সময়ের মুখ

মাকে আর কাজ করতে হয় না

মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার সেরা ব্যাটারদের একজন ছিলেন দিলারা আক্তার। লিগে তাঁর স্ট্রাইক রেট (১৩৮) ছিল স্থানীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ। করেছেন সবচেয়ে কম বলে (৫৩) শতকের রেকর্ড। অথচ তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার পথটা ছিল কঠিন। তাঁর জন্মের মাস তিনেকের মধ্যে ক্যানসারে বাবার মৃত্যু হয়। মা কখনো মানুষের বাড়িতে, কখনো ইটভাটায় কাজ করেছেন। এখন অবশ্য দিলারা ক্রিকেট খেলে দূর করেছেন সংসারের অভাব। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ জুবাইর। 

প্রথম আলো:

লিগে আপনি ৪২৮ রান করেছেন। এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ। কেমন লাগছে? 

দিলারা আক্তার: অনেক ভালো। দুই ম্যাচে দুটি শতক করেছি। সবচেয়ে কম বলে শতকের রেকর্ডও ভেঙেছি। দারুণ অনুভূতি। 

প্রথম আলো:

মাত্র ৫৩ বলে করা দ্রুততম শতকের কথাটা আপনিই বললেন। আপনি কি জানতেন মোহামেডানের জেসিয়া আক্তারের ৬৬ বলে শতকের রেকর্ড ভেঙেছেন? 

দিলারা: না, জানতাম না। আমি জেনেছি পরের দিন সংবাদমাধ্যমে। দলের সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জ্যোতি আপু (বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা) অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

দিলারার ক্রিকেটার হওয়ার পথটা সহজ ছিল না
বিসিবি
প্রথম আলো:

পরিবারের কেউ? 

দিলারা: মা খেলা তেমন বোঝেন না। আমি ভালো খেলেছি বা খারাপ খেলেছি, এটুকুই তিনি বোঝেন। সে জন্য পরিবারের ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। 

প্রথম আলো:

পরিবারে আর কে আছেন? 

দিলারা: আমার একটি ভাই ছিল। সাত-আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। বাবা মারা গেছেন আমার জন্মের দু-তিন মাস পর। 

প্রথম আলো:

আপনার মা আপনাকে খুব কষ্ট করে বড় করেছেন। ক্রিকেটে আসা কীভাবে? 

দিলারা: আমি আসলে ক্রিকেট খেলতাম না। দিনাজপুরে স্কুল পর্যায়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতাম। সাধারণভাবে ক্রিকেট, ফুটবল দুটিই খেলতাম। পরে আমার খালাতো ভাই বললেন, তুই ক্রিকেটে ভর্তি হয়ে যা। তিনিই ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন।

ক্রিকেটার হওয়ার আগে ফুটবল খেলতেন দিলারা
আইসিসি
প্রথম আলো:

কোথায়? 

দিলারা: দিনাজপুরের ‘প্রচেষ্টা’ নামের একটি ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে। 

প্রথম আলো:

সেখানে খরচ কেমন ছিল? 

দিলারা: আমার ভাগ্য ভালো। সেখানে শুধু ভর্তি হতে কিছু টাকা দিতে হতো। এর বাইরে মেয়েদের অনুশীলনের জন্য কোনো খরচ ছিল না। 

প্রথম আলো:

ভর্তি হওয়ার পর? 

দিলারা: শুরুতে তো ব্যাটিং-বোলিং কিছু পাইনি। আমি বল কুড়িয়ে দিতাম। আপুদের অনুশীলনে সাহায্য করতাম। তিন-চার বছর এভাবেই গেছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের দিকে ব্যাট ধরতে দিয়েছে। জাতীয় দলে খেলা সানজিদা ইসলাম আপুও ওই সময় আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। 

প্রথম আলো:

সানজিদা তো জাতীয় দলের ক্রিকেটার। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হলো কীভাবে? 

দিলারা: তাঁর সঙ্গে পরিচয় গাইবান্ধায় গিয়ে। সেখানে চার-পাঁচটা স্কুল নিয়ে একটা টুর্নামেন্ট হয়েছিল। আমরা চার-পাঁচজন সেই টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিলাম।

২০২৩ অনূর্ধ্ব–১৯ নারী বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান দিলারা
আইসিসি
প্রথম আলো:

দিনাজপুর থেকে জাতীয় পর্যায়ে কীভাবে এলেন? 

দিলারা: দিনাজপুরে প্রিমিয়ার লিগ ও ফার্স্ট ডিভিশন টুর্নামেন্ট হয়েছিল। সেখান থেকেই আমাকে রুহুল আমিন স্যার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য বাছাই করেন। 

প্রথম আলো:

খেলার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন শুনেছি? 

দিলারা: চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স (স্নাতক) প্রথম বর্ষ। 

প্রথম আলো:

পরিবারের আর্থিক অবস্থার নিশ্চয়ই উন্নতি হয়েছে। 

দিলারা: আল্লাহর রহমতে মাকে এখন আর মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হয় না। আমি দেখাশোনা করছি। চলছি, ভালো চলছি।