সাক্ষাৎকারে তপু বর্মণ
‘নাম্বার নাইন ছাড়া দুটি ম্যাচে ছয় গোল করা বিরাট ব্যাপার’
বাংলাদেশ ফুটবল দলে এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ গোলদাতা কে? কুইজের প্রশ্ন হতে পারে। উত্তর—তপু বর্মণ। সেন্টারব্যাকে খেললেও জাতীয় দলে তাঁর গোলসংখ্যা ৬; সাফেই ৪। চলমান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গোল না পেলেও গোলে সহায়তা করেছেন। ১৪ বছর পর বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরের সেমিফাইনালে তুলে আনতে রেখেছেন অবদান। শনিবার কুয়েতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে কেমন করবে বাংলাদেশ? পারবে কি ফাইনালে যেতে? বেঙ্গালুরু থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ডিফেন্ডার কথা বললেন বাংলাদেশ দলের বদলে যাওয়া নিয়েও।
কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াইটা কেমন হতে পারে?
তপু বর্মণ: ভারতের সঙ্গে কুয়েতের শেষ গ্রুপ ম্যাচটা আমরা সবাই দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এবারের সাফে ৮ দলের মধ্যে কুয়েতই সবচেয়ে শক্তিশালী। সুনীল ছেত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এবারের সাফে কোন দেশ এগিয়ে। সে-ও বলেছে, কুয়েত। এক গোলে পিছিয়ে পড়ে ওরা ভারতের সঙ্গে ড্র করেছে। শারীরিকভাবে কুয়েত অনেক শক্তিশালী, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও ভালো। দ্রুত ওপরে উঠতে পারে, দলটার মধ্যে ভালো বোঝাপড়াও দেখেছি। আমাদের জন্য কুয়েত বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ। আমাদের সামনে কঠিন একটা ম্যাচ।
কিন্তু আজই প্রকাশিত সর্বশেষ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে লেবানন ১০২, কুয়েত ১৪১। তাহলে র্যাঙ্কিংয়ের গুরুত্ব নেই?
তপু: কুয়েত মাঝখানে একাধিকবার নিষিদ্ধ ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে। যে কারণে ওরা র্যাঙ্কিংয়ে একটু পিছিয়ে। তবে আমি বলব, লেবাননের চেয়ে কুয়েত অনেক ভালো দল।
লেবানন আর কুয়েতের মধ্যে পার্থক্য কী?
তপু: সাফের আগে লেবানন দল ভারতেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ৪টি ম্যাচ খেলেছে। ফলে তারা অনেকটা ক্লান্ত থেকে সাফ শুরু করে। কিন্তু কুয়েত দলটাকে শুরু থেকে সতেজ লেগেছে। সাফে তিনটা ম্যাচ খেলে ওরাও হয়তো এখন একটু ক্লান্ত। তবে সেটা অত বড় কিছু নয়। কুয়েত টানা ৮টি ম্যাচ অপরাজিত। ওদের খেলা আমার কাছে একটু আলাদা লেগেছে।
এই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচেই ভালো খেলেছে। সেমিফাইনালে কুয়েতের বিপক্ষে অঘটনের চিন্তা আছে দলের ভেতর?
তপু: আমরা কিছু একটা করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই কুয়েতের বিপক্ষে নামব। আমরা জানি কুয়েত কতটা এগিয়ে। এই ম্যাচে আমাদের স্নায়ুর পরীক্ষা হবে। ওটাই আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নকআউট খেলায় যেকোনো কিছু হতে পারে। আমরা নিজেদের সেরাটা দেব। সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, যদিও তিনটা ম্যাচ খেলে আমরাও কিছুটা ক্লান্ত।
চেষ্টা তো থাকবে ফাইনালে ওঠার, নাকি?
তপু: কী বলেন ভাই, থাকবে মানে! অবশ্যই থাকবে। এক শ ভাগ চেষ্টা থাকবে। বাকিটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা।
অনেক কঠিন জেনেও যদি প্রশ্ন করি, চ্যাম্পিয়ন হওয়া কি সম্ভব?
তপু: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে আমাদের। কিন্তু আগে সেমিফাইনাল পার হতে হবে। তারপর ফাইনাল। আমাদের আসলে ম্যাচ বাই ম্যাচ টার্গেট করা উচিত। ভালো দিক হলো, সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময় আছে, টাইব্রেকার আছে। যারা ম্যাচে সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে, তাদের জন্য ম্যাচটা সহজ হয়ে যাবে। সেমিফাইনালটা আমাদের জন্য হবে আরেকটা ফাইনাল। ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে আমরা মাঠে নামব। দেখা যাক কী হয়।
বাংলাদেশ দল নিয়ে অন্যরা কী বলছে বেঙ্গালুরুতে?
তপু: অন্যরা তো ভালোই বলছে। আমাদের খেলার প্রশংসা করছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, লেবাননের সঙ্গে লড়াকু ম্যাচ খেলব। ওদের বিপক্ষে ৭৭-৭৮ মিনিট পর্যন্ত কোনো গোল খাইনি। শেষ দিকে দুই গোল খেয়ে ম্যাচটা হারলেও সাফে যে আমরা হুমকি হব, সেটা সেদিনই বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক ছিল।
দেখুন, সাফে কিন্তু এখন আমাদের আন্ডারডগ ধরে। আমরা ওইভাবেই দেশ থেকে রওনা হই বেঙ্গালুরুতে। তবে আমরা ঠিক করি, আমাদের কিছু করতে হবে। মালদ্বীপের সঙ্গে আমরা ভালোভাবে কামব্যাক করেছি, ভুটানের সঙ্গেও তা–ই। এটা সম্ভব হয়েছে টিম স্পিরিট ও ঐক্যবদ্ধভাবে খেলতে পারায়। আশা করি সামনে আরও ভালো করব, দেশের জন্য কিছু করব।
তরুণ ফুটবলার শেখ মোরছালিনকে কেমন দেখলেন?
তপু: মোরছালিন অসাধারণ। ও আর হৃদয় দুজন দলের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মোরছালিন। ও গোল করছে, গোল করাচ্ছে...ও দলের জন্য সম্পদ। মোরছালিন অনেক ভালো একটা ছেলে। ফুটবল খেলে ভালো কিছু করতে চায়। এটা দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেখুন, আমরা দুই ম্যাচে ৩টি করে গোল করেছি। এটা কিন্তু বিশাল ব্যাপার। সেটা সম্ভব হয়েছে মোরছালিনরা ভালো খেলায়।
বাংলাদেশ দল গত দুটি ম্যাচ নাম্বার নাইন ছাড়াই খেলেছে। এভাবে আসলে কত দিন জেতা সম্ভব?
তপু: গত দুই ম্যাচ আমরা নাম্বার নাইন ছাড়াই খেলেছি দুটি উইং ফরোয়ার্ড নিয়ে। আমরা এই ছকে সফল হয়েছি। ছকটা আমরা না বুঝলে পারতাম না। দলের জন্য এটা অনেক ভালো। নাম্বার নাইন ছাড়া দুটি ম্যাচে ছয় গোল করা বিরাট ব্যাপার, সাহসী ব্যাপারও। মাঝে মাঝে এমন পরিকল্পনা করা উচিত, যাতে সফল হওয়া যায়।
আপনি গত মালদ্বীপ সাফে গোল পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। তার আগে ঢাকা সাফে পাকিস্তান ও ভুটানের সঙ্গে। সাফে আপনার গোল মোট চারটি। এবার এখনো কোনো গোল নেই...
তপু: (হাসি) এবার এখনো গোল তো করতে পারছি না, দুর্ভাগ্য। মালদ্বীপ ম্যাচে গোল পেতে পারতাম। তবে গোল করিয়েছি। আসলে দেশের জয়ে অবদান রাখতে পারলে ভালো লাগে। সেমিফাইনালে চেষ্টা করব গোল করার।
আপনি অনেক কোচের অধীনে খেলেছেন। হাভিয়ের কাবরেরা আলাদা কোথায়?
তপু: লেবাননের সঙ্গে আমরা অন্য ধরনের ফুটবল খেলেছি। ডিফেন্স জোনে ব্লক রেখে, মিডফিল্ডেও ব্লক ছিল। মালদ্বীপের সঙ্গে আমরা উইং অ্যাটাকে গিয়েছি। কাবরেরার এই কৌশলগুলো একটু আলাদা। আমাদের মানের দলের সঙ্গে কীভাবে খেলব, আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গে খেলার ধরন কী হবে, মাঠে নামার আগে যদি রপ্ত করতে পারি তাহলে ভালো। কাবরেরা সেভাবেই অনুশীলন করান। এ জন্যই কাবরেরাকে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি।
মাঠের বাইরে এই কোচ কেমন?
তপু: সবার সঙ্গে কথা বলেন। নতুনেরা অনেক সময় কোচকে ভয় পায়, কোচের সামনে যায় না। কাবরেরার বেলায় সেটা হয় না। যখন আপনি খেলোয়াড়দের ভালোভাবে বোঝাতে পারবেন, আপন করে নিতে পারবেন; তখন মাঠে ভালো করার সম্ভাবনা থাকে।
শেষ প্রশ্ন। কুয়েতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ফুটবল অনুরাগীদের জন্য কী বার্তা আপনার?
তপু: ফুটবল অনুরাগীরা এখন হয়তো আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে। আমাদের নিয়ে তারা এখন ইতিবাচক। আমরা যেন সেমিফাইনালে দারুণ কিছু করতে পারি, এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে ঈদ মোবারক।