বললেন গোলাম রব্বানী
‘একটা সময় আর চাপ নেওয়া যায় না’
সাফজয়ী জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য সিরাত জাহান স্বপ্নার জাতীয় দল থেকে অকাল অবসর নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর সঙ্গে কথোপকথন। কিন্তু একপর্যায়ে বলে বসলেন ‘আমি নিজেই তো আর মেয়েদের কোচ থাকছি না!’ হঠাৎ করেই তাঁর এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নারী ফুটবলের জন্য একটা ধাক্বা হয়েই এসেছে। ‘ফুটবল কোচেরা চাকরিতে আজ আছেন, কাল নেই’—এই বাস্তবতার পরেও গোলাম রব্বানীর কোচের পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা অপ্রত্যাশিতই। কেন সরে যাচ্ছেন? সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপসহ অনেক সাফল্য এনে দেওয়া সফল কোচের মুখেই শোনা যাক—
আসছে সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ দলের চূড়ান্ত পর্ব আছে। এরপর এশিয়ান গেমস। আপনি এসব টুর্নামেন্টে যাবেন না কোচ হিসেবে?
গোলাম রব্বানী: না, আমি আর কোনো টুর্নামেন্টে যাব না।
এ মাসেই আমার শেষ। আমি থাকব না আর, এটাই ফাইনাল। এ মাস পর্যন্তই থাকব।
আপনি কি সিরিয়াস? নাকি মান-অভিমান থেকে বলছেন?
গোলাম রব্বানী: আমি সিরিয়াস। যা বলছি ভেবেচিন্তেই বলছি। আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
বাফুফেকে বিষয়টা জানিয়েছেন?
গোলাম রব্বানী: মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান জেনেছেন। বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সেক্রোটারিও জেনেছেন। কিন্তু আমি অফিশিয়ালি জানাইনি। তিন-চার দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে দেব।
তাঁদের কী আপনি মৌখিকভাবে বলেছেন, নাকি কোনো মাধ্যমে?
গোলাম রব্বানী: আমি মুখে বলিনি। আমার সহকারী কোচ লিটু জানিয়েছে। ও বলেছে তাঁদের যে, আমি আর থাকছি না। বিষয়টা হলো, আমি আর কাজ করব না।
তাহলে আপনাকে আমরা হারিয়ে ফেলছি?
গোলাম রব্বানী: না, না। আমার চেয়ে ভালো আরও আসবে। এটা কোনো ব্যাপার নয়।
নারী দলের কোচ হিসেবে আপনার যে সাফল্য আর গ্রহণযোগ্যতা তাতে আপনার এভাবে সরে যাওয়া একটু বিস্ময়করই...
গোলাম রব্বানী: আসলে এত বছর এই কাজটা করতে গিয়ে পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। ব্যক্তিগত জীবনে সময় দেওয়া হয়নি। বন্ধুবান্ধব আছে, তাদেরও সময় দিতে পারিনি। একের পর এর টুর্নামেন্ট এসেছে। এখন মহিলা টিমের প্রতি সবার প্রত্যাশা বেড়েছে। সবার চাহিদা বাড়ছে। আমি মনে করি, এখন আমার বিশ্রাম দরকার। সবার চাহিদা মেটানো আসলে...।
আপনি তাহলে মনস্থির করেই ফেলেছেন?
গোলাম রব্বানী: হ্যাঁ, করে ফেলেছি। এ মাসেই আমার শেষ। আমি থাকব না আর, এটাই ফাইনাল। এ মাস পর্যন্তই থাকব।
এটা তো বড় খবর। কারণ, সবাই আপনার ব্যাপারটা আলাদাভাবে দেখে। আপনি যে জায়গায় নিজেকে নিয়েছেন...
গোলাম রব্বানী: আপনারা যে চোখে দেখেন, যারা কর্তৃপক্ষ, তারা সেভাবে দেখে কি না, সেটাই কথা।
না, ঠিক আছে সিদ্ধান্ত আপনার। আপনাকে বাইরে থেকে আমরা দেখি, ‘গোলাম রব্বানী জিন্দাবাদ’ বলেন অনেকে। অনেক সাফল্য দিয়েছেন। নারী সাফ জিতিয়েছেন প্রথমবার দেশকে। বয়সভিত্তিকে অনেক সাফল্য দিয়েছেন। আপনি আসলে প্রাপ্যটা পান কি না, সেটা আমরা বাইরে থেকে বুঝি না...।
গোলাম রব্বানী: আসলে প্রতিনিয়ত চারটার সময় ওঠা, যাওয়া (বাফুফেতে দলের কাছে), সারা দিন দলের সঙ্গে থাকা, তারপর কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করা। একটা বয়স তো আছে (জুলাইয়ে ৫৪ হবে)। একটা সময় আর চাপ নেওয়া যায় না। অতএব একটা সময় সিদ্ধান্তে আসা উচিত।
তাহলে সামনে কী করবেন। কী চিন্তা করেছেন?
গোলাম রব্বানী: সামনে ক্লাব কোচিংয়ে থাকব। আমি এখান থেকে বিদায় নিয়ে কিছুদিন বিশ্রাম নেব। তারপর অন্য কাজ।
এমনিতে বাফুফে থেকে বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো হতাশা আছে? কেউ প্রায় ১৭-১৮ লাখ পাচ্ছেন (পল স্মলি), কেউ এক লাখ...।
গোলাম রব্বানী: ওটা নিয়ে আমি কারও সঙ্গে তুলনায় যাব না। যেটা আমি বললাম, চাপ, জবাবদিহি, সবকিছু মিলিয়েই আসলে সরে যাচ্ছি।
বাফুফেতে আপনি যোগ দিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। এতগুলো বছর ছিলেন, যেতে খারাপ লাগছে না?
গোলাম রব্বানী: এত বছর কাজ করেছি, ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে খারাপ তো লাগছেই। কিন্তু কিছু করার নেই। ২০০৬ সাল থেকে বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির অধীনে আমি জেলায় জেলায় গিয়ে কাজ করতাম। বয়সভিত্তিক দল তৈরিতে কাজ করেছি সে সময়। ২০০৮ সালে শফিকুল ইসলাম ও আবু ইউসুফ ভাইয়ের অধীনে নারী দলে সহকারী কোচ ছিলাম। এরপর ২০১০ সালের দিকে মূল দায়িত্ব পেয়ে আর পেছন তাকাতে হয়নি। একটানা কাজ করে এখন বিদায় বলছি।