জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গঠনতন্ত্রে আছে, বর্তমান খেলোয়াড়েরা ফেডারেশনের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। তাহলে আপনি কীভাবে দাবার সাধারণ সম্পাদক হলেন?
তৈয়বুর রহমান: স্বার্থের সংঘাত না হলে হওয়াই যায়। রানী আপা (রানী হামিদ) তো ৮২ বছরেও অলিম্পিয়াড খেলে এসেছেন। আমরা তাঁকে সংগঠক না হতে দিলে আমাদেরই লোকসান। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ এখন ফিদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি, আবার খেলছেনও। তবে আমি নিজেকে অ্যাকটিভ খেলোয়াড় বলি না।
কিন্তু এ বছরের শুরুতেই তো আপনি থাইল্যান্ড ওপেনে খেলে এসেছেন, যেখানে মনন রেজাও খেলেছে।
তৈয়বুর: ছুটি থাকায় থাইল্যান্ডে খেলেছি। খেললে ফিদে রেটিং অ্যাকটিভ হয়। আমারটা ইনঅ্যাকটিভ ছিল, থাইল্যান্ডে খেলায় অ্যাকটিভ হয়েছে। নিজেকে অবশ্য অ্যাকটিভ খেলোয়াড় ভাবি না। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, লিগ কোনোটাই খেলি না। সম্ভবত চার-পাঁচ বছর আগে সর্বশেষ ন্যাশনালে খেলেছি। এখন যা খেলি শখে।
২০০১ সালে ফিদে মাস্টার হওয়ার পর থমকে গেলেন কেন?
তৈয়বুর: পড়াশোনা, চাকরি বড় কারণ। বুয়েটে নগর-পরিকল্পনায় পড়েছি। ২০০১ সালেই ২০তম বিসিএসে পাস করি। ঢাকাতেই আমার পোস্টিং ছিল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে ও পরিকল্পনা কমিশনে চার বছর করে ছিলাম। পড়তে বিদেশে ছিলাম সাড়ে ছয় বছর। নগরে প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করেছি জার্মানিতে। যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ করেছি। ২০২২ সালে যুগ্ম সচিব হয়ে এখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আছি। যুগ্ম সচিবদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে তরুণ। খেলার সময় কই, বলুন?
একটা সংস্কারের লক্ষ্যে আপনাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। তা কী সংস্কার করবেন?
তৈয়বুর: সংস্কার বলতে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আর্থিক সহায়তা কোথায় পাব?
আপনি সরকারি কর্মকর্তা। আপনার জন্য তো এটা সহজ হওয়ার কথা।
তৈয়বুর: আপনারা সবাই সহযোগিতা করলে কঠিন হবে না। আমি চাই, দাবার শীর্ষ স্তরকে নার্সিং করতে, পাইপলাইন তৈরি করতে। জাতীয় দলের জন্য আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করা দরকার। এ জন্য শীর্ষ খেলোয়াড়দের ভালো করা জরুরি। নিয়াজ ভাইকে দেখে আমরা দাবায় এসেছি। বৈশ্বিক সাফল্য আনতে হবে আমাদের। আরও কিছু পরিকল্পনা আছে।
সেসব কী?
তৈয়বুর: এখন আমাদের ১০ হাজার রেজিস্টার্ড দাবাড়ু আছে, এক বছরের মধ্যে সেটি ৫০ হাজারে নিতে চাই। দাবাকে আমি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে নিচ্ছি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, ওরা আমাদের পার্টনার করতে চায়। স্কুলের সিলেবাসে দাবা যোগ করতে প্রাথমিক-গণশিক্ষা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব।
প্রশ্ন: ১৬ বছর ধরে গ্র্যান্ডমাস্টার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এই সংস্কারের মাধ্যমে কি অপেক্ষার অবসান হবে?
তৈয়বুর: আমাদের সুবিধা হলো, এখন রেটিংয়ে দুই শীর্ষ খেলোয়াড়ই (ফাহাদ ও মনন রেজা) গ্র্যান্ডমাস্টার নয়। এটা আমার জন্য ইতিবাচকই। কিছু অর্থ, কার্যকর প্রশিক্ষণ আর টুর্নামেন্টে খেলা নিশ্চিত করলে দ্রুতই ওরা জিএম হয়ে যাবে। আমি খুবই আশাবাদী।
প্রশ্ন: দাবায় দ্বন্দ্ব অনেক। নিয়াজ মোর্শেদ বলেছেন, সৈয়দ সুজাউদ্দিনকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা ঠিক হয়নি।
তৈয়বুর: এই দ্বন্দ্বটা আমাদের জন্য ভালো নয়। নিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দেবেন বলেছেন। বাকি গ্র্যান্ডমাস্টাররা তো আমাকে সাপোর্ট করেছেই। আসলে সামান্য একটা বিষয়ে নিয়াজ ভাই আর সুজা আঙ্কেলের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু নব্বইয়ের মাঝামাঝি। সুজা আঙ্কেলকে খুব পছন্দ করি। তিনটি মন্ত্রণালয়ে সচিব ছিলেন তিনি। দাবায় সহায়তা করতে পারবেন। নিয়াজ ভাই কিংবদন্তি। তাঁকে সম্মান করি। আশা করি, তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়বে না দাবায়।
প্রশ্ন: সংস্কারের নামে অ্যাডহক কমিটিতে কয়েকটি অচেনা মুখ আনা হয়েছে। এটা কি ঠিক হয়েছে?
তৈয়বুর: অচেনা বলতে একজন যুগ্ম সম্পাদক। বাইরের কেউ একজন কমিটিতে এসে ভিন্নভাবে সবকিছু দেখলে ক্ষতি কী, ভালোই তো। আমার মতে, দাবায় এর চেয়ে ভালো কমিটি আর হয়নি। এর স্থায়িত্ব কত দিনের, জানি না। তবে এক বছর পেলেও ইতিবাচক বদল দেখবেন। শতভাগ স্বচ্ছতা থাকবে। নেতৃত্বে দাবাড়ুদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেব।
আপনার শ্যালক হিসেবে গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব বা অন্য কেউ বিশেষ সুবিধা পাবেন? এসব কথাও তুলছেন কেউ কেউ।
তৈয়বুর: নিশ্চয়তা দিচ্ছি, কেউ বিশেষ সুবিধা পাবে না।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মাসুদ আলম