পাকিস্তানে যাওয়ার আগেই গতি দেখানোর কথা বলে গিয়েছিলেন নাহিদ রানা

বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে গতিময় বোলার কে? প্রশ্নের উত্তরটা সহজ—নাহিদ রানা। রাজশাহী বিভাগের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে গতির ঝড় তুলেই প্রথম নজর কেড়েছিলেন সবার। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেটে টেস্ট অভিষেক হয়ে যাওয়াতেও সেই গতির সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে। এরপর থেকে চোট-আঘাতের সঙ্গে লড়াই করা রানা এখন তাকিয়ে আছেন আগামী মাসে পাকিস্তান সফরের দিকে। মুখিয়ে আছেন ফাস্ট বোলারের তীর্থভূমি পাকিস্তানে গতির ঝড় তোলার জন্য। বাংলাদেশ টাইগার্স ক্যাম্পে থাকা এই পেসার চট্টগ্রাম থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন পাকিস্তান সফর নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা।

পাকিস্তান সিরিজের দলই তখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে সেই দলে নাহিদ রানার থাকা নিশ্চিতই ছিল। প্রথম আলোতে নাহিদ একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তখন। সেখানেই বলেছিলেন, পাকিস্তানে গিয়ে নিজের গতি দেখানোর কথা। নাহিদ কথা রেখেছেন। আজ গতি দিয়েই ধসিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের মিডল অর্ডার।সাক্ষাৎকারটা প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোর ছাপা সংস্করনে, গত ২১ জুলাই। সেই সময় দেশের ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় অনলাইনে প্রকাশ করা যায়নি। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি অনলাইন সংস্করণে আজ পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
প্রথম আলো:

চোটের কারণে কিছুদিন অনুশীলনের বাইরে ছিলেন। এখন কেমন আছেন?

নাহিদ রানা: চোট থেকে ফেরার পর ভালো বোধ করছি। ঈদের আগে অনুশীলনের সময় চোটে পড়েছিলাম। এরপর চার সপ্তাহ লেগেছে অনুশীলনে ফিরতে। আস্তে আস্তে পুরোনো ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছি।

গতি দিয়ে নজর কেড়েছেন নাহিদ
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

এইচপি ও বাংলাদেশ টাইগার্সের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও তো খেলেছেন, তাই না?

রানা: হ্যাঁ, একটা ওয়ানডে আর একটা টি-টোয়েন্টি খেলেছি। যদিও টানা লাল বলের অনুশীলনের মধ্যে ছিলাম। এর মধ্যে সাদা বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে।

রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন নাহিদ
এএফপি
প্রথম আলো:

লাল বলের কথা যখন এল, সামনে তো পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। আপনারা এই সিরিজের জন্যই কয়েক মাস ধরে আলাদাভাবে অনুশীলন করছেন। সিরিজটি নিয়ে কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

রানা: একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। এখানে কোচ যাঁরা আছেন, তাঁরা আমাদের সাহায্য করছে। সেখানে কেমন কন্ডিশন হতে পারে, সেটা মাথায় রেখে সে অনুযায়ী অনুশীলন করছি।

প্রথম আলো:

টেস্ট দুটি করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে, দুটি ভেন্যুর উইকেটই খুব ব্যাটিং সহায়ক। অনেক রান হয়।

রানা: হ্যাঁ, শুনেছি উইকেট খুব ফ্ল্যাট থাকে। আমাদের লাইন-লেংথ বজায় রেখে বোলিং করতে হবে।

বাংলাদেশের পেস আক্রমণে তারকা হয়ে উঠছেন নাহিদ
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

আপনি গতিময় বোলিংয়ের জন্য পরিচিত। পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিং ইতিহাস তো জানেনই। এবার সেই দেশেই টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

রানা: হ্যাঁ, আমিও চেষ্টা করব গতি দেখানোর। যদি সুযোগ আসে, তাহলে আমরাও যে পারি, সেটা দেখাতে চাইব। সবাই জানে যে আমাদের মূল শক্তি স্পিন। সেটা থেকে আমরা সম্প্রতি কিছুটা বের হয়ে আসতে পেরেছি। স্পিনের সঙ্গে পেসাররাও ধীরে ধীরে ভালো করা শুরু করছে। সামনে অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে, দেশে আর দেশের বাইরে। আমরা চাইব, এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমাদের পেস বোলিংয়ে যে উন্নতি হয়েছে, সেটা দেখানোর।

প্রথম আলো:

পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গতিময় বোলারদের একজন। একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লির সঙ্গে গতির লড়াই হয়েছে তাঁর। দুজনের মধ্যে কাকে আপনার পছন্দ?

রানা: দুজনকেই। দুজনই ঘণ্টায় ১০০ মাইলের আশপাশে বল করতেন। দর্শক হিসেবে যেটা খুবই রোমাঞ্চকর।

প্রথম আলো:

এই পাকিস্তান দলে আপনার প্রিয় বোলার কে?

রানা: নাসিম শাহর বোলিং খুব ভালো লাগে।

নাসিম শাহর বোলিং ভালো লাগে নাহিদের
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

তাঁর তো বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলার কথা।

রানা: হ্যাঁ, খেলার সম্ভাবনা আছে। দেখা হলে কথা বলার ইচ্ছা আছে।

প্রথম আলো:

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেট টেস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক আপনার। চোটের কারণে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে আর খেলা হয়নি বলে এখন পর্যন্ত ওই একটাই টেস্ট। কী শিখেছেন ওই টেস্ট থেকে?

রানা: আমার প্রথম টেস্টে ২ ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট পেয়েছিলাম; কিন্তু লাইন-লেংথ নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। এখন সেটা নিয়েই কাজ করছি। সামনের সিরিজটায় সেই ভুলগুলো যেন কমিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টা করব।

প্রথম আলো:

শুনেছি ব্যাটিং নিয়েও আলাদা করে সময় দিচ্ছেন?

রানা: হ্যাঁ, প্রতিদিন অনুশীলনের একটা সময় ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছি। লোয়ার অর্ডারে যদি কিছু বল আমরা টিকে থাকতে পারি, তাহলে দলের জন্য ভালো। আমাদের দলের প্রায় সব বোলারই তা করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাকফুট ডিফেন্স, বাউন্স সামলানোর কাজ করছি। পাশাপাশি ফ্রন্ট ফুট ডিফেন্স যেন আরও শক্ত হয়, সে চেষ্টাও করছি।