প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। কেমন লাগছে?
সোনিয়া আক্তার: এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই একটা ব্যাপার। অলিম্পিকে যাচ্ছি, অবশ্যই আমি সৌভাগ্যবান। বিশ্বের সেরা সাঁতারুদের সঙ্গে পুলে নামার অভিজ্ঞতা হবে। একটা রোমাঞ্চ তো কাজ করছেই। এটা আমার জন্য বিরাট পরীক্ষাও। চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু করার।
সেই ‘ভালো কিছু’টা আসলে কী?
সোনিয়া: আমার ইভেন্ট ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল। নিজের সেরা টাইমিংটা করতে চাই, এটাই লক্ষ্য। নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারলে দারুণ হবে। আগামীর রসদটা পেয়ে যাব। অলিম্পিকের পুলে নামার অভিজ্ঞতাটা যেন ভালো হয়, সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আপনার প্রস্তুতি সম্পর্কে বলুন। কীভাবে তৈরি হচ্ছেন অলিম্পিকের জন্য?
সোনিয়া: আমি মূলত অনুশীলনের ওপরই জোর দিচ্ছি। বিকেএসপিতে টানা অনুশীলন করে যাচ্ছি। সুইমিং ফেডারেশনের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছি। আমি নৌবাহিনীর একজন সাঁতারু। আমার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে তারা।
এই পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া একজন বাংলাদেশি সাঁতারুর জন্য কতটা কঠিন?
সোনিয়া: অলিম্পিক তো অনেক বড় প্রতিযোগিতা। এশিয়ান গেমসে যাঁরা পদক জেতেন, আমরা তাঁদের চেয়েও অনেক পিছিয়ে। সাঁতারে খাওয়াদাওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রযুক্তির ব্যবহারও অন্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এসবের সঙ্গে তাল মেলাতে পারাটা অনেক কঠিন। আর্থিক সামর্থ্যের বিষয় আছে। অন্য দেশের সাঁতারুরা সারা বছর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের তৈরি করেন, আমরা সেই সুযোগ খুব বেশি পাই না।
আপনার সাঁতারু হয়ে ওঠার পথটা কেমন ছিল?
সোনিয়া: ছোটবেলা থেকেই পানি আমাকে টানত। গ্রামের পুকুর বা জলায় সাঁতার কাটতে খুব ভালো লাগত। আমার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার ভূটিয়ারগাতী গ্রামে। সেখান থেকে এসে ২০১৩ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হই। এরপরই শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। বলতে পারেন, সাঁতারু হয়ে ওঠা বিকেএসপি থেকেই। এখন নৌবাহিনীর সাঁতারু হিসেবে নিজেকে আরও পরিণত করার সুযোগ পাচ্ছি।
অলিম্পিকে এখনো বাংলাদেশ অংশ নেওয়ার জন্যই নেয়। এটাকে কীভাবে দেখেন?
সোনিয়া: এটাই আসলে বাস্তবতা। পদকের লড়াই অনেক বড় ব্যাপার আমাদের কাছে। এই যে দেখুন, আমরা এখনো হ্যান্ড টাইমিংয়েই পড়ে আছি, কিন্তু অলিম্পিকে থাকবে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক টাইমিং। অলিম্পিক বা এশিয়ান গেমসের মতো বড় প্রতিযোগিতায় ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে।
১৯৯২ সালে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন কাজী শাহানা পারভীন। তাঁর সঙ্গে কখনো কথা হয়েছে আপনার?
সোনিয়া: কাজী শাহানা পারভীনের কথা আমি জানি, অলিম্পিকে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রীড়াবিদ ছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁর সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। তবে তিনিই আমাদের পথ দেখিয়েছেন। এবার একমাত্র নারী হিসেবে আমি যাচ্ছি, তবে গতবার দুজন ছিলেন। অলিম্পিকে খুব বেশি নারী ক্রীড়াবিদ বাংলাদেশ থেকে যাননি। ভবিষ্যতে সংখ্যাটা বাড়লে ভালো লাগবে।