বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের জন্য কি আপনাকে অভিনন্দন জানানো উচিত? তা না হয় জানালাম, এবার আপনার অনুভূতিটা যদি জানাতেন...
মোনাঙ্ক প্যাটেল: গত পাঁচ থেকে ছয় মাস আমরা যেমন খেলেছি, যেমন প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে ভালো কিছু করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জানতাম, আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে বাংলাদেশকে হারাতে পারব।
এর আগে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে যেহেতু হারাতে পারেননি, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই জয়ে কি আপনিও একটু বিস্মিত হয়েছিলেন?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: একটুও না। আগেই তো বললাম, গত ছয় মাস আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলছি। আর আমরা প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবি না, নিজেদের শক্তির জায়গাটায় ভরসা রাখি। বিশ্বাস করি, নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে জয় আসবেই।
ঠিক আছে, বুঝলাম। বাংলাদেশ পারফরম্যান্স নিয়ে বলবেন কিছু?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইউএসএতে খেলছে, কন্ডিশন সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। এটা হয়তো পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে থাকবে। তবে বাংলাদেশ ভালো দল, অনেক বছর ধরে ভালো ক্রিকেট খেলছে। তবে ক্রিকেট খেলাটাই এমন যে নির্দিষ্ট দিনে যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।
আপনার ক্রিকেটীয় যাত্রা নিয়ে কিছু শুনতে চাই। গুজরাটে জন্মেছেন, খেলেছেন গুজরাটের বয়সভিত্তিক দলেও। সেখান থেকে বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অধিনায়ক। তার ওপর এমন একটা বিশ্বকাপে, যেটিকে ক্রিকেটের জন্য যুগান্তকারী বলে মনে করা হচ্ছে। এই দেশে ক্রিকেটের বিস্তারে বিশ্বকাপ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন অনেকে...
মোনাঙ্ক প্যাটেল: হ্যাঁ, এই বিশ্বকাপে আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করা হচ্ছে। আমরা তা পূরণ করতে পারব বলেও আমি আশাবাদী। আর আমার জন্য এই যাত্রাটা দারুণ রোমাঞ্চকর। দলের জন্যও। আমরা অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছি। সব সামলে গত পাঁচ বছরে আমরা যা করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলছি, এটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।
গুজরাট ছেড়ে এই দেশে পাড়ি জমানোর সময় কি ক্রিকেট নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল, নাকি সেই জীবনটা অতীত ধরে নিয়েছিলেন?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: আমার পরিবার এখানে চলে আসায় আমিও তাদের সঙ্গে চলে এসেছিলাম। ২০১০ সালেই আমার গ্রিন কার্ড হয়ে গিয়েছিল। ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা ভাবিনি তখন। যখন সুযোগ এল, আমি তা দুহাত পেতে নিয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই দল তো আপনার মতো অভিবাসী সব খেলোয়াড়কে নিয়ে গড়া। আমেরিকানদের কি কোনো আগ্রহ আছে এই দল নিয়ে? প্রশ্নটা যদি এভাবে করি, যুক্তরাষ্ট্রে কি আসলেই ক্রিকেটের কোনো ভবিষ্যৎ আছে?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: ২০২০ সালে মহামারির সময় থেকে এ দেশের ক্রিকেটে বড় একটা উত্থান হয়েছে। ভালো ভালো খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছে। গত দু–তিন বছরে এ দেশের ক্রিকেট অনেকটা এগিয়ে গেছে। দেখবেন, সামনের তিন বছরে আরও অনেক এগোবে।
আপনি কি জানেন, একসময় যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খুব জনপ্রিয় ছিল? আমি অবশ্য দেড়–দুই শ বছর আগের কথা বলছি।
মোনাঙ্ক প্যাটেল: আমি জানি, মানে শুনেছি আরকি! ক্রিকেট আবারও সেই জায়গায় যেতেই পারে। এই দেশে দক্ষিণ এশিয়ান জনগোষ্ঠীর প্রচুর মানুষ। এরাই এখানে ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখবে।
গত বছর মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) শুরুটা কি এতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: অবশ্যই। এই টুর্নামেন্ট যে দর্শক-সমর্থন পেয়েছে, তা ছিল দারুণ। প্রথমবারের আয়োজনকে সবাই সফলই বলেছে। বিশ্বকাপের পরই এমএলসির দ্বিতীয় আসর। আমার মনে হয়, এবার এটি আরও জমবে।
এই দেশে বেসবল, বাস্কেটবল, এনএফএল তারকাদের নিয়ে যে উন্মাদনা; ক্রিকেটারদের নিয়ে তা নেই জানি। তারপরও এটা তো জানতে চাইতেই পারি, আপনি বাইরে বেরোলে আপনাকে কি সবাই চিনতে পারে?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: প্রথম কথা হলো, আমি খুব একটা বাইরে বেরোই না। তবে কিছু লোক তো আমাকে চেনেই। সবাই চেনে—এটা বলব না। তবে যারা চেনার তারা চেনে।
গুজরাটের বয়সভিত্তিক দলে একসঙ্গে খেলেছেন, এমন কেউ কি আছেন ভারতের এই বিশ্বকাপ দলে?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: অক্ষর প্যাটেল, যশপ্রীত বুমরা।
আপনার চোখে এই বিশ্বকাপে ফেবারিট কোন দল?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: আগেই তো বললাম, ফেবারিট বলে কিছু নেই। যেদিন যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।
এটা তো অতি সরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে। খেলায় তো যেকোনো দলই জিততে পারে। তবে খেলা শুরুর আগে তো বড় দল-ছোট দল বলে একটা ব্যাপার আছে, নাকি?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: ইংল্যান্ডের ভালো সুযোগ আছে। ভারতেরও। এটা বলা কঠিন।
ভারত তো আপনাদের গ্রুপেই। ভারতের বিপক্ষে খেলাটা কি আপনার জন্য বিশেষ একটা উপলক্ষ হবে?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: একজন ভারতীয় হিসেবে এটা তো স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো একটা ব্যাপার। আমার জন্য এটি স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো বড় একটা অর্জন হবে।
আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে?
মোনাঙ্ক প্যাটেল: রোহিত শর্মা।
ওয়াও, তার মানে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আপনার প্রিয় ক্রিকেটারের সঙ্গে আপনি টস করতে নামবেন...
মোনাঙ্ক: আমি মনে মনে ওই মুহূর্তটার স্বপ্ন দেখে এসেছি।