প্রথম আলো: বাংলাদেশে নতুন ভূমিকায় প্রথম এলেন। এর আগে তো খেলোয়াড় হিসেবে বেশ কয়েকবার আসা হয়েছে…
গ্রান্ট এলিয়ট: আগে একবার এসেছিলাম। চট্টগ্রামে একটা টেস্ট হয়েছিল, সেটায় দলে থাকলেও খেলিনি। পরে ঢাকাতে খেলেছি। কিন্তু ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। সম্ভবত ২০০৮-০৯–এর দিকের ঘটনা। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে এসেছিলাম, দুই সিরিজেই হেরে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ওই সিরিজে অসাধারণ ছিল। এরপর বিপিএল খেলতেও এসেছি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে…
এলিয়ট: হ্যাঁ, ওই দলে ক্রিস গেইল ছিল। অল্পের জন্য প্লে-অফ খেলতে পারিনি। তবু এটা ছিল দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। আমি দুটি ম্যাচ খেলেছিলাম। বেশি নয়। তবে আমি জানি, বিপিএল দারুণ একটা টুর্নামেন্ট। বেশ দর্শকপ্রিয়। আমার বেশ ভালো লেগেছে।
প্রথম আলো: ধারাভাষ্য কেমন উপভোগ করছেন?
এলিয়ট: খুব সহজে হয়েছে। যেহেতু ক্রিকেটার হিসেবে অনেক ভ্রমণ করতে হয়। এটা রক্তে মিশে যায়। আমি কোচিং বা অন্য কিছু করার চেয়ে ক্রিকেটের কাছে থাকার ও উপভোগ করার জন্য ধারাভাষ্য বেছে নিয়েছি। খেলা দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা আমাদেরই, ক্যামেরার সব অ্যাঙ্গেল থাকে, অনেকভাবে খেলার গল্প বলা যায়। টেকনোলজি ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দের, খেলা দেখার আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: শুনে মনে হচ্ছে, আপনি ব্রডকাস্টিং পেশার জন্যই তৈরি…
এলিয়ট: শুনুন, ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের টিকিট ছিল আমার কাছে। কিন্তু আমি ওটা আমার মাকে দিয়ে বলেছিলাম, ‘তুমি যাও, খেলাটা আমি টিভিতেই দেখতে চাই!’ যদি ভারত জেতে, আর শচীন সেঞ্চুরি করে, আমি সেই ইনিংসটা টিভিতে দেখতে চাই। ব্রডকাস্ট ব্যাপারটা সব সময় আমি উপভোগ করি। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে যখন বিরতি পেয়েছি, আমি টিভিতে কাজ করেছি। এখন তো আরও উপভোগ করছি।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে আপনি ধারাভাষ্যকার ছিলেন। কোনো স্মৃতি আছে কি, যা ভাগাভাগি করা যায়?
এলিয়ট: হ্যাঁ, সেটা বাংলাদেশের জন্য দারুণ এক জয়। আমার মনে আছে, খেলা শুরুর আগে আমি বলেছিলাম, এই কন্ডিশন নিউজিল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশকে বেশি সাহায্য করবে। কারণ, নিউজিল্যান্ডে সাধারণত খুব সবুজ উইকেট থাকে, ঘাস থাকে। কিন্তু ওটা ছিল শুষ্ক, বল রিভার্স সুইং করছিল। এরপর একসময় আর্মিতে ভলিবল খেলা ইবাদত এসে দুর্দান্ত বল করল। সেই টেস্ট ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য দারুণ জয় ছিল।
অবশ্যই আমি কখনো চাই না নিউজিল্যান্ড হারুক। কিন্তু এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো একটা জয়। তারা অনেক দিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছে। আপনি তাদের আরও ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে চাইবেন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো:নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে থাকে। এটা কি কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দলে পরিণত করে তুলছে?
এলিয়ট: আমার মনে হয়, ক্রিকেটার হিসেবে আপনি সব সময় পুরো পৃথিবী ঘুরে খেলতে চাইবেন। দেশের বাইরে কেমন খেলছেন, এটাই ঠিক করে দেয় আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কত লম্বা হবে। আমি যখন উপমহাদেশে এসেছি, আমার জন্য এটা ছিল একদম ভিন্ন। স্পিন ছিল অনেক বেশি। কিন্তু যত ভুগবেন, ততো ভালো তৈরি হবেন। আলাদা কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার উপায় খুঁজে পাবেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিউজিল্যান্ডে গেলে বাউন্স, পেসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড সফর করলে মুশফিক, লিটন, সাকিব, তামিমের মতো ক্রিকেটাররা আরও বেশি অভিজ্ঞ হয়, পরিণত হয়। এরপর সেটা তরুণদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশ দল একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোনো পরামর্শ?
এলিয়ট: আমার মনে হয়, আপনি যখন বারবার খেলোয়াড় বদলাবেন, তখন ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া কঠিন হবে। আপনি নিউজিল্যান্ডের দিকে তাকান, তারা খুব ধারাবাহিক দল। বাংলাদেশকে এখন পুরো আলাদা ক্রিকেটার নিয়ে খেলতে হচ্ছে সিনিয়ররা না থাকায়।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: নিউজিল্যান্ডকে তা–ই করতে দেখি। কাউকে সুযোগ দিলে লম্বা সময় ধরে তাদের প্রক্রিয়ায় রাখা হয়।
এলিয়ট: একদম তা–ই। তারা ক্রিকেটারদের অনেক সুযোগ দেয়। আপনি যখন একবার নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন, তারা আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাবে। এক-দুই ম্যাচ সুযোগ দিয়ে বাদ দেবে না। তারা একই সঙ্গে ‘এ’ দলের ক্রিকেট খেলবে। সেখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো খুব ভালো জায়গায় আছে। ক্রিকেটারদের জন্য পথটা পরিষ্কার। ছয়টা রাজ্য দলে হয়তো ১০০ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার আছে। ওই পুল থেকে ক্রিকেটারদের দ্রুত আলাদা করা যায়। তাদের সুযোগ দেওয়া হয়। রাচিন রবীন্দ্র যেমন দলের সঙ্গে দুই বছর ঘুরছে।
এমন না যে এসেই পারফর্ম করে ফেলেছে। তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে জাতীয় দলের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার। কারণ, এটা কঠিন। শুধু ক্রিকেট নয়, এখানে ভ্রমণের ব্যাপার আছে, স্ট্রেনথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং, মানসিক শক্তি দরকার হয়। যখন আপনি এই একবার জাতীয় দলে আসবেন, এসবে অভ্যস্ত হয়ে ক্রমেই উন্নতি করবেন।
প্রথম আলো: নিউজিল্যান্ড দলে অনেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারও আছেন। একসময় আপনি খেলেছেন। এখন ডেভন কনওয়ে, নীল ওয়াগনারের মতো খেলোয়াড়েরা ভালো করছেন। এই প্রক্রিয়া একটু বলুন।
এলিয়ট: আমি প্রায় ২৩ বছর আগে নিউজিল্যান্ডে এসেছি, দক্ষিণ আফ্রিকায় তখন চুক্তি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। আপনি অনেক দক্ষিণ আফ্রিকানকে দেখেছেন তাদের জন্মস্থান ছেড়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছে। এখন অনেকে নিউজিল্যান্ডে আসছে। জীবনযাত্রা প্রায় এক, এটা একটা কারণ হতে পারে। বিজে ওয়াটলিং, গ্লেন ফিলিপস, ডেভন কনওয়ে, এখন তো অনেকে আসছে। আমরা ভাগ্যবান। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকায় স্কুল ক্রিকেটের প্রক্রিয়া খুব ভালো। ওখানেই আপনি ক্রিকেট শিখবেন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আপনাকে ২০১৫ বিশ্বকাপ নিয়ে প্রশ্ন না করে ছাড়া যায় না। নিশ্চয় প্রায়ই আলোচনায় উঠে আসে ইডেন পার্কের সেই দিনের ইনিংসটি?
এলিয়ট: অনেকটা তা–ই। অনেক দিন হয়ে গেল। ওই নিউজিল্যান্ড দলটা ছিল অসাধারণ। আমরা বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েছি। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম অধিনায়ক ছিল, দারুণভাবে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল। আমরা ভাগ্যবান ছিলাম বিশ্বকাপটা হয়েছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায়। মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়েছে, সবাই ক্রিকেট নিয়ে রোমাঞ্চিত ছিল। অস্ট্রেলিয়াকে ইডেন পার্কে হারিয়েছি। এরপর সে মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবার ফাইনালে উঠেছি। দারুণ অভিজ্ঞতা বলতেই হয়।
প্রথম আলো: ফাইনালেও আপনার ব্যাট থেকে আসে ৮৩ রান।
এলিয়ট: দুর্ভাগ্যবশত ফাইনালটা নিউজিল্যান্ডে হয়নি, অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছে। আমরা খুব বেশি সময় পাইনি, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরও কিছু সময় দরকার ছিল। তবে পুরো বিশ্বকাপ ছিল অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা।