বাংলাদেশ নারী দলের কোচ হিসেবে আপনি আর থাকছেন না বলেছেন। কোনো ক্ষোভ বা হতাশা থেকে এমন সিদ্ধান্ত? তাহলে এরপর কী?
বাটলার: আমি জানি না। মেয়েদের দলের কোচ হিসেবে বাফুফের সঙ্গে আমার কোনো চুক্তি নেই। বাফুফের এলিট একাডেমির কোচ হিসেবে আমি বাংলাদেশে আসি। কিন্তু জনাব সালাহউদ্দিন (বাফুফের সাবেক সভাপতি) এবং মিস কিরণের (বাফুফের সদস্য) আগ্রহে নারী দলের দায়িত্ব নিই। তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সাফ জিততে নিজের সেরাটা দেব এবং দিয়েছি। বাফুফের সঙ্গে আমার এক বছরের চুক্তি আগামী মাসে শেষ।
বাফুফে চুক্তি বাড়ালে আপনি থাকবেন?
বাটলার: এখনই বলতে পারব না। বাফুফেতে নতুন কমিটি এসেছে। তারা কী চায়, জানি না। দেখা যাক। তবে নারী দলের সঙ্গে আর কাজ করার ইচ্ছা নেই আমার। নারী দলের কোচ হিসেবে বাফুফে থেকে আমার জন্য বেতনের বাইরে বাড়তি কোনো আর্থিক প্রণোদনাও ছিল না। খোলামনে ভালোবেসে কাজটা করেছি।
আপনি ঢাকায় ফিরেই ইংল্যান্ড যাচ্ছেন? ফিরবেন কবে?
পিটার বাটলার: এটাও জানি না। আজ রাতে (গতকাল রাতে) আমার ইংল্যান্ড যাওয়ার কথা। সম্প্রতি আমি দাদা হয়েছি। ছেলের ঘরের নাতনিকে এখনো দেখা হয়নি। ওকে দেখতে উদ্গ্রীব হয়ে আছি।
ভুটানের বিপক্ষে সেমির আগে আপনি বলেছেন, নারী দলের সাবেক কোচ (গোলাম রব্বানী) নাকি মেয়েদের বাইরে থেকে প্ররোচিত করছেন। মারাত্মক অভিযোগ। সাফ জেতার পরও কি নিজের বক্তব্যে অটল থাকবেন?
বাটলার: অবশ্যই। কিছু মানুষ বাইরে থেকে দলকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, মেয়েদের উসকানি দিয়েছে। এটা ঠিক নয়। আমি নাম বলব না। কারা, সেটা আপনারা জানেন।
আমার কাছে সবাই সমান। আমি কোনো স্বজনপ্রীতি করিনি। বরং সবাইকে আমি সম্মান করি, আবার সম্মান আশাও করি। আমি আমার জায়গায় সৎ ছিলাম।
সেমির আগে গোলাম রব্বানী আপনার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আপনি সঠিকভাবে দল চালাতে পারেননি। পাকিস্তান ম্যাচে দুজন সিনিয়রকে একাদশে নেননি। ম্যাচটা কোনোমতে ড্রর পর মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা আপনাকে আক্রমণ করে বলেছেন, আপনি নাকি সিনিয়রদের পছন্দ করেন না।
বাটলার: এগুলো খুবই বাজে কথা। কেউ বলে থাকলে সেই দায়িত্ব তার। হয়তো দলের মধ্যে নিজের অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই বলতে পারে। আমার কাছে সবাই সমান। আমি কোনো স্বজনপ্রীতি করিনি। বরং সবাইকে আমি সম্মান করি, আবার সম্মান আশাও করি। আমি আমার জায়গায় সৎ ছিলাম। তবে এটা ঠিক, এসব কথাবার্তা আমাকে ভীষণ আহত করেছে।
খেলোয়াড়-কোচের কখনো বন্ধুত্ব হওয়া উচিত নয়। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন কি ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেভাবে মিশেছেন? বা জোসে মরিনিও? আমি বলব, না।
আগের কোচ গোলাম রব্বানীকে খেলোয়াড়েরা নাকি অনেক মিস করেন। সেটা তাঁরা প্রকাশ্যেই বলেন। অন্যদিকে আপনাকে দল থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন লাগে। কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরেও সেটার আঁচ পাওয়া যায়। এটা কেন?
বাটলার: দেখুন, খেলোয়াড়-কোচের কখনো বন্ধুত্ব হওয়া উচিত নয়। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন কি ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেভাবে মিশেছেন? বা জোসে মরিনিও? আমি বলব, না। খেলোয়াড়-কোচের বন্ধুত্ব হবে কেন? কিন্তু এটা ব্যতিক্রম যে বাংলাদেশের ফুটবলে কোচ-খেলোয়াড়ে অনেক বন্ধুত্ব, যেটা আমি করতে পারব না। আমি খেলোয়াড়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে লাঞ্চ বা ডিনারে যেতে পারি না।
ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জেতার পর খেলোয়াড়দের কেউ কেউ বলেছেন, ভারত ম্যাচের আগে কয়েকজন আপনাকে সিনিয়রদের খেলাতে জোরাজুরি করেছেন। আপনি নাকি বলেছিলেন, ঠিক আছে, সিনিয়ররা খেলো এবং জিতে দেখাও। এ নিয়ে কী বলবেন?
বাটলার: এটা এক লাখবার মিথ্যা কথা। কেউ আমার কাছে আসেনি আর কাকে খেলাব, সেটা জিজ্ঞেস করার সাহস তারা পাবে কীভাবে? যা করেছি, নিজের সিদ্ধান্তেই করেছি আমি। পেশাদার পদ্ধতিতে করেছি। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সামর্থ্যকে প্রাধান্য দিই। তথ্য পরিসংখ্যান দেখি, খেলোয়াড়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে দল নির্বাচন করি না। আমার কোনো ব্যক্তিগত পছন্দও ছিল না।
কারও কারও মুখে শোনা যায়, বসুন্ধরা কিংসের মাঠে অনুশীলনপর্বে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সঙ্গে আপনার ঝামেলা বাধে। কেমন যেন আপনাদের মধ্যে একটু দূরত্ব দেখা গেছে টুর্নামেন্টজুড়ে।
বাটলার: এটা আমি জানি না। আমি পেশাদার কোচ, ওয়েস্ট হামের মতো ক্লাবে খেলেছি। আমি চলি আমার নীতিতে। কেউ আমাকে পছন্দ না করলে আমার কিছু যায়–আসে না।
অনেক বিতর্ক শেষে দলকে আপনি সাফল্য দিয়েছেন। শেষ হাসি আপনারই। কতটা কঠিন ছিল এই যাত্রাটা?
বাটলার: অনেক কঠিন। দেখেছেন নিশ্চয়ই, ফাইনালে আমরা কত বড় বাধা পেরিয়েছি। ফাইনালে আমি কোনো খেলোয়াড় বদল করতে চাইছিলাম না, এটা অনেক বড় ট্যাকটিক্যাল দিক ছিল। সাবিনা একটু চোট পাওয়ায় ওকে শুধু তুলে নিই শেষ দিকে। আমি খুশি যে দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পেরেছি। এই তৃপ্তি নিয়েই বাড়ি যাচ্ছি।