কোন ভাবনা থেকে আপনারা চট্টগ্রাম আবাহনীর হাল ধরলেন?
জাহিদ হাসান এমিলি: যখন শুনেছি দুই-তিনটি দল প্রিমিয়ার লিগে খেলবে না, তখনই আমরা খেলোয়াড়েরা কয়েকবার বাফুফেতে গিয়ে সব ক্লাবের খেলা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। কিন্তু শেখ জামাল আর শেখ রাসেল বাফুফেকে লিখিতভাবে জানায়, তারা খেলবে না। চট্টগ্রাম আবাহনীও ২২ আগস্ট রাত ১০টা পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীন ছিল। এরপর আমরা এগিয়ে আসি।
বাকি প্রক্রিয়াটা কীভাবে হলো?
এমিলি: ফুটবলারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অনেকে বলছিল, ‘ভাই আমাদের তো খেলা ছেড়ে দিতে হবে! আমাদের ক্যারিয়ার শেষ।’ এ অবস্থায় মামুনুল চট্টগ্রামের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে (মহাসচিব সাবেক হুইপ শামসুল হক চৌধুরী) যোগাযোগ করে। মামুনুলকে তখন বলা হয়, ‘তোমরা নিজ দায়িত্বে দল করতে পারলে করো।’ তখন আমরা দায়িত্ব নিয়ে দুই ঘণ্টার মধ্যে দল গড়ি।
এত বড় কাজ দুই ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে সম্ভব হলো?
এমিলি: ২২ আগস্ট ১০টায় আমরা উদ্যোগ নিই। খেলোয়াড়দের ফরমগুলো আরমান ভাইয়ের (চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার) কাছে ছিল। খেলোয়াড়েরাও সঙ্গে ছিল। ফলে দ্রুত নিবন্ধন করিয়ে ফেলতে পেরেছি। কিন্তু খেলোয়াড়দের হাতে একটা টাকাও দিতে পারিনি। এর চেয়ে দুঃখজনক, কষ্টের কিছু হতে পারে না। ফুটবলারদের এমন দুরবস্থা কল্পনারও বাইরে। আমি নিজে খেলোয়াড়ি জীবনে সব সময় দলবদল করে টাকা নিয়ে বাসায় গিয়েছি, পরিবারের মুখে হাসি দেখেছি। এবার অনেক খেলোয়াড় সেই সুযোগ পেল না। এটাই বেশি খারাপ লাগছে।
ফুটবলে কখনো এমন দলবদল হবে ভাবিনি। আমার ক্যারিয়ারেই এমন দলবদল আগে দেখিনি। যে খেলোয়াড় আগে ৯৫ লাখ টাকায় চুক্তি করেছে, এই মৌসুমে তাকে ৫ লাখ টাকায় খেলতে হচ্ছে।
কোনোমতে একটা দল তো দাঁড়াল। কিন্তু সামনে চলবে কীভাবে?
এমিলি: কোচিং স্টাফ কারা হবে, আবাসিক ভেন্যু কোথায় হবে—আমরা এসব নিয়ে ভাবছি। এখন কিছু তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়। তবে আমি নিজে কোচিংয়ে আসব না। ভালো সংগঠক হতে চাই। বলতে পারেন, সেটা চট্টগ্রাম আবাহনীকে দিয়েই শুরু করলাম।
সামগ্রিকভাবে এবারের দলবদল কেমন হলো?
এমিলি: ফুটবলে কখনো এমন দলবদল হবে ভাবিনি। আমার ক্যারিয়ারেই এমন দলবদল আগে দেখিনি। যে খেলোয়াড় আগে ৯৫ লাখ টাকায় চুক্তি করেছে, এই মৌসুমে তাকে ৫ লাখ টাকায় খেলতে হচ্ছে। খেলোয়াড়েরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো, ওদের সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই।
দেশের সব ক্ষেত্রেই একটা সংকট চলছে। ফুটবলও এর বাইরে নয়। এখন ফুটবল সংগঠকেরা কীভাবে পরিস্থিতি সামলান, তার ওপর নির্ভর করছে ফুটবলের ভবিষ্যৎ।
এটা কী দেশের ফুটবলের জন্য অশনিসংকেত?
এমিলি: দেখুন, দেশের সব ক্ষেত্রেই একটা সংকট চলছে। ফুটবলও এর বাইরে নয়। এখন ফুটবল সংগঠকেরা কীভাবে পরিস্থিতি সামলান, তার ওপর নির্ভর করছে ফুটবলের ভবিষ্যৎ। এ ক্ষেত্রে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বড় দায়িত্ব আছে। সংকট উত্তরণে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
শেখ জামাল ও শেখ রাসেল ক্লাবের ভবিষ্যৎ কী দেখছেন?
এমিলি: বলতে পারব না। তবে খেলা সব সময়ই রাজনীতির বাইরে থাকা উচিত। তাই চাইব, ক্লাব দুটি আগামীতে যেন খেলে, সেটা যে নামেই হোক।
আবাহনী লিমিটেড, চট্টগ্রাম আবাহনী, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব বিদেশি নেয়নি। এতে কি লিগের মান কমে যাবে না? এর প্রভাব কি জাতীয় দলের ওপরও পড়বে?
এমিলি: পড়তেই পারে। লিগের মান কিছুটা হলেও কমবে। বিদেশি না নেওয়ায় দলগুলো পিছিয়ে পড়ল মাঠে নামার আগেই। এবার লিগ কতটা আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, সে প্রশ্ন থাকছেই। শক্তিতে বসুন্ধরা কিংস আরও ওপরে চলে গেল। ছয় বিদেশি নিয়ে মোহামেডান কিছুটা চেষ্টা করেছে ভালো দল গড়ার। তারা লড়াই করতে পারে কিংসের সঙ্গে। তবে সেটাও যথেষ্ট হবে বলে মনে হয় না।