টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারত সিরিজ দিয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন। মাঝের সময়টা কীভাবে কাটালেন?
তানজিম হাসান: বিশ্বকাপের পর লম্বা বিরতি ছিল। প্রথম কিছুদিন বিশ্রাম নিয়েছি, ক্রিকেট নিয়ে ভেবেছি। এখন আমার সব মনোযোগ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। কীভাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা যায়, এটা নিয়েই চিন্তা করেছি। ভারতের বিপক্ষে খেলাটাই সামনে, তবে পরবর্তী বড় আসর তো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভালো করা।
দেশে অনেক দিন আলাদা করে টি-টোয়েন্টির অনুশীলন হলো। নিজেদের কতটা প্রস্তুত মনে করছেন?
তানজিম: টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি হবে দিল্লি ও হায়দরাবাদে। গোয়ালিয়র নতুন আমাদের জন্য। তবে দিল্লিতে আমি গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেছি। হায়দরাবাদে আইপিএলের অনেক ম্যাচ দেখেছি। দুটি মাঠই অনেক ছোট। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি।
ভারতে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা এই সিরিজে কতটা সাহায্য করবে?
তানজিম: এখানে আগেও খেলায় কিছুটা সাহায্য পাব। তবে ফল নিয়ে না ভেবে আমি প্রক্রিয়াটা নিয়ে ভাবতে চাই। নতুন বল হাতে পেলে চেষ্টা করব উইকেট এনে দিতে। টি-টোয়েন্টি মানেই উইকেটের খেলা। মানুষ বলে চার-ছক্কার খেলা, তবে আমি বলি এটা আসলে উইকেটের খেলা। যত দ্রুত উইকেট নেবেন, জয় তত সুনিশ্চিত হবে।
ভারতীয় দলের নির্দিষ্ট কাউকে আউট করতে চান?
তানজিম: সেভাবে ভাবছি না। ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য নেই। দলের লক্ষ্যটাই আসল।
আগ্রাসন আপনার বোলিংয়ের বিরাট অংশ। এটা কি সহজাত, নাকি ম্যাচ খেলতে নামলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোশ পরে নামেন?
তানজিম: ছোটবেলা থেকেই ডেল স্টেইনের বোলিং খুব ভালো লাগত আমার। কারণ একটাই—তাঁর আগ্রাসন। খেলার মধ্যে সবাই এটাই তো দেখতে চায়। এই জিনিসটাই খেলার মধ্যে দরকার। আমি একজনের বিপক্ষে খেলছি। সে আমার প্রতিপক্ষ, শত্রু নয়। আমি ওর সঙ্গে খারাপ আচরণ করব না, আবার কাউকে ছাড়ও দেব না। আমি শতভাগ দিয়ে দেব। আর আমার ভেতর যদি ওই অনুভূতিটা না আসে, তাহলে আমি উজ্জীবিত হই না। ওই অনুভূতিটা এলে উজ্জীবিত হই। এটা সহজাত। হয়তো স্টেইনকে দেখতে দেখতে হয়ে গেছে। আমার আলাদা করে এ জন্য চেষ্টা করা লাগে না, অভিনয় করতে হয় না। মাঠের দড়ির ভেতর ঢুকলে এমনিতেই হয়ে যায়।
কিন্তু আপনি তো মাঠের বাইরে একদমই শান্তশিষ্ট...
তানজিম: আমি হার একদমই পছন্দ করি না। আমি শতভাগ দেব, তাহলে আমি নিজেকে বলতে পারব যে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। মাঠ থেকে বেরিয়ে কোনো আক্ষেপ রাখা যাবে না।
জাতীয় দলে এসে নতুন বলে দুজনের সঙ্গে বোলিং করেছেন। একজন তাসকিন আহমেদ, আরেকজন শরীফুল ইসলাম। তাঁদের সঙ্গে বোলিংয়ের ফাঁকে কি কথা হয়?
তানজিম: শরীফুল ভাইয়েরটাই আগে বলি। আমরা দুজন একসঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯–এ ছিলাম। কিন্তু তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক আমার আগে। উনি আমাকে সব সময় বলতেন, আমরা দুজনই একদিন জাতীয় দলের হয়ে বোলিং শুরু করব। এখন সেটাই হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে আমার ভাবনা মিলে যায় সহজেই। আর তাসকিন ভাই খুব ভালো তথ্য দিতে পারেন। ১ ওভার বল করার পরই বলে ফেলতে পারেন, উইকেটে ওবল সিম ভালো, নাকি সিমআপ, একেবারে সঙ্গে সঙ্গে বলে দেন।
বিশ্বকাপে মাঝের ওভারে পিচ থেকে আপনার বলের গতি বাড়তে দেখা গেছে কিছু ম্যাচে। স্পিডমিটারে দেখিয়েছে ঘণ্টায় ১৩৭ কিলোমিটার, কিন্তু ব্যাটসম্যানের প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়েছে বলটা আরও বেশি গতির...
তানজিম: আমি অফ দ্য পিচ কুইক বোলিং করার চেষ্টা করেছি। যে কারণে আমি অনেক ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলতে পেরেছি। একই লেংথের বল, প্রায় একই পেস...অন্যরা মার খাচ্ছে। কিন্তু আমাকে ঠেকাচ্ছে। বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে ম্যাচে এটা মনে হয়েছে। সে ম্যাচে ওরা পাওয়ারপ্লেতে সবাইকে মেরেছে, আমাকে মারতে পারেনি। তখন এটার গুরুত্ব বুঝেছি। বুমরা অনেক ভালো করেন এ বলটা।
আর ডেথ বোলিং?
তানজিম: রঙ্গনা হেরাথ (বাংলাদেশের সাবেক স্পিন বোলিং কোচ) একটা কথা বলেছিলেন গত বছরের বিশ্বকাপে। গত ২০ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বাভাবিক স্টক বলে ৮৫ ভাগ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন। একেবারেই এক্সট্রা অর্ডিনারি বলে আউট নাকি মাত্র ৫ ভাগ। তখন দেখলাম, আসলেই তো! স্টক বল, টপ অব অফ স্টাম্প লাইন-লেংথ, এটা কি তিন সংস্করণেই একই থাকে? ওই জায়গা থেকেই বলের কাজ বাড়াতে হবে।