সাক্ষাৎকারে শন পোলক

‘হঠাৎ হঠাৎ নয়, বাংলাদেশের এখন নিয়মিত জেতার সময় হয়েছে’

ত্রিনিদাদের হিলটন হোটেলের লবিতে ছোট্ট একটা খাবারের দোকান। দুপুরে খাবেন বলে সেখান থেকেই স্যান্ডউইচ আর চিপস কিনলেন। স্যান্ডউইচ গরম করার ফাঁকে সেই দোকানে দাঁড়িয়েই সাক্ষাৎকার। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক শন পোলক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। সাক্ষাৎকারটাও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়েই—

প্রথম আলো:

অস্ট্রেলিয়ার বদলে আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে পেয়ে নিশ্চয়ই আপনি খুব খুশি...

শন পোলক: অনেক খুশি। না না, সেটি আফগানিস্তানকে পেয়েছি বলে নয়। একদিক থেকে এটা ভালো। কারণ, এটা আফগানিস্তানের প্রথম সেমিফাইনাল। ঠিক জানি না, ওরা এই উপলক্ষটাকে কীভাবে নেবে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলও তা জানে না।

প্রথম আলো:

এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন? সেমিফাইনালের আগে সাত ম্যাচের সাতটিতে জয়, তবে প্রায় সব কটি জয়ই তো স্নায়ুর ওপর রীতিমতো অত্যাচার…

পোলক: আসলেই তা-ই। খুব যে গোছানো পারফরম্যান্স, তা নয়। তবে ওরা কোনো না কোনো পথ বের করে নিয়েছে জেতার জন্য। দৃঢ় মানসিকতার প্রমাণ রেখেছে। কখনো কখনো যা গোছানো পারফরম্যান্সের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম আলো:

এটা কি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ভালোই হলো, যা সেমিফাইনাল বা এরপর ফাইনালে উঠলে কাজে দেবে?

পোলক: অবশ্যই। এই বিশ্বকাপে ‘হারলেই বিদায়’, এমন ম্যাচ খেলতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তাতে জেতা যেকোনো দলেরই আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আমি নিশ্চিত, ওরা দল হিসেবে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে চাইবে। কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের জোরে ওরা বেরিয়ে গেছে। তবে দল হিসেবে আরও ভালো খেলার সুযোগ আছে।

প্রথম আলো:

অনেকবারই হয়তো আপনি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তারপরও প্রশ্নটা করি, এত বছরেও দক্ষিণ আফ্রিকা একটা বিশ্বকাপ জিততে পারেনি, ফাইনালেই তো উঠতে পারেনি কখনো। এখন কি একটা বিশ্বকাপ জেতা উচিত নয়?

পোলক: অবশ্যই আমরা জিততে চাই। পুরো দেশ জিততে চায়। যত বেশি কাছে যাওয়া যায়, ততই সেই সম্ভাবনা বাড়বে। আমরা গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে উঠেছি, এবার এখানেও। এভাবে সেমিতে উঠতে থাকলে আশা করি, একদিন না একদিন বিশ্বকাপ জিতবই।

প্রথম আলো:

দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপাটা বাংলাদেশে। ১৯৯৮ সালের সেই নকআউট বিশ্বকাপে জয়ের কারণে ঢাকা নিশ্চয়ই আপনার কাছেও এক সুখস্মৃতির নাম, তাই না?

পোলক: আমরা কিন্তু সে বছরই কমনওয়েলথ গেমসেও সোনা জিতেছি। সেটিও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। এটা যে কেন সবাই ভুলে যায় (হাসি)।

প্রথম আলো:

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা কি দেখেছেন?

পোলক: একটি নয়, দুটি দেখেছি। সেন্ট ভিনসেন্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ প্রায় পুরোটাই। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ দলে বেশ কজন ভালো খেলোয়াড় আছে। তবে ধারাবাহিকতার খুব অভাব, যা এ ধরনের টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য খুব জরুরি। নিজেদের দিনে বাংলাদেশ যেকোনো দলকেই হারাতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক দিন তো হলো। শুধু হঠাৎ হঠাৎ নয়, বাংলাদেশের এখন নিয়মিত জেতার সময় হয়েছে।

প্রথম আলো:

সমস্যাটা কোথায় বলে মনে করেন...ব্যবস্থাপনার, না নেতৃত্বের?

পোলক: আমি ঠিক বলতে পারব না। তবে বাংলাদেশ দলে আমি খুব ঘন ঘন পরিবর্তন হতে দেখি। সাপোর্ট স্টাফে পরিবর্তন, অধিনায়কত্বে পরিবর্তন…এটা কোনো দলের জন্যই ভালো নয়। জীবনের সব ক্ষেত্রেই সাফল্য পেতে স্থায়িত্ব লাগে।

প্রথম আলো:

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটা কি দেখেছেন?

পোলক: না, দেখা হয়নি।

প্রথম আলো:

শুনেছেন নিশ্চয়ই, সেমিফাইনালে উঠতে বাংলাদেশকে ১২.১ ওভারে ১১৬ রান করতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশ সেভাবে তা করার চেষ্টাই করেনি। ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই শুধু ম্যাচ জিততে চেয়েছে। এটাকে কি ঠিক মনে করেন?

পোলক: বাংলাদেশ যদি কোয়ালিফাই করার লক্ষ্য নিয়েই ব্যাট করতে নেমে থাকে, খুব ভালো। একটা সময় কোয়ালিফাই করা সম্ভব নয় মনে করে যদি শুধু ম্যাচ জিততে চায়, তাতেও আমি সমস্যা দেখি না। তবে আমি মনে করি, যত বেশি সময় সম্ভব কোয়ালিফাই করার চেষ্টা করাই উচিত। যেকোনো দলই তো তা করবে। এসব টুর্নামেন্টে ম্যাচ জেতার উদ্দেশ্য তো এটাই। আমি জানি না, কতক্ষণ তারা কোয়ালিফাই করার চেষ্টা করেছে। কখন তাদের মনে হয়েছে, শুধু ম্যাচ জেতার চেষ্টা করাই ভালো। আমি খেলা দেখিনি। অধিনায়ক কী ভেবেছেন, তা-ও জানি না। আমার জন্য তাই সেভাবে কিছু বলা কঠিন।

প্রথম আলো:

এই বিশ্বকাপ তো এখন চার দলের টুর্নামেন্ট। আপনার চোখে ফেবারিট কে?

পোলক: বলা কঠিন। টুর্নামেন্টের আগে আফগানিস্তানকে খুব বেশি মানুষ সেমিফাইনালে দেখেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু তারা তাদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েই এখানে এসেছে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। দলটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগে। কারণ, ওদের খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে খুব কমই খেলে। প্রায় সবাই বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে নিজেদের খেলার উন্নতি করেছে, নতুন নতুন জিনিস যোগ করেছে। এরপর আফগানিস্তান দলে ফিরে সেসব প্রয়োগ করছে। এটাকে ইউনিকই বলতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টোয়েন্টিতে ওদের অনেককে দেখেছি। নুর আহমেদ, গুরবাজ, নাভিন…রশিদ খান তো ছিলই। আইপিএলেও ওদের দেখেছি। ওদের ব্যাপারটা আসলেই একটু আলাদা।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের আগেই আফগানিস্তান বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে ফেলছে। এটা কি ওদের ভালো করার তাড়না বা সাফল্যের জন্য ক্ষুধাটা বেশি বলে?

পোলক: ওদের ক্ষুধাটা হয়তো বেশি। সুযোগ পেলেই নিজেদের তুলে ধরতে চায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি দিন হয়নি, এটা কারণ হতে পারে। নিউ এনার্জি বলে একটা কথা আছে না! বাংলাদেশের ক্রিকেটে কী হচ্ছে, তা আমি খুব ভালো জানি না। মন্তব্য করাও তাই ঠিক হবে না।