সাক্ষাৎকারে মোনাঙ্ক প্যাটেল

যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক জানতেন, বাংলাদেশকে হারানো সম্ভব

ভারতের গুজরাট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে বসত আজ অনেক বছর। সেই ডালাসেই যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে তাঁর হাত ধরে। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল যা নিয়ে রীতিমতো রোমাঞ্চিত; যদিও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আইসিসির সহযোগী সদস্য কোনো দেশের অধিনায়কের সঙ্গে বেমানান রকম গাম্ভীর্য তাঁর চোখেমুখে। গতকাল ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে উৎপল শুভ্রকে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় যেমন একবারের জন্যও হাসতে রাজি হলেন না। বাংলাদেশের বিপক্ষে কদিন আগে শেষ হওয়া সিরিজ নিয়ে শুরু হওয়া এই সাক্ষাৎকার পরে ছড়িয়ে গেছে তাঁর ক্যারিয়ার, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ও আরও অনেক প্রসঙ্গে।

উৎপল শুভ্র:

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের জন্য কি আপনাকে অভিনন্দন জানানো উচিত? তা না হয় জানালাম, এবার আপনার অনুভূতিটা যদি জানাতেন...

মোনাঙ্ক প্যাটেল: গত পাঁচ থেকে ছয় মাস আমরা যেমন খেলেছি, যেমন প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে ভালো কিছু করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জানতাম, আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে বাংলাদেশকে হারাতে পারব।

উৎপল শুভ্র:

এর আগে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে যেহেতু হারাতে পারেননি, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই জয়ে কি আপনিও একটু বিস্মিত হয়েছিলেন?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: একটুও না। আগেই তো বললাম, গত ছয় মাস আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলছি। আর আমরা প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবি না, নিজেদের শক্তির জায়গাটায় ভরসা রাখি। বিশ্বাস করি, নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে জয় আসবেই।

উৎপল শুভ্র:

ঠিক আছে, বুঝলাম। বাংলাদেশ পারফরম্যান্স নিয়ে বলবেন কিছু?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইউএসএতে খেলছে, কন্ডিশন সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। এটা হয়তো পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে থাকবে। তবে বাংলাদেশ ভালো দল, অনেক বছর ধরে ভালো ক্রিকেট খেলছে। তবে ক্রিকেট খেলাটাই এমন যে নির্দিষ্ট দিনে যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।

মোনাঙ্ক প্যাটেলের নেতৃত্বে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র
ইউএসএ ক্রিকেট
উৎপল শুভ্র:

আপনার ক্রিকেটীয় যাত্রা নিয়ে কিছু শুনতে চাই। গুজরাটে জন্মেছেন, খেলেছেন গুজরাটের বয়সভিত্তিক দলেও। সেখান থেকে বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অধিনায়ক। তার ওপর এমন একটা বিশ্বকাপে, যেটিকে ক্রিকেটের জন্য যুগান্তকারী বলে মনে করা হচ্ছে। এই দেশে ক্রিকেটের বিস্তারে বিশ্বকাপ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন অনেকে...

মোনাঙ্ক প্যাটেল: হ্যাঁ, এই বিশ্বকাপে আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করা হচ্ছে। আমরা তা পূরণ করতে পারব বলেও আমি আশাবাদী। আর আমার জন্য এই যাত্রাটা দারুণ রোমাঞ্চকর। দলের জন্যও। আমরা অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছি। সব সামলে গত পাঁচ বছরে আমরা যা করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলছি, এটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।

উৎপল শুভ্র:

গুজরাট ছেড়ে এই দেশে পাড়ি জমানোর সময় কি ক্রিকেট নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল, নাকি সেই জীবনটা অতীত ধরে নিয়েছিলেন?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: আমার পরিবার এখানে চলে আসায় আমিও তাদের সঙ্গে চলে এসেছিলাম। ২০১০ সালেই আমার গ্রিন কার্ড হয়ে গিয়েছিল। ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা ভাবিনি তখন। যখন সুযোগ এল, আমি তা দুহাত পেতে নিয়েছি।

ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে মোনাঙ্ক প্যাটেল
আইসিসি
উৎপল শুভ্র:

যুক্তরাষ্ট্রের এই দল তো আপনার মতো অভিবাসী সব খেলোয়াড়কে নিয়ে গড়া। আমেরিকানদের কি কোনো আগ্রহ আছে এই দল নিয়ে? প্রশ্নটা যদি এভাবে করি, যুক্তরাষ্ট্রে কি আসলেই ক্রিকেটের কোনো ভবিষ্যৎ আছে?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: ২০২০ সালে মহামারির সময় থেকে এ দেশের ক্রিকেটে বড় একটা উত্থান হয়েছে। ভালো ভালো খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছে। গত দু–তিন বছরে এ দেশের ক্রিকেট অনেকটা এগিয়ে গেছে। দেখবেন, সামনের তিন বছরে আরও অনেক এগোবে।

উৎপল শুভ্র:

আপনি কি জানেন, একসময় যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খুব জনপ্রিয় ছিল? আমি অবশ্য দেড়–দুই শ বছর আগের কথা বলছি।

মোনাঙ্ক প্যাটেল: আমি জানি, মানে শুনেছি আরকি! ক্রিকেট আবারও সেই জায়গায় যেতেই পারে। এই দেশে দক্ষিণ এশিয়ান জনগোষ্ঠীর প্রচুর মানুষ। এরাই এখানে ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখবে।

মেজর লিগ ক্রিকেটে গত বছর এমআই নিউইয়র্ক দলে খেলেছেন মোনাঙ্ক প্যাটেল
ইনস্টাগ্রাম
উৎপল শুভ্র:

গত বছর মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) শুরুটা কি এতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: অবশ্যই। এই টুর্নামেন্ট যে দর্শক-সমর্থন পেয়েছে, তা ছিল দারুণ। প্রথমবারের আয়োজনকে সবাই সফলই বলেছে। বিশ্বকাপের পরই এমএলসির দ্বিতীয় আসর। আমার মনে হয়, এবার এটি আরও জমবে।

উৎপল শুভ্র:

এই দেশে বেসবল, বাস্কেটবল, এনএফএল তারকাদের নিয়ে যে উন্মাদনা; ক্রিকেটারদের নিয়ে তা নেই জানি। তারপরও এটা তো জানতে চাইতেই পারি, আপনি বাইরে বেরোলে আপনাকে কি সবাই চিনতে পারে?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: প্রথম কথা হলো, আমি খুব একটা বাইরে বেরোই না। তবে কিছু লোক তো আমাকে চেনেই। সবাই চেনে—এটা বলব না। তবে যারা চেনার তারা চেনে।

উৎপল শুভ্র:

গুজরাটের বয়সভিত্তিক দলে একসঙ্গে খেলেছেন, এমন কেউ কি আছেন ভারতের এই বিশ্বকাপ দলে?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: অক্ষর প্যাটেল, যশপ্রীত বুমরা।

যুক্তরাষ্ট্রের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে মোনাঙ্ক প্যাটেল
ইউএসএ ক্রিকেট
উৎপল শুভ্র:

আপনার চোখে এই বিশ্বকাপে ফেবারিট কোন দল?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: আগেই তো বললাম, ফেবারিট বলে কিছু নেই। যেদিন যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।

উৎপল শুভ্র:

এটা তো অতি সরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে। খেলায় তো যেকোনো দলই জিততে পারে। তবে খেলা শুরুর আগে তো বড় দল-ছোট দল বলে একটা ব্যাপার আছে, নাকি?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: ইংল্যান্ডের ভালো সুযোগ আছে। ভারতেরও। এটা বলা কঠিন।

উৎপল শুভ্র:

ভারত তো আপনাদের গ্রুপেই। ভারতের বিপক্ষে খেলাটা কি আপনার জন্য বিশেষ একটা উপলক্ষ হবে?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: একজন ভারতীয় হিসেবে এটা তো স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো একটা ব্যাপার। আমার জন্য এটি স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো বড় একটা অর্জন হবে।

উৎপল শুভ্র:

আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে?

মোনাঙ্ক প্যাটেল: রোহিত শর্মা।

মোনাঙ্ক প্যাটেলের প্রিয় ক্রিকেটার ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আগামী ১২ জুন রোহিতের সঙ্গে টস করতে নামবেন মোনাঙ্ক
আইসিসি
উৎপল শুভ্র:

ওয়াও, তার মানে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আপনার প্রিয় ক্রিকেটারের সঙ্গে আপনি টস করতে নামবেন...

মোনাঙ্ক: আমি মনে মনে ওই মুহূর্তটার স্বপ্ন দেখে এসেছি।