সাক্ষাৎকারে পিটার বাটলার

‘আমি কাউকে দলে রাখার গ্যারান্টি দিতে পারব না’

বতসোয়ানা ও লাইবেরিয়া জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করা জেমস পিটার বাটলার নব্বইয়ের দশকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন ওয়েস্টহাম ইউনাইটেডের হয়ে। বর্তমানে আছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের দায়িত্বে। নাইর ইকবালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ইংলিশ কোচ জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতির কথা—

প্রশ্ন:

চীনা তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই আপনি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের দায়িত্ব নিলেন। শুরুর অভিজ্ঞতা কেমন?

জেমস বাটলার: চীনা তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের জন্য শিক্ষণীয়। আমি সব সময়ই বলি, আমরা যত বেশি র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে খেলব, তত বেশি শিখব। উন্নতি করতে পারব। দুর্বল দলের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিতে লাভ নেই। এমন ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে কখনোই আপনি নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারবেন না। চীনা তাইপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মেয়েরা বুঝতে পেরেছে, তারা কোথায় দাঁড়িয়ে। ম্যাচটা বাজে গেছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে মেয়েরা দুর্দান্ত খেলেছে। আক্রমণ ও রক্ষণ—দুটিতেই সমান ভালো করেছে তারা। প্রেসিংও করেছে দারুণ। এমনটাই চাই আমি।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের দেখে আপনার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ কী?

বাটলার: দেখুন, আমি তো মনে করি, আন্তর্জাতিক ফুটবলে আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট যোগ্য। আমার কর্মপদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও তারা যথেষ্ট সামর্থ্য রাখে। ওরা চটপটে এবং দারুণ সৃষ্টিশীল, একই সঙ্গে প্রতিভাবান। তবে কিছু বিষয়ে আরও শাণিত হতে হবে। আমার সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে শৃঙ্খলা, পরিশ্রম ও পেশাদারত্ব জরুরি।

প্রশ্ন:

দায়িত্ব নিয়ে আপনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের নারী ফুটবলের নতুন যুগের শুরু হলো আজ। কোন বিশ্বাস থেকে কথাটা বলেছিলেন?

বাটলার: আমি সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নারী ফুটবলের নতুন যুগের শুরু হয়ে গেছে। আমি মেয়েদের মধ্যে সামর্থ্য দেখেছি। মেয়েদের লিগে বিভিন্ন ক্লাবেও আমি কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের দেখা পেয়েছি। আমাদের এখনই পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে। লক্ষ্য স্থির করতে হবে।

প্রশ্ন:

আপনি দীর্ঘ দিন আফ্রিকা মহাদেশে কাজ করেছেন। সেখানকার ফুটবলের সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবলের কী মিল খুঁজে পেলেন? কী পার্থক্যই–বা দেখলেন?

বাটলার: বতসোয়ানা ও লাইবেরিয়া—দুই জায়গাতেই আমি জাতীয় দলের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক দল নিয়েও কাজ করেছি। আফ্রিকার সংস্কৃতির সঙ্গে এশিয়ার অনেক দেশের সংস্কৃতির মিল আছে। বাংলাদেশেরও মিল দেখছি। তবে শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ও এশিয়া পিছিয়ে।

আমি কাউকে দলে রাখার গ্যারান্টি দিতে পারব না। মাসুরার চোট, মারিয়া, কৃষ্ণার চোট, সানজিদা পুরোপুরি ফিট নয়। আমি দলের সঙ্গে এমন কোনো খেলোয়াড়কে বয়ে নিয়ে বেড়াব না, যে ম্যাচের জন্য পুরোপুরি ফিট নয়। ফুটবলে কেউই অপরিহার্য নন, আমার দলে তো নয়ই।
প্রশ্ন:

আপনার ইংলিশ ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে কিছু বলুন...

বাটলার: আমি ইংলিশ ফুটবলের বিভিন্ন স্তরে পাঁচ শ–এর বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি। আমি ভাগ্যবান যে ওয়েস্টহাম, ওয়েস্টব্রম, হাডার্সফিল্ডের হয়ে খেলতে পেরেছি। হাঁটুর চোটের কারণে একটু আগেই আমাকে খেলা ছাড়তে হয়, মাত্র ৩২ বছর বয়সে। আমার হাঁটুতে ৮টা অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনাকে আপনি চীনা তাইপের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে রাখেননি, প্রথম ম্যাচেও দ্বিতীয়ার্ধে খেলাননি। সাবিনার বয়স নিয়ে একটা মন্তব্য করেছিলেন। আপনি কি দলের সিনিয়র ফুটবলারদের কোনো বার্তা দিতে চেয়েছেন?

বাটলার: সাবিনা বাংলাদেশের নারী ফুটবলের মুখ। তবে কয়েক দিন আগে একটা চোটে পড়েছে, সে কারণে তার গতি কিছুটা কমে গেছে। চীনা তাইপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সে মোটেও ভালো খেলেনি। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে সাবিনাকে জানিয়েছি, কেন ওকে একাদশে রাখছি না। আমার কথা শুনে সে মন খারাপ করেছে, করাটাই স্বাভাবিক। তবে আমি কাউকে দলে রাখার গ্যারান্টি দিতে পারব না। মাসুরার চোট, মারিয়া, কৃষ্ণার চোট, সানজিদা পুরোপুরি ফিট নয়। আমি দলের সঙ্গে এমন কোনো খেলোয়াড়কে বয়ে নিয়ে বেড়াব না, যে ম্যাচের জন্য পুরোপুরি ফিট নয়। ফুটবলে কেউই অপরিহার্য নন, আমার দলে তো নয়ই।

জেমস পিটার বাটলার
প্রশ্ন:

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে তো তাহলে আপনি নতুন একটা কর্মপদ্ধতিতে কাজ করতে যাচ্ছেন...

বাটলার: আমি মনে করি, বাংলাদেশের নারী ফুটবল প্রোগ্রামে কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা উচিত। এটা করা উচিত নারী ফুটবলের সম্ভাবনাটাকে ঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্যই। নারী ফুটবলে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে সবাই নিজেদের জায়গার জন্য জোর লড়াই করবে। কেউই নিজেকে বড় কিছু মনে করবে না।

প্রশ্ন:

সামনেই সাফ ফুটবল। বাংলাদেশের গ্রুপে ভারত ও পাকিস্তান। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে কতটা আশাবাদী?

বাটলার: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। বাংলাদেশ নারী দল সেখানে শিরোপা জিততেই যাবে। তবে এখনো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আমার ভূমিকা কী হবে, সেটি নিয়ে বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা হয়নি। তবে যে ভূমিকাই হোক, আমি বাংলাদেশ দল নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।