ধারাভাষ্যের ব্যস্ততা তো ছিলই। মধ্যাহ্নবিরতি, চা–বিরতি ও দিনের খেলা শেষে সনি টিভির ক্রিকেট বিশ্লেষণী অনুষ্ঠানও করতে হচ্ছে ব্র্যাড হগকে। এর ফাঁকেই কিছু সময় বের করে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন সাবেক এই অস্ট্রেলীয় স্পিনার। এল টি-টোয়েন্টির আধিপত্য, টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ও প্রায়ত সতীর্থ শেন ওয়ার্নের প্রসঙ্গও।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ শুরু থেকেই কাভার করছেন। কেমন লাগছে?
ব্র্যাড হগ: দারুণ। এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত ক্রিকেটই দেখেছি। বিশেষ করে বাংলাদেশ ভালো করেছে। প্রতিদিন তো ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারানো সম্ভব নয়। ওয়ানডে সিরিজের এই ফলটা বাংলাদেশকে নিশ্চয়ই গর্বিত করবে। বিশেষ করে ওই দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ খুব ভালো অবস্থানে ছিল না।
প্রশ্ন :
মেহেদী হাসান মিরাজকে কেমন দেখলেন?
হগ: এককথায় অসাধারণ। এমন একজন ক্রিকেটার দলে থাকা খুব জরুরি। সে নিচে ব্যাট করছে। সঙ্গে দলের অন্যতম সেরা স্পিনারও। আমি তাঁকে এই দায়িত্বেই খেলাব। সে যেন ভবিষ্যতে আরও বড় লোয়ার অর্ডার অলরাউন্ডারে পরিণত হতে পারে। এমন পারফরম্যান্সের পর খুব সহজেই তাঁকে ওপরের দিকে নামিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু চাপের মুখে পারফর্ম করতে পারা ক্রিকেটারদের ওই জায়গায় থাকা জরুরি।
প্রশ্ন :
পেস বোলিং বিভাগে বাংলাদেশের উন্নতি নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে…
হগ: বাংলাদেশের পেস বোলিং প্রতিভা আমাকে রোমাঞ্চিত করছে। তাসকিন বিশ্বকাপে দারুণ খেলেছে। খালেদ, ইবাদত আছে। হাসান মাহমুদকেও ভালো লেগেছে। ভেবেছিলাম সে টেস্ট সিরিজে খেলবে। সে স্কিডি, সুইংও করাতে পারে। শুনেছি ব্যাকআপেও আরও কয়েকজন পেসার আছে। বাংলাদেশ যখন খেলা শুরু করে, তখন দৃশ্যটা এমন ছিল না। পেসারদের এমন সামর্থ্য দেখলেও ভালো লাগে।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশ ক্রিকেট কাভার করছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। কোন জায়গাটায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি দরকার বলে মনে করেন?
হগ: টেস্ট ক্রিকেটের কথাই বলব। ঘরের মাঠ বাংলাদেশের জন্য দুর্গ। আমি মনে করি বাংলাদেশের এই দুর্গে নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। এখন বাংলাদেশকে কিছু অঘটন ঘটাতে হবে দেশের বাইরের কন্ডিশনে। নিউজিল্যান্ডে সেটা তাঁরা করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। এখন দরকার ধারাবাহিকতার। বাংলাদেশ যদি টেস্ট দল হিসেবে শীর্ষে উঠতে চায়, তাহলে পরের ধাপ এটাই।
একসময় অস্ট্রেলিয়া ওভার প্রতি ৪ করে রান নিয়ে টেস্ট খেলাটাতে নতুনমাত্রা যোগ করেছিল। এখন ইংল্যান্ড সেটাকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে। এটা দিন শেষে ক্রিকেটের জন্য ভালোই। আপনি খেলাটা থেকে চোখ সরাতে পারবেন না।
প্রশ্ন :
অন্য এশীয় দেশগুলোও টেস্ট খেলায় উন্নতিটা হয়েছে এভাবেই…
হগ: ঠিক তাই। এটা সবার জন্যই সত্যি। তবে টি-টোয়েন্টির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এখন সব জায়গায় টি-টোয়েন্টি লিগ হচ্ছে। আপনি সেটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, সেটাও বুঝতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের চিন্তা করতে হবে খেলাটা ১০ বছর পর কোন অবস্থায় থাকবে। বোর্ড, আইসিসিকে খেলাটার ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। রাজনীতিবিদদের মতো চিন্তা করলে হবে না। রাজনীতিবিদেরা যেমন ভোটের জন্য ক্ষমতায় থাকা সময়টা নিয়েই ভাবে। ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সে চিন্তা থেকে বেরিয়ে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন :
সম্প্রতি ইংল্যান্ড টেস্ট দলের খেলা দেখেছেন নিশ্চয়ই…
হগ: হ্যাঁ, টেস্ট ক্রিকেটটাকে তারা অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। দেখতে হবে এভাবে তারা টানা খেলে যেতে পারে কি না। মুলতানে অবশ্য ইংল্যান্ডকে চাপের মুখে মানিয়ে নিতে দেখেছি। এটা যে শুধুই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট, তা কিন্তু নয়। তবে বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেট বলতেই হয়। একসময় অস্ট্রেলিয়া ওভার প্রতি ৪ করে রান নিয়ে টেস্ট খেলাটাতে নতুনমাত্রা যোগ করেছিল। এখন ইংল্যান্ড সেটাকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে। এটা দিন শেষে ক্রিকেটের জন্য ভালোই। আপনি খেলাটা থেকে চোখ সরাতে পারবেন না।
প্রশ্ন :
শেন ওয়ার্নকে মিস করেন?
হগ: সব সময়। ওয়ার্নি ক্রিকেটকে কত স্মৃতি উপহার দিয়েছে, সেটার হিসেব নেই। ক্রিকেটটাকেই সে বদলে দিয়েছে। লেগ স্পিন তো বটেই, তাঁর ব্যক্তিত্ব, মানসিকতা—এসবই তাঁকে সব সময় স্মরণীয় করে রাখবে। ওয়ার্নের মতো চরিত্র ক্রিকেটে খুব দরকার।
প্রশ্ন :
আপনার মতো বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার খুব কম দেখি। এটার কোনো বিশেষ কারণ?
হগ: একসময় ক্রিকেটে লেগ স্পিনারও ছিল না। এখন তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই লেগ স্পিন। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের সংখ্যাও দেখবেন ভবিষ্যতে বাড়তে থাকবে। অপেক্ষা করুন (হাসি)।