সাক্ষাৎকারে মারুফা আক্তার
‘শেষ ওভারে নিজের ভেতর জেদ কাজ করছিল’
সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়। ঘণ্টাখানেক আগে ভারত নারী দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ নারী দলের রোমাঞ্চকর টাইয়ের উদ্যাপন তখনো থামেনি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নিগার সুলতানাদের ড্রেসিংরুমের সামনে সে আনন্দ-উল্লাসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কাল এমন সময়ই মারুফা আক্তারের সঙ্গে কথা হলো। চোখেমুখে শিশুসুলভ আনন্দ। কী করে ফেলেছেন, তা যেন উপলব্ধিতেও আসেনি।
ভারতকে সিরিজ জিততে দিলেন না। কেমন লাগছে?
মারুফা আক্তার: আলহামদুলিল্লাহ। টার্গেট ছিল ট্রফিটা যেন আমাদের কাছে আসে। যেহেতু আমাদের মাটিতে খেলা হচ্ছে, নিজেদের দেশে; আর কী বলব। যদি আমরা ফিল্ডিং আরেকটু ভালো করতাম...তবু ভালো হয়েছে।
চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। এরপর ফিরে এসে শেষ ওভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বল করলেন। তখন কী ভাবছিলেন?
মারুফা: যখন আমি বের হই, তখনই বলেছি, যা-ই হোক, আমার মাঠে যেতে হবে। আমি মাঠে যদি অসাধারণ ফিল্ডিং দেখাই বা ক্যাচ ধরে দিই, তাহলেও টিমের জন্য ভালো হবে। এটাই করেছি। আর যখন শেষে বোলিংয়ে আসছি, তখন নিজের ভেতর জেদ কাজ করছিল। তিন রান, এটা আমি পারব (ডিফেন্ড করতে)। নিজের মধ্যে বিশ্বাস রেখেছি যে আমি পারব। বিশ্বাস রেখে বোলিং করেছি।
টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ মিলিয়ে ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও আপনি। ভালো লাগছে এই অর্জনে?
মারুফা: যখন ভালো করছি, তখন সবদিক থেকেই ভালো লাগবে। নিজের বোলিংয়ের ভিডিওগুলো দেখে অনেক ভালো লাগে।
গত ছয় থেকে সাত মাসে আপনার জীবনে অনেক কিছুই বদলে গেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন। এরপর দ্রুতই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। ভালোও করছেন।
মারুফা: আজকে আমার পারফরম্যান্সের জন্য এত দূর এসেছি। আমি যদি খারাপ করতাম, তাহলে এত দূর আসতে পারতাম না। পরিশ্রমের পুরস্কার পাচ্ছি। বিসিবিও অনেক সাহায্য করছে। উইমেন্স উইংয়ের স্যাররা, তৌহিদ স্যারও আমাকে অনেক অনেক সাহায্য করেন।
আপনার অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে বলতে শুনেছি, আপনি নাকি চাপ কী জিনিস, তা জানেন না।
মারুফা: আসলে আগের জিনিসগুলো ভেবে তো লাভ নেই (হাসি)। আমি এখন যেটা করব, সেটাই তো হবে। আগের জিনিস ভেবে যদি এখন খারাপ করি, তাহলে তো হবে না। তাই চাপ নিই না।
আপনার বোলিংয়ে আসি। আপনার অ্যাথলেটিক রানআপের পেছনে কোনো গল্প আছে?
মারুফা: ছোটবেলায় তো দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই ছিলাম। অনেক ফুটবল খেলতাম গ্রামের স্কুলে। আর এমনিতেই আমি ছোটবেলা থেকে এক রকমই।
ফুটবল থেকে ক্রিকেটে এলেন কীভাবে?
মারুফা: আমার ভাই বলছে, ফুটবল খেলায় রিস্ক আছে। এ জন্য যখন একটু বড় হই, তখন থেকে ভাইয়াদের সঙ্গে আস্তে আস্তে টেপটেনিস খেলা শুরু করি। ওইখান থেকে...।
কার বোলিং ভালো লাগে?
মারুফা: মিচেল স্টার্কের বোলিংয়ের দৌড়টা অনেক ভালো। রানিংয়ের মধ্যে করে তো, ভালো লাগে।
আপনার রানআপও অনেকটা সে রকম।
মারুফা: হ্যাঁ।
ইনসুইংটা কীভাবে করান?
মারুফা: এটা সহজাতভাবেই চলে আসে। ন্যাচারাল সুইং...সুইং আমার অনেক ভালো।
কীভাবে বল ছাড়লে ইনসুইংটা হয়, তা কখনো খেয়াল করেছেন?
মারুফা: তেমন না। ন্যাচারালিই হয়ে যায়।
স্মৃতি মান্ধানা আপনার অনেক প্রশংসা করেছেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে?
মারুফা: উনি আমার সঙ্গে প্রথমে হ্যান্ডশেক করেছেন। তারপর চলে গিয়ে আবার কাছে এসেছেন, তখন বলেছেন, বেস্ট অব লাক। তুমি অনেক ভালো ফিল্ডিং করো, তোমার এনার্জি অনেক ভালো, তুমি অনেক কুইক, বোলিং অনেক ভালো। তুমি এগুলো সব ধরে রাখো, সামনে অনেক দূর যেতে পারবে।
করোনাভাইরাসের সময় নীলফামারীতে বাবার সঙ্গে আপনি কৃষিকাজ করতেন। সেখান থেকে এত দ্রুত আপনি যে পর্যায়ে এসেছেন, এটা নিয়ে আপনার পরিবার নিশ্চয়ই গর্ব করে।
মারুফা: সবাই এখন অনেক সাপোর্ট করে। আমার বাবা খেলা বুঝতেন না। কিন্তু এখন বাবাও ফোন দিলে বলেন, ‘তুই যখন বোলিং করিস, তখন পায়ে মারবি।’ উনি তো বোঝেন না, তাই বলেন, ‘বল পায়ে মারবি। কখনো একটু আস্তে বল করবি’—এগুলো বলেন, আমার অনেক ভালো লাগে (হাসি)।