টেনিস

‘দল নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনাও একটা সংস্কার’

ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন অ্যাডহক কমিটি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে ৯টি ফেডারেশনের নতুন কমিটি। এই কমিটি কী সংস্কার করবে, কেন করবে—এসব জানতেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের এই ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার। আজ পঞ্চম দিনে প্রথম আলোর মুখোমুখি টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ  

প্রশ্ন:

টেনিসের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন আপনি। বুয়েটে টেনিস-ব্লু। বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক, ২০০৯ থেকে তিন বছর অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। টেনিস ফেডারেশনে আবার ফিরবেন আশা ছিল?

ইশতিয়াক আহমেদ: সেভাবে ছিল না। তবে মাঝের সময়টা উত্তরা ক্লাবের টেনিস কমিটিতে ছিলাম। ক্লাবটির হয়ে কাজ করেছি টেনিসে।

প্রশ্ন:

দেশের টেনিস নিয়ে এখন আবার কাজ করবেন। কোনো পরিকল্পনা কি করেছেন?

ইশতিয়াক আহমেদ: করেছি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার আগের মেয়াদে ডেভিস কাপে বাংলাদেশ গ্রুপ চারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তিনে আসে। অবনমিত হয়ে এখন গ্রুপ পাঁচে। আবার অন্তত গ্রুপে চারে যাওয়ার চেষ্টা থাকবে। আমার সময় অনেক টুর্নামেন্ট হতো, বিশেষ করে প্রাইজমানি টুর্নামেন্ট। শীর্ষ খেলোয়াড়েরা বছর শেষে ভালো অঙ্ক পেত প্রাইজমানি থেকে, খেলোয়াড়দের টেনিসে আকৃষ্ট করতে যেটা খুব দরকার। তেমন কিছু আবার করার ইচ্ছা আছে। তবে মূল লক্ষ্য থাকবে জাতীয় ও বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের মানোন্নয়ন।

প্রশ্ন:

নতুন খেলোয়াড় না এলে মানোন্নয়ন কীভাবে হবে! খেলাটাও ব্যয়বহুল। খেলোয়াড় বাড়াতে ‘জুনিয়র টেনিস ইনেশিয়েটিভ’ নামের কর্মসূচিটি আরও জোরালো করবেন?

ইশতিয়াক আহমেদ: আইটিএফের কর্মসূচি এটি। ঢাকায় চলছে, তবে ঢাকার বাইরে তেমন কার্যকর নয়। আমার বাড়ি নওগাঁয়, সেখানে তিনটি কোর্ট আছে। এভাবে নওগাঁ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, চট্টগ্রাম...কিছু জেলা নির্বাচন করে কর্মসূচিটি চালু করে এর সুফল নিতে পারি আমরা।

প্রশ্ন:

দেশে নিবন্ধিত টেনিস ক্লাব ৮৪টি। সব জেলাতেই সরকারিভাবে একটি করে টেনিস কোর্ট আছে। সেগুলো শিশু-কিশোরদের অনুশীনের জন্য খোলা রাখতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটা নির্দেশনাও আছে। কিন্তু জেলায় টেনিস কার্যক্রম তেমন নেই বলে বেশির ভাগই বন্ধ থাকে।

ইশতিয়াক আহমেদ: জেলার কোর্টগুলোয় জুনিয়রদের জন্য কর্মসূচি থাকে না, অনেক জায়গায় জুনিয়ররা কোর্টে ঢুকতেও পারে না। জেলার কোর্টগুলো ব্যবহারের উদ্যোগ নেব। সব জেলায় হয়তো এটা সম্ভব হবে না।  

বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ
সংগৃহীত
প্রশ্ন:

টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হচ্ছে না। একটা খেলার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ না হওয়া অগ্রহণযোগ্যই। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ করবেন আপনি?

ইশতিয়াক: আমি আগে ফেডারেশনে থাকার সময়ও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এটা বন্ধ। এবার প্রথম সভাতেই আমরা ক্যালেন্ডার করব, তাতে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপও রাখব। শুধু তাই নয়, আইটিএফের টুর্নামেন্টগুলো নিয়মিত আয়োজন করব। সাম্প্রতিক সময়ে অনূর্ধ্ব-১২, ১৪ পর্যায়ে টুর্নামেন্ট হয়েছে বেশি। সিনিয়রদের খেলা হয়নি সেভাবে। সিনিয়রদের খেলাও বাড়াব।

প্রশ্ন:

টেনিসে স্বজনপ্রীতির অনেক অভিযোগ উঠেছে গত কিছুদিনে। এটা বন্ধ হবে?  

ইশতিয়াক: অবশ্যই হবে। দল নির্বাচনে নীতিমালা প্রণয়ন আর স্বচ্ছতা আনাও হবে একটা সংস্কার। কত দিন আমাদের মেয়াদ জানি না, নির্বাচনে ফোরামের দৌরাত্ম্য কমাতে গঠনতন্ত্রে সংস্কার আনার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন:

এক দশকের বেশি অ্যাডহক কমিটি দিয়ে চালানোর পর টেনিসে একটা নির্বাচিত কমিটি ছিল। সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, তাঁর কমিটির লোকজনকে নাজেহাল করা হচ্ছে। কোষাধ্যক্ষের গায়ে নাকি হাত দেওয়া হয়েছে ফেডারেশনে ক্ষমতার পালাবদলের পর।

ইশতিয়াক: এটা আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগেই হয়েছে। এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।

প্রশ্ন:

২৪ নভেম্বর আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য গত কমিটিকে নাকি কোনো চিঠি দেননি। সেই বিভাজনই টেনিসে?

ইশতিয়াক আহমেদ: চিঠি দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। কারণ, দায়িত্ব হস্তান্তর করা আগের কমিটির দায়িত্ব। তারপরও আমরা তাদের জানিয়েছি। কিন্তু বিদায়ী কমিটির কেউ আসেনি।

প্রশ্ন:

বিদায়ী কমিটি বলছে, আপনারা নাকি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। সেই কমিটি নিজেদের সফল বলেও দাবি করছে।

ইশতিয়াক: বিদায়ী কমিটি সফল না ব্যর্থ, ডেভিস কাপে বাংলাদেশের অবস্থানই তা বলে দেয়। গত কমিটির সময় বাংলাদেশের টেনিসে যত বিতর্ক হয়েছে, অতীতে কখনো হয়নি। এনএসসির সেক্রেটারিরা যখন টেনিস ফেডারেশন চালিয়েছেন, তখনো হয়নি। কদিন আগেই বাহরাইনে ডেভিস কাপ খেলতে যাওয়ার আগেও হয়েছে দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। অভিভাবকেরা ফেডারেশনের গেটের বাইরে আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন। টেনিস ফেডারেশনে অনেককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এগুলো তো আমরা দেখেছি।