লিভারপুল কিংবদন্তি ইয়ান রাশ
‘মেসি মহাতারকা, তবে ম্যারাডোনাকে লাথির পর লাথি খেয়ে খেলতে হয়েছে’
লিভারপুলের সোনালী সময়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল নামগুলোর একটি ইয়ান রাশ। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত নয় মৌসুমে ৫টি লিগ ও দুটি ইউরোপিয়ান কাপ জয়ে বড় অবদান তাঁর। লিভারপুলের জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড তো এখনো অম্লান। প্রিয় ক্লাবের দূত হয়ে এখন দেশে দেশে ঘুরে বেড়ান। বাংলাদেশে এসেছিলেন একদিনের সফরে। গত শুক্রবার বিকালে ঢাকার একটি হোটেলে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে লিভারপুলের সোনালি অতীত, বর্তমান সময় এবং ডিয়েগো ম্যারাডোনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন লিভারপুল কিংবদন্তি ইয়ান রাশ।
উৎপল শুভ্র: বাংলাদেশে স্বাগত। এখানে আসার আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটা জানতেন?
ইয়ান রাশ: খুব বেশি জানতাম না। আমি পাকিস্তানে গেছি, ভারতে গেছি, তবে বাংলাদেশে এবারই প্রথম। আসলে এটা সবার জন্যই একটা জানাশোনার সুযোগ, আমি এরই মধ্যে অনেক কিছু জেনেছিও। পাকিস্তান ও ভারতের মতো এখানে চার্টার্ড (স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক) কী কাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল ভালোবাসে, তবে আমি এটা জেনে মুগ্ধ হয়েছি যে, ওরা লিভারপুল ক্লাবকেও ভালোবাসে। সুতরাং বাংলাদেশে এটা আমার প্রথম সফর হলেও শেষ হয়ে থাকবে না।
শুভ্র: মাত্র এক দিনে হয়তো বেশি বোঝা যায় না। তারপরও, বাংলাদেশে আসার আগে আপনি কী ভেবেছিলেন দেশটা নিয়ে এবং আসার পর এই এক দিনে কী দেখলেন?
রাশ: আমার মনে হয়েছে, এখানকার মানুষ খুব আন্তরিক। এ জন্যই আমি যখন হোটেলে গেলাম, দেখলাম ওয়েটার, এমনকি যারা সার্ভ করছে, তারা আমার জন্য এত বেশি করছে। যখন আমি ফিরে যাব, স্বাভাবিকভাবেই এটা মনে থাকবে যে, বাংলাদেশের মানুষ কতটা আন্তরিক।
শুভ্র: আপনি সর্বশেষ খেলেছেন ২০০০ সালে, সিডনি অলিম্পিকে। তবে আপনার সেরা সময়টা ছিল আরও প্রায় ৩০–৪০ বছর আগে। তারপরও মানুষ আপনাকে মনে রেখেছে। আপনি তারকা, এখনো লিভারপুলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কেমন লাগে এটা?
রাশ: আপনি যখন খেলা ছাড়বেন, প্রথম চার-পাঁচ মাস খুব কঠিন। তারপর আপনার নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমি কোচিং করিয়েছি, লিভারপুলের নির্বাহী ছিলাম, এটা এক দিনে হয়ে যায়নি। এর জন্যও পরিশ্রম করতে হয়েছে। তারপর আমি লিভারপুল ক্লাবের দূত হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ শুরু করলাম। আমি দেখলাম, বিশেষ করে এই অঞ্চলে মানুষ ফুটবল কতটা ভালোবাসে। এটা অবিশ্বাস্য এবং একই সঙ্গে আমার জন্য একটা শিক্ষাও। আমাকে নিয়ে একটা প্রামাণ্যচিত্র আসছে কিছুদিন পর, আমি সেখানে বলেছি, যখন আমি দেখি বাচ্চারা আমার অটোগ্রাফের জন্য আসে, অবিশ্বাস্য লাগে। কারণ, আমি যখন খেলতাম, সেই সময় তো আমার কালো চুল ছিল, গোঁফ ছিল। এখন তো আমি অন্যরকম। যেহেতু আমি লিভারপুলের সর্বোচ্চ গোলদাতা, মো সালাহকে নিয়ে অনেক কথা বলতে হয়েছে। একটা সময় তো সবাই বলা শুরু করেছিল, সে হয়তো আমার রেকর্ড ভেঙে দেবে। তবে তাকে যদি রেকর্ডটা ভাঙতে হয়, আরও কয়েক বছর দারুণ ফুটবল খেলতে হবে।
শুভ্র: এই রেকর্ডটির ব্যাপারে আপনি কি খুব পজেসিভ, মানে রেকর্ডটা হারিয়ে ফেলার কথা ভাবতে খারাপ লাগে?
রাশ: আমার মনে হয়, রেকর্ড তো হয়ই ভাঙার জন্য। কেউ যদি সেই রেকর্ড ভাঙে এবং লিভারপুল ক্লাব সফল হয়, ভালোই তো। খারাপ হবে, যদি কেউ আপনার রেকর্ড ভাঙে, কিন্তু ক্লাব কিছুই না জেতে। আপনাকে ট্রফি জিততে হবে। তবে হ্যাঁ, আমি আমার রেকর্ড নিয়ে গর্বিত। তবে রেকর্ড কখনো না কখনো ভাঙবেই। লিভারপুল যদি সাফল্য পায়, সেটা কে ভাঙল, তাতে কিছু যায় আসে না।
শুভ্র: আমার মনে হয়, আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। কারণ, মো সালাহ আপনার আসল রেকর্ডটা ভাঙতে পারবেন না। ৯ বছরে ৫টি লিগ শিরোপা, ২টি ইউরোপিয়ান কাপ...
রাশ: কে বলতে পারে! হ্যাঁ, তবে আমার মনে হয়, আমি ভাগ্যবান ছিলাম। খুব বেশি চোটে পড়তে হয়নি। সালাহও আসলে খুব বেশি চোটে পড়েনি। সে ফিট থাকছে বেশির ভাগ সময়, তবে তার খেলার ধরন (আমার চেয়ে) কিছুটা আলাদা। এখন তো ও ওয়াইডে খেলে। তাই আমার মনে হয়, সে এত গোল পাবে না, অনেক গোল করাবে। সে দু-এক বছর ধরে অনেক বেশি দলগত খেলায় যুক্ত থাকে। যত গোল করত আগে, এখন তত গোল করাচ্ছে।
শুভ্র: লিভারপুলের সেই সুবর্ণ সময়টার কথা যদি বলি। আপনি যখন খেলতেন, আমার মনে হয়, ইউরোপে এমন কোনো দল ছিল না, যারা লিভারপুলকে ভয় পেত না। রহস্যটা কী ছিল?
রাশ: টিম স্পিরিট। আমরা মাঠেই নামতাম এটা মনে রেখে যে, আমাদের জিততেই হবে। আমাদের ড্রেসিংরুমে টিম স্পিরিট ছিল অসাধারণ। ফুটবলে খেলোয়াড়দের খুশি রাখা একটা বড় কাজ কোচের। যারা খেলতে পারছে না, কোচের কাজ তাদেরও খুশি রাখা। আমাদের কোচ যাঁরা ছিলেন—বব পেইসলি, জো ফ্যাগান, কেনি ডালগ্লিশ—যেসব খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পেত না, তাঁরা তাদেরও খুশিতে রাখতে পারতেন। এ জন্যই আমাদের ড্রেসিংরুমে টিম স্পিরিট দুর্দান্ত ছিল। আমার যখন একটা বাজে ম্যাচ যেত, কেনি ডালগ্লিশ আমাকে সাহায্য করতেন। এটা পারস্পরিক ছিল। দল হয়ে খেলার এটাই মূলমন্ত্র।
শুভ্র: ডালগ্লিশের কথা আমিই তুলতাম। আপনারা একসঙ্গে খেলেছেন, সেই সময়ের লিভারপুলের কথা বললে আমার প্রথমে আপনাদের দুজনের নামই মনে পড়ে। ডালগ্লিশ কোচ কাম প্লেয়ার হয়ে গেলেন এক সময়, পরে পুরোপুরি কোচ। সতীর্থ থেকে তিনি কোচ হওয়ার পর আপনাদের সম্পর্কটা কতটা বদলেছে?
রাশ: সে যখন আমাদের কোচ হলো, তখনো আমরা তাকে কেনি ডাকতাম। কোচকে কিন্তু আপনি নাম ধরে ডাকতে পারেন না, কারণ, তিনি আপনার বস। তবে কেনির জন্য এটা কোনো সমস্যা ছিল না। সে মাঠে হয়তো টিমমেট, তবে মাঠের বাইরে যদি কঠোর হওয়ার দরকার হতো, সেটা সে হতে পারত। তার অফিসে ডেকে যতটা কড়া কথা বলা দরকার, সেটা বলত। সে খুব শক্ত চরিত্রের কোচ ছিল। আবেগকে প্রাধান্য দিত না। সেটা করতে গেলে তো আপনি চাকরি হারাবেন। আমার মনে আছে, ১৯৮৬–তে মৌসুমের শেষ কয়েকটা ম্যাচে কেনি নিজেই খেলল, আমাদের তখন পল ওয়ালশ ছিল, যে কেনির জায়গায় খেলত। পল কোনো ভুল করেনি, একটুও না। ওই মৌসুমে মনে হয় ২০টার মতো গোল করেছিল। কিন্তু কেনি হঠাৎ বলল, পলের জায়গায় সে খেলবে। পল কিন্তু কিছুই বলেনি। কারণ, কেনি জানত, কখন তার খেলা উচিত, কখন উচিত নয়। আমার মনে হয়, আমরা যে ওই বছর ডাবল জিতলাম, সেটার বড় কারণ এটাই।
শুভ্র: বব পেইসলির কথা বলছিলেন। পেইসলি তো শুধু লিভারপুলের সীমানা ছাড়িয়ে পেইসলি তো ফুটবল ইতিহাসের সেরা কোচদের একজন। নয় মৌসুমে ২০টি ট্রফি জিতে এখনো লিভারপুলের সফলতম কোচ। কোথায় ছিল তাঁর বিশেষত্ব?
রাশ: হ্যাঁ, বব লিভারপুলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচ। তাঁর কোচিংয়ের ধরন ছিল আলাদা। আমাদের বিল শ্যাঙ্কলি ছিলেন, এখনকার ইয়ুর্গেন ক্লপের মতো, অনেক কথা বলতেন। বব পেইসলি কখনো এটা করতেন না। বৃহস্পতিবার–শুক্রবার সকালের মধ্যে তাঁর সব কথা শেষ। ম্যাচের দিন তিনটার পর তাঁর আর কোনো কথা নেই। এখন অনেক কিছু বদলে গেছে। শ্যাঙ্কলি অনেক কথা বলতেন, ইয়ুর্গেন ক্লপও বলে। বব জানতেন, কখন কাকে কীভাবে বলতে হবে। যেটা আলাদা করে বললে হয়, সেটা সবার সামনে না বলে আলাদা ডেকেই বলতেন।
তাঁর খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনা খুব ভালো ছিল, দারুণ কিছু কোচিং স্টাফ ছিল তাঁর। তাঁরা সবাই জানতেন, তাঁদের কী কাজ। তিনি নিজে প্রতিপক্ষের ভিতর-বাহির সব জেনেবুঝে নিতেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে প্রতিপক্ষ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করতেন না। তিনি মনে করতেন, প্রতিপক্ষ নিয়ে বেশি কথা বললে আমরা দুশ্চিন্তা শুরু করতে পারি। তাঁর কথা ছিল, ‘তোমরা যদি তোমাদের সেরাটা খেলতে পার, কেউ তোমাদের হারাতে পারবে না।’ এটাই ছিলেন বব পেইসলি।
আমাকে যদি কেউ ১৯৯০ সালে বলত, ৩০ বছর লাগবে পরের লিগ শিরোপা জিততে (লিভারপুলের), আমি হেসে উড়িয়ে দিতাম। আসলে খেলোয়াড়–সমর্থকদের জন্য এটা বেশি হতাশার ছিল।
শুভ্র: লিভারপুলের আরেক কিংবদন্তি কোচ বিল শ্যাঙ্কলির সেই বিখ্যাত বাণী, ‘ফুটবল শুধু জীবন–মরণের ব্যাপার নয়, এটা এর চেয়ে বেশি কিছু’—তিনি আসলেই এটা বলেছিলেন? নাকি রটে যাওয়ার পর সায় দিয়েছেন?
রাশ: শ্যাঙ্কলির সঙ্গে আমার মাত্র একবার দেখা হয়েছে। তাই আমি জানি না, কথাটা তিনি সত্যিই বলেছেন কি না। তবে তখনকার দিনে এটা বলা সম্ভব ছিল, এখন হয়তো কেউ বলবে না। এখন ফুটবল বদলে গেছে। আমার মতে, বিল শ্যাঙ্কলি লিভারপুলের ভিত গড়ে দিয়েছেন, বব পেইসলি সেটাকে অন্য ধাপে নিয়ে গেছেন। সাফল্য পেতে হলে আগে আপনাকে ভিত গড়তে হয়। বিল শ্যাঙ্কলি আমাদের প্রথম বিভাগে তুলেছেন, সমর্থক বাড়িয়েছেন। তিনি জানতেন, সমর্থকেরা হতে পারে দ্বাদশ খেলোয়াড়। এ জন্যই বিল শ্যাঙ্কলি বিশেষ।
শুভ্র: আপনাদের সেই সুবর্ণ সময়ের পর আবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে লিভারপুলের ৩০ বছর লেগেছে। মাঝের এই সময়টা আপনার জন্য কতটা হতাশাজনক ছিল? ৩০ বছর পর যখন লিভারপুল আবার চ্যাম্পিয়ন হলো, সেই আনন্দটাই বা কেমন ছিল?
রাশ: আমাকে যদি কেউ ১৯৯০ সালে বলত, ৩০ বছর লাগবে পরের লিগ শিরোপা জিততে, আমি হেসে উড়িয়ে দিতাম। আসলে খেলোয়াড়–সমর্থকদের জন্যই এটা বেশি হতাশার ছিল। বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তখন চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুরু করল। লিভারপুল-ইউনাইটেডের দ্বৈরথ এমন ছিল যে, ইউনাইটেডকে লিগ জিততে দেখা আমাদের জন্য খুব কষ্টের ছিল। আমাদের অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ই তো লিগ না জিতে বিদায় নিয়েছে।
শুভ্র: যেমন স্টিভেন জেরার্ড, সেটাও নিজে পিছলে পড়ায়...
রাশ: হ্যাঁ, অনেকে। অবশেষে আমরা সেটা জিতেছি। ওরা যখন অ্যানফিল্ডে ট্রফিটা পেল, আমি দেখছিলাম। অনেককে মিস করেছি। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা জিতেছি, এখান থেকে এগিয়ে যেতে হবে।
শুভ্র: আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের কথা যদি বলি, সবচেয়ে বড় আক্ষেপ নিশ্চয়ই এটা যে, কখনো বিশ্বকাপ বা ইউরো খেলতে পারেননি। জর্জ বেস্ট যেমন কখনো বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি...
রাশ: হ্যাঁ, লোকে আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আক্ষেপের কথা জিজ্ঞেস করলে, এটার কথাই আসে। শুধু জর্জ বেস্ট নয়, রায়ান গিগস–মার্ক হিউজসহ আরও কিছু নামও আছে। এখনকার কথা যদি বলেন, আমরা তিনবার (বিশ্বকাপ ও ইউরো) খেলেছি। আমাদের সময় (বাছাই থেকে) শুধু চ্যাম্পিয়ন দল জায়গা পেত। এখন তো বেশি দল যেতে পারে। আমাদের সময় আমরা একবার জার্মানির গ্রুপে পড়ে গেলাম। আসলে ভাগ্য সব সময় সঙ্গে ছিল না আমাদের। আমরা কিন্তু জার্মানির সঙ্গে জিতেছিলাম, তারপর ফিনল্যান্ড না আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে না হেরে যেন বাদ পড়ে গেলাম।
শুভ্র: আপনি খেলা ছাড়ার পর এত বছরে ফুটবল কতটা বদলেছে?
রাশ: আমার মনে হয়, বসম্যান রুল হওয়ার পর থেকে অনেক বদলে গেছে, প্রিমিয়ার লিগ হওয়ার পরও বদলেছে। একটা সময় ছিল ব্রিটিশ ফুটবল, এখন আসলে এটা ইউরোপিয়ান ফুটবল হয়ে গেছে। পার্থক্য হচ্ছে, এখন আপনাকে কেউ লাথি মারতে পারবে না। আপনি লাথি খাবেন না বেশি। আমার তো এখন খেলতে পারলে ভালো লাগত। এখন মাঠ একেবারে নিখুঁত। বুটগুলো অনেক হালকা, বল অনেক হালকা। এ কারণেই এখন খেলার গতিও বেড়েছে। আমাদের সময় ছিল ব্রিটিশ ফুটবল, এখন এত বেশি ইউরোপিয়ান খেলোয়াড় আসছে, খেলাটা অনেক বেশি ইউরোপিয়ান হয়ে গেছে। খেলাটা অনেক বেশি দলগত হয়ে গেছে।
শুভ্র: আপনার সেরা সময়টা মানে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০, ওই দশকটাই তো ম্যারাডোনার ছিল। তাঁর সম্পর্কে তো নতুন কিছু বলার নেই। তারপরও ফুটবলারের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি ম্যারাডোনা সম্পর্কে বলতে বলি...
রাশ: ও অবিশ্বাস্য। ১৯৮৪ সালে সে নাপোলিতে গেল। আমি তখন লিভারপুলে। নাপোলি আমাকেও নিতে চেয়েছিল। আমারও ম্যারাডোনার সঙ্গে নাপোলিতে খেলতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু লিভারপুল ‘না’ বলে দিল। ফলে ওরা ব্রাজিল থেকে কারেকাকে নিয়ে এল। নাপোলি লিগ জিতল। আসলে ম্যারাডোনাই নাপোলিকে লিগ জিতিয়েছিল। তারপর ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ। আমি মনে করি, নাপোলিকে ওই লিগ, তারপর আর্জেন্টিনাকে ওই বিশ্বকাপ, এটা খুব বেশি মানুষের পক্ষে জেতানো সম্ভব নয়।
শুভ্র: মেসি না ম্যারাডোনা?
রাশ: আমার কাছে ম্যারাডোনা।
শুভ্র: কারণ?
রাশ: দেখুন, মেসি মহাতারকা। কিন্তু ম্যারাডোনাকে সব সময় লাথি খেয়ে খেয়ে খেলতে হয়েছে। আমি তারপরও তাকে অবিশ্বাস্য সব জিনিস করতে দেখেছি মাঠে। হ্যাঁ, মেসিও এটা করতে পারে। কিন্তু ম্যারাডোনার মতো লাথি তো ওকে খেতে হয়নি। মেসিকে তো কেউ লাথি মারে না। আমার মনে হয়, আসলে এটা যুগের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তারা দুজনই অসাধারণ। মেসিও এখন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে। তবে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় সে স্পেনে খেলেছে। ওকে প্রিমিয়ার লিগের কোনো দলের হয়ে খেলতে দেখলে ভালো লাগত। এখন সে মেজর লিগ সকারে গেছে, সেখানেও সে মহাতারকা হবে। আর্জেন্টিনা আসলে দুজন অসাধারণ নাম্বার টেন পেয়েছে।
আমি মনে করি, সে আধুনিক যুগের বিল শ্যাঙ্কলি। আমার মনে হয়, আমরা শুধু বাজে দুটি মাস কাটিয়েছি গত মৌসুমে। শেষটা ভালোই হয়েছে। নতুন মৌসুমটাও দারুণভাবে শুরু করতে হবে। ক্লপের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে, সে দারুণ কোচ।
শুভ্র: বর্তমানে ফিরি, ইয়ুর্গেন ক্লপের জাদু কি কমতে শুরু করেছে?
রাশ: না, আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি, সে আধুনিক যুগের বিল শ্যাঙ্কলি। আমার মনে হয়, আমরা শুধু বাজে দুটি মাস কাটিয়েছি গত মৌসুমে। শেষ ৯টা ম্যাচ দেখেন, আমরা শেষটা ভালোই করেছি। নতুন মৌসুমটাও দারুণভাবে শুরু করতে হবে। ক্লপের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে, সে দারুণ কোচ।
শুভ্র: লিভারপুলের হয়ে টানা ছয় মৌসুম ২০-এর বেশি গোল করার রেকর্ড আপনার, ছয় মৌসুম পর জুভেন্টাসে চলে যাওয়ায় সেটা টানা সাত হয়নি। মো. সালাহ তো আপনাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন, আগামী মৌসুমে আপনার রেকর্ডটা হয়তো ভেঙেও দেবেন...
রাশ: হ্যাঁ, ভালোই তো, শুভকামনা। যদি দল জেতে, সে রেকর্ড ভাঙলে আমি খুশিই হব।