দারুণ একটি ইনিংস খেলছেন। বিপিএল নিশ্চয়ই উপভোগ করছেন...
আভিস্কা ফার্নান্ডো: বিপিএলে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এলাম। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে চতুর্থবার। সব মিলিয়ে আমার জন্য ভালো অভিজ্ঞতাই। প্রথমবার যখন এসেছিলাম, তখন প্রায় সব ম্যাচেই রান করেছি। ভালো লেগেছে এই টুর্নামেন্টের আবহ। এবারও শুরুটা ভালো হয়েছে।
এলপিএল হচ্ছে চার বছর হলো। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হিসেবে এলপিএলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ফার্নান্ডো: আমাদের ক্রিকেটের জন্য বিরাট ব্যাপার। এলপিএল ভালো করছে। আমাদের ক্রিকেটও উপকৃত হচ্ছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা খেলছে, তাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটাররাও। সঙ্গে বিদেশি ক্রিকেটার তো আছেনই। আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট এটি। প্রতি টুর্নামেন্ট শেষেই আমাদের ১০-২০ শতাংশ উন্নতি হচ্ছে।
শুনেছি, আপনার বাবা অনেকটা জোরজবরদস্তি করেই আপনাকে ক্রিকেটার বানিয়েছেন…
ফার্নান্ডো: আমি চার বছর বয়সে খেলা শুরু করি। তখন থেকেই আমার বাবা আমার ক্যারিয়ারের মূল চরিত্র। আমি এখন জাতীয় দলে খেলছি। অনেক দূর যাওয়া বাকি।
ছোটবেলায় আপনার বাবা নিশ্চয়ই আপনার নেট বোলার ছিলেন?
ফার্নান্ডো: হ্যাঁ, আমি তাঁর সঙ্গেই ক্লাবে যেতাম। ছোট মাঠে আমাদের অনুশীলন হতো। তিনি আমাকে বোলিং করতেন, আমি ব্যাটিং করতাম। আমার প্রথম কোচ তিনি। আমি স্কুল ক্রিকেট, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে জাতীয় দলে এসেছি। যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে, তখন আমার বয়স ১৬। আমার আন্তর্জাতিক অভিষেকও হয়েছে মাত্র ১৮ বছর বয়সে।
আপনার হাতে মনে হয় বাবার ট্যাটু করা...
ফার্নান্ডো: হ্যাঁ, হ্যাঁ! বাবার কোলে আমি। ছবিটি আমি ট্যাটু করিয়ে রেখেছি। গত বছরের এপ্রিলে। আর এখন সামনের মাসে আমি নিজেই বাবা হচ্ছি। অসাধারণ অনুভূতি।
এত অল্প সময়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পরও আপনার ক্যারিয়ার সেভাবে এগোয়নি। দুবার ডেঙ্গুর কারণে অনেকটা সময় খেলার বাইরে ছিলেন। সেটা নিশ্চয় বড় ধাক্কা ছিল, তাই না?
ফার্নান্ডো: ২০১৬ সালের পর আমি দুই বছর খেলার বাইরে ছিলাম। দুবার ডেঙ্গু হয়েছিল। ২০১৯ সালে আবার খেলা শুরু করি। খুবই কঠিন সময় ছিল তখন। আমি ১০-১১ মাস কোনো ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারিনি। এরপর একটু একটু করে ফিট হতে থাকি, ক্লাব ম্যাচ দিয়ে খেলার ফিরতে থাকি। ২০১৯ সালে ‘এ’ দলের একটা ম্যাচ খেলেছি। সোজা বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছি।
আমি ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলেছি। সেটা আমার জন্য বিরাট ব্যাপার ছিল। আমি সেখানে একটা সেঞ্চুরি করেছি। খুব খুশি ছিলাম। ২০২১ সালে আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলাম। আরও এক বছর গেল এভাবে। এলপিএল দিয়ে খেলায় ফিরেছি। সে বছর ফিরেছি জাতীয় দলেও।
দুবার ডেঙ্গুর কথা বলছিলেন, দুবার তো করোনার সঙ্গেও যুদ্ধ করতে হয়েছে!
ফার্নান্ডো: আসলে আমার মনে হয় সবকিছুই হয়ে গেছে। এখন মনে হয় চিকুনগুনিয়া হওয়া বাকি (হাসি)।
আপনাকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের পরবর্তী অরবিন্দ ডি সিলভা বলা হয়…
ফার্নান্ডো: সবাই যা বলাবলি করেছে, তা যেন সত্যি প্রমাণ করতে পারি। আমার রান করতে হবে। আমার মতে, আমার সামনে অনেক পথ বাকি আছে।
এলপিএল-বিপিএলের কারণে বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গে নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে?
ফার্নান্ডো: হ্যাঁ, (মেহেদী হাসান) মিরাজ, (নাজমুল হোসেন) শান্ত...ওদের সঙ্গে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছি। এখনো ভালো বন্ধুত্ব আছে। প্রায়ই কথা হয়। বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটার এলপিএল খেলতে যায়। আমরা এখানে আসি। এই কারণেও বন্ধুত্ব খুব ভালো।
মাঠের বাইরে দুই দলের খেলোয়াড়েরা বন্ধু হলেও বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হলে তো অন্য রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়…
ফার্নান্ডো: মাঠে তো আমাদের সবার একটাই লক্ষ্য, ম্যাচ জিততে হবে। এ জন্য কখনো কখনো উত্তেজনা দেখা দেয়, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তবে মাঠের উত্তেজনা মাঠেই থেকে যায়। সীমানার বাইরে আমরা সবাই ভালো বন্ধু।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ওই টাইমড আউটের পরও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে?
ফার্নান্ডো: হা হা হা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ওই দলে খেলা সবার সঙ্গে এখনো ভালো বন্ধুত্ব আছে।
ম্যাথুসকে টাইমড আউট করার বুদ্ধিটা কিন্তু নাজমুলেরই...
ফার্নান্ডো: প্রথম ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে খেললাম আমরা। সেদিনও শান্তর সঙ্গে কথা হয়েছে (হাসি)।
সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য?
ফার্নান্ডো: আমাকে প্রথম টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেতে হবে। আমি এখন ওয়ানডে দলে আছি। ম্যাচ খেলছি, রান করছি। আশা করি, বিশ্বকাপে যেতে পারব।