর্নামেন্টের জন্য ইউরোপে অনুশীলন করছে মালয়েশিয়া। নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। সবার প্রস্তুতি শেষ আর আমাদের প্রস্তুতি হবে শুরু। তাও আবার আমি মাত্র পাব দুই সপ্তাহ। আমার লক্ষ্য ভালো খেলা।
প্রশ্ন :
লিগে আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, ভারতের বেশ কয়েকজন বড় মাপের খেলোয়াড়েরা খেলছেন। জাতীয় দলের উপকৃত হওয়ার সুযোগ আছে?
গোবিনাথান: অবশ্যই। মোহামেডানে গঞ্জালো পেইলাত, হোয়াকিম মেনিনি ও সুনীল আছেন। আবাহনীতে আছেন নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের খেলোয়াড়। মেরিনার্সেও আছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের জন্য শুধু লিগের মানই বাড়েনি, তাঁদের কাছে থেকে আমাদের খেলোয়াড়েরাও অনেক কিছু শিখতে পারবে। পেইলাত বিশ্বের অন্যতম সেরা পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ। তিনি কীভাবে ড্রাগ-ফ্লিক মারেন, সেটি তরুণেরা দেখবে। তাঁরা কীভাবে বল রিসিভ করে পাস দেন, সেগুলো দেখে শিখবে। জাতীয় দলের উপকারটা হলো খেলোয়াড়েরা ভালো খেলোয়াড়দের সঙ্গে ও বিপক্ষে খেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মেজাজে থাকবে।
প্রশ্ন :
২৭ নভেম্বর শেষ হবে প্রিমিয়ার লিগ। এর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীনতা কাপ। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় মাসের মধ্যে বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরা ম্যাচ খেলবেন ২০টি করে। এটা তো খেলোয়াড়দের জন্য বড় ধকল!
গোবিনাথান: অবশ্যই খেলোয়াড়দের জন্য এটা অনেক ধকলের কাজ। সত্যি কথা বলতে, অনুশীলনের বড় একটা অংশজুড়েই রাখতে হবে খেলোয়াড়দের ক্লান্তি দূর করা। প্রতিপক্ষরা অনেক শক্তিশালী। আমি সেই খেলোয়াড়দেরই নিতে চাই, যারা মাঠে পরিশ্রম করতে পারবে। দৌড়, দৌড় ও দৌড়াতে পারবে। প্রতিপক্ষকে ঠেকানোই হবে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন :
বিকেএসপির হকি নিয়ে কিছু বলুন। শুধু বিকেএসপি দিয়ে দেশের হকির উন্নয়ন সম্ভব?
গোবিনাথান: বর্তমান ছাত্রদের মধ্যে থেকে ৩০ জন বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলছে। প্রতিষ্ঠানের মূল দলে জ্যেষ্ঠ ছাত্ররা যেন আরামে খেলতে না পারে, সে প্রতিযোগিতা তৈরি করেছি। একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রের থেকে যদি নবম শ্রেণিতে কেউ ভালো থাকে, সে-ই দলে সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের হকিতে বিকেএসপির খেলোয়াড়েরাই সব। হকির উন্নয়নে শিক্ষা ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিতে পারে ফেডারেশন। একজন পরিকল্পনা দেবে, একজন দেবে অর্থ ও আরেকজন সরবরাহ করবে খেলোয়াড়। স্কুল পর্যায়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারলেই ভালো একটা জায়গায় যাওয়া সম্ভব। এবার লিগের জন্য প্রধানমন্ত্রী এক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। শুনেছি উনি খুব ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। এই দেশের হকির তো পিছিয়ে থাকার কথা নয়।