সাক্ষাৎকারে মুমিনুল হক

‘এই সেঞ্চুরিটা আমার জীবনের সেরা’

কানপুর টেস্টে বাংলাদেশ দলের একমাত্র ইতিবাচক দিক মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরিটি অবশ্য দলের ব্যর্থতায় চাপা পড়ে গেছে। কাল কানপুর থেকে দিল্লির বিমান ধরার আগে মুঠোফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে করা স্মরণীয় সেঞ্চুরির গল্প শোনালেন মুমিনুল। সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে তাঁর পর্যালোচনাও।

প্রথম আলো:

ভারত সফরে দলের পারফরম্যান্সকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মুমিনুল হক: সব মিলিয়ে চিন্তা করলে, যেমন প্রত্যাশা ছিল, ওই অনুযায়ী খেলতে পারিনি। যেমন চিন্তা করেছিলাম, সেটি পূরণ করতে পারিনি। হেরেছি ঠিক আছে, কিন্তু শোচনীয়ভাবে হারাটা ঠিক হয়নি।

প্রথম আলো:

পাকিস্তানে জিতে আসার পর ভারত নিয়ে আপনাদের দলগত ভাবনা কী ছিল? সেটার কতটা পূরণ করতে পেরেছেন?

মুমিনুল: আমরা সবাই জানতাম যে ভারত সিরিজ কঠিন হবে। একটা সিরিজ শেষ হলে ভালো হোক বা খারাপ, সেটা তো আর থাকে না। পাকিস্তান সিরিজটি তাই অতীত হয়ে গিয়েছিল। যেটা বললাম, আমরা যতটা প্রত্যাশা করছিলাম, তেমন খেলতে পারিনি। প্রথম ম্যাচে বোলাররা খুব ভালো করেছিল। ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে তিন বিভাগেই পারিনি।

প্রথম আলো:

চেন্নাইয়ে কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গিয়েছিল। কানপুরে ভারতের ব্যাটিং বাংলাদেশকে কোনো সুযোগই দেয়নি। ভারতের ওই ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই।

মুমিনুল: এটা তো আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। ডে বাই ডে, সবাই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রতি ফোকাস করছে। হাই ইনটেনসিটি খেলা, অ্যাটাক করা। আইসিসিও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপটা এমনভাবে প্রমোট করছে, এটার কারণেও হাই ইনটেনসিটি চলে আসছে। এখন তাই ফল বের করাটাই বড় হয়ে গেছে। ড্র করলে মাত্র ৪ পয়েন্ট আর জিততে পারলে ১২ পয়েন্ট।

কানপুর টেস্টে অনেক সুইপ শট খেলেছেন মুমিনুল হক
ছবি: এএফপি
প্রথম আলো:

ড্র তো মনে হয় টেস্ট ক্রিকেট থেকে হারিয়েই যাচ্ছে…

মুমিনুল: হ্যাঁ, কেউ ড্রয়ের চিন্তা করে খেলে না। সবাই রেজাল্টের জন্য খেলে। প্রতিটি দলই এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেরা দুই-তিনে থাকার জন্য। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এটা ভালো। ইনটেনসিটি বাড়ছে।

প্রথম আলো:

ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য কানপুর টেস্টটা ভালো গেছে বলা যায়। এই ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরি, তাদেরই মাটিতে…নিশ্চয়ই এ নিয়ে সন্তুষ্টি আছে?

মুমিনুল: দলগতভাবে চিন্তা করলে এটার কোনো মূল্য নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা করলে…অবশ্যই বিশ্বের সেরা বোলিং দলের একটি। পাঁচজন পাঁচ রকম বোলার, সবাই উঁচু মানের। অনেক কষ্ট হয়েছে রান করতে। প্রতিটি সময় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রতিটি বলে চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার মনে হয়, (ভারতের বোলিং) বিশ্বের সেরা আক্রমণের একটি। সেদিক থেকে এই সেঞ্চুরিটা আমার জীবনের সেরা ইনিংস।

কানপুর টেস্টে পাওয়া সেঞ্চুরিটাই মুমিনুল হকের চোখে সেরা
ছবি: ওয়ালটন
প্রথম আলো:

খুব ভালো সুইপ খেলেছেন সেদিন…

মুমিনুল: ওইটা আমি পরিকল্পনা করে এসেছিলাম। কারণ, সুইপটা সব বোলারের বিপক্ষে বা সব কন্ডিশনে খেলার দরকার পড়ে না। আপনার সামনে যখন উঁচু মানের বোলার, টেস্টের ১ নম্বর, ২ নম্বর বোলার...ওরা তো এক-দুই হয়েছে ওই সব কারণেই। ওদের সামনে তো সুইপ ছাড়া বিকল্প নেই। সুইপ করেই রান নিতে হবে। সেটা পরিকল্পনায় রাখতে হবে। আমিও রেখেছিলাম, সফল হয়েছি। তবে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, ঝুঁকি ছিল।

প্রথম আলো:

পাকিস্তান সিরিজ থেকেই আপনি বাউন্সার বেশ ভালো সামলাচ্ছেন। কখনো আপার কাটে, কখনো পুল শটে।

মুমিনুল: আমি এটার জন্য অনুশীলন করেছি, সঙ্গে মাইন্ডসেটও দরকার। ব্যাটসম্যান সেট হয়ে গেলে বোলারদের সবশেষ অপশন থাকে বাউন্সার। ওই অপশনটা কখন আসে, পরিস্থিতিটা কখন আসে সেভাবে মাইন্ডসেট ঠিক করে খেলতে হয় আরকি। ফিল্ড সাজানো দেখে নিই। কখনো দেখা যায়, সব জায়গা বন্ধ করে দেয়। তখন আবার ভিন্ন কিছু ভাবতে হয়। অন্য কিছু খেলতে হয়। পরিস্থিতি বুঝে যখন যেটা কাজে লাগে। আপার কাট আবার একটু আলাদা। তবে ওই জায়গায় ফিল্ডার দিয়ে দিলে আবার খেলা যায় না। তখন বল ছাড়তে হয় বা পুল করতে হয়।

প্রথম আলো:

সেঞ্চুরিটা এসেছে ৩ নম্বরে নেমে। যদিও আপনার ৪ ও ৩ নম্বরের ব্যাটিং রেকর্ডে তেমন বড় পার্থক্য নেই। তবু মানসিকতার তো একটু ভিন্নতা থাকে।

মুমিনুল: তিনে ব্যাটিং করলে একটু ভিন্ন মাইন্ডসেট হয়ই। কারণ, বেশির ভাগ সময় নতুন বল খেলতে হয়। পেসারদের খেলতে হয়। সুইং থাকে। চ্যালেঞ্জটা বেশি থাকে। সেভাবে মাইন্ডসেট ঠিক করতে হয়।

পরিস্থিতি বুঝে খেলার চেষ্টা করেছেন মুমিনুল হক
ছবি: এএফপি
প্রথম আলো:

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও তিনে খেলবেন?

মুমিনুল: আমি নিশ্চিত নই, হয়তো–বা...টিম ম্যানেজমেন্ট জানে। এখনো কোনো পরিকল্পনা হয়নি। হয়তো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে।

প্রথম আলো:

দলগত ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন? আমরা দেখেছি, ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে ভালো করলে বাংলাদেশের বোলাররা টেস্ট জিতিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিক না হওয়ায় টেস্ট দলও ধারাবাহিক হতে পারছে না। আপনি কী মনে করেন?

মুমিনুল: এটা মনে হওয়ার কিছু নয়! এটা ঠিক করা দরকার। বোলাররা ম্যাচ জেতায়, কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ভালো না করলে ম্যাচ জেতা তো কঠিন, ম্যাচে টিকে থাকাও কঠিন। তাই ব্যাটিংটাও সেভাবে করতে হয়।