এশিয়ার ১০ দলের মধ্যে পঞ্চম হবেন, ভেবেছিলেন?
মওদুদুর রহমান: আমার তো আশা ছিল সেমিফাইনালে খেলা। ছেলেরা যা খেলেছে, সেমিফাইনালে যাওয়া অসম্ভব ছিল না। পরিপক্বতার অভাবে সেটা হয়নি। তবে পঞ্চম হওয়াও বড় সাফল্য।
বাংলাদেশ এত বছর কোনো পর্যায়েই হকির বিশ্বকাপে উঠতে পারেনি। এবার পারার রহস্যটা কী?
মওদুদুর: ছেলেরা প্রচণ্ড পরিশ্রম আর লড়াই করেছে। ওদের বিশ্বাস ছিল, পারবে। তা ছাড়া ১৮ জন খেলোয়াড়ই বিকেএসপির ছাত্র। বর্তমানের ৪ জন, প্রাক্তন ১৪ জন। সবাই প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে, স্কিল ভালো। দরকার ছিল পারফরম্যান্সটা একসুতায় গাঁথা। আমার বিশ্বাস, এই ছেলেদের ধরে রাখতে পারলে একদিন ওরা বাংলাদেশকে মূল বিশ্বকাপেও নিয়ে যাবে।
আপনি বিকেএসপির কোচ। এতে কি বাড়তি সুবিধা হয়েছে?
মওদুদুর: অবশ্যই। বিকেএসপির কোচ হওয়ায় ছেলেদের সবাইকে আমি ছোট থেকে চিনি। সেটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। তা ছাড়া অন্যবারের চেয়ে এবার প্রস্তুতির সময়টা বেশি পেয়েছি। টুর্নামেন্টের আড়াই মাস আগে বিকেএসপিতে ক্যাম্প শুরু করার সুযোগ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমানবাহিনীর প্রধান মহোদয়। তাঁকে ধন্যবাদ। ৫ আগস্ট সরকার বদলের পর ফেডারেশনে ছন্নছাড়া অবস্থা ছিল। এর মধ্যেই স্যার টিমটাকে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিকেএসপির সব সুযোগ–সুবিধা তিনি নিশ্চিত করেছেন। ছেলেরা কেমন খেলছে না খেলছে, প্রতিনিয়ত খোঁজ নিয়েছেন।
চীন বড় বাধা ছিল বাংলাদেশের সামনে। এই বাধা পেরাতে কোচ হিসেবে আপনার টনিক কী ছিল?
মওদুদুর: আমি ছেলেদের বলেছি, মাঠে শতভাগ চাই। ওরা তা দিয়েছে। টুর্নামেন্টে ওমান, চীনা তাইপে আর থাইল্যান্ড ছাড়া অন্যরা ছিল শক্তিশালী। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমরা জেতার মতো খেলে ২-২ ড্র করেছি। ছেলেদের বলেছি, কোনো রকম গা ছাড়া নয়। ওরা জানপ্রাণ দিয়ে খেলেছে। ওদের জন্য সত্যি আমি গর্বিত।
মাসকাটে বাংলাদেশ দল নিয়ে অন্যরা কী বলল?
মওদুদুর: অন্য দলের কোচরা আমাকে বলেছেন, এই দলটা খুবই ভালো। দলটাকে হাতছড়া কোরো না, একসঙ্গে রাখো। বিশ্বকাপেও ভালো করবে ওরা। আমি বলেছি, আমাদের দেশে ঘরোয়া খেলা নেই, প্র্যাকটিস নেই। তারপরও নিজেরা নিজেরা খেলেই যে ছেলেরা এত দূর এসেছে, এটা বিশাল ব্যাপার।
আগামী বছরের ডিসেম্বরে যুব বিশ্বকাপ হতে পারে। এক বছর সময় আছে। বিশ্বকাপে ভালো করতে আপনি কী চান?
মওদুদুর: আমি চাই, ছেলেদের পেছনে যেন সবাই থাকে, স্পনসর আসে। ওরা আর্থিকভাবে কিছু পায়। ক্যাম্পে এখন ওরা দৈনিক ৪০০ টাকা ভাতা পায়। এটা বাড়াতে হবে। ভালো ফল করলে অন্য খেলার খেলোয়াড়েরা পুরস্কার পায়। হকির এই ছেলেরা পাবে না কেন? আর আমি চাই বিশ্বকাপের জন্য ভালো প্রস্তুতি।
সেটা কেমন?
মওদুদুর: বিশ্বকাপে ইউরোপ, লাতিন, ওশেনিয়া, প্যান আমেরিকা থেকে দল আসবে। এসব দলের সঙ্গেও ম্যাচ খেলতে হবে। প্রস্তুতি পর্বে ম্যাচ যত খেলবে, তত পরিপক্ব হবে ছেলেরা। এই টুর্নামেন্টে আমরা ছয় ম্যাচে মাত্র একটিতে হেরেছি। তিনটি জয়, দুটি ড্র। তার মানে ছেলেদের মধ্যে জয়ের মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এখন শুধু ওদের সমর্থনটা দরকার।