২০২৩ সালটা যে রকম কাটল আপনার, এটা কি বলা যায় সিদ্দিকুর রহমান শেষটা দেখতে শুরু করেছেন?
সিদ্দিকুর রহমান: কেউ এভাবে বললে আমি আটকাতে পারব না। তবে আমি আমার কাজটা করে যাব। সেটা আমাকে করতেই হবে। ভাবিনি র্যাঙ্কিংয়ে এত পেছনে চলে যাব। এটা পুরোপুরিই অপ্রত্যাশিত। যাহোক, জীবনে ওঠানামা থাকবেই। এ নিয়ে ভেঙে পড়ার কারণ নেই।
কিন্তু এটা কি ধাক্কা নয় যে এই প্রথম চাইলেই এশিয়ান ট্যুরের সব টুর্নামেন্ট খেলতে পারবেন না আপনি!
সিদ্দিকুর: তা তো বটেই। এটার জন্য যেমন কষ্টদায়ক, আমার জন্য বড় একটা শিক্ষাও। এই শিক্ষা আমাকে কাজে লাগাতে হবে। এশিয়ান ট্যুরের মূল কার্ডে নেই আমি। এখন আমি লো র্যাঙ্কিংয়ের খেলোয়াড় হয়ে গেছি। ভাবলেই খারাপ লাগে।
অথচ ২০১০ সালে প্রথম এশিয়ান ট্যুর ব্রুনাই ওপেন জয়ের বছর আপনার র্যাঙ্কিং ছিল ৭, ২০১১ সালে ৮। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় এশিয়ান ট্যুর হিরো ইন্ডিয়া ওপেন জয়ের বছর ৪। সেই আপনি এখন এশিয়ান ট্যুরের র্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ নম্বরে! এতটা পেছনে যাওয়ার কারণ কী?
সিদ্দিকুর: কারণটা বুঝতে পারছি না। প্রথম দুদিন ভালো খেলছি তো দেখা গেল পরের দুদিন ভালো হচ্ছে না। চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আর ভালো মারতে পারছি না। সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। চাপ অনুভব করছি। তা ছাড়া গত বছরের তুলনায় এশিয়ান ট্যুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেড়েছে। এ বছর এশিয়ান ট্যুরে ইউরোপের ও বিশ্বসেরা অনেকে খেলেছে। টুর্নামেন্টগুলো অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে গেছে, যে কারণে এই অবস্থা।
এখন তো র্যাঙ্কিং নির্ধারিত হয় টুর্নামেন্টে গলফারের অবস্থানের ওপর। এটাও কি একটা সমস্যা নয়?
সিদ্দিকুর: এটা বড় সমস্যা। এখন পয়েন্ট পদ্ধতি হওয়ায় আমি বেশ ভুগছি। কোনো টুর্নামেন্ট ওপরের দিকে থেকে শেষ না করলে পয়েন্ট কম। ফলে আমি পয়েন্ট কম পাচ্ছি। আগে র্যাঙ্কিং হতো কে কত টাকা আয় করেছে তার ওপর ভিত্তি করে। এখন র্যাঙ্কিং হচ্ছে কে কান অবস্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করছে, সেটা দেখে। পয়েন্ট পদ্ধতি করায় আমি আনলাকি হয়ে গেছি।
আপনি ২০০৯ সালে এশিয়ান ট্যুরে যোগ দেন। ১৪ বছর হয়ে গেল। আপনার তো এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়...
সিদ্দিকুর: দেখুন, আগেই বলেছি, আমার খেলা ভালোই হচ্ছে। এ বছর আমি খারাপ খেলিনি। কিন্তু ফিনিশিংটা ভালো হয়নি। গত বছর আমি ৪-৫টি টুর্নামেন্টে কাট মিস করেছি। এ বছর করেছি দুটিতে। ফলে এ বছর আমি নিজেকে দোষ দেব না। সমস্যাটা র্যাঙ্কিংয়ে, প্রাইজমানি কিন্তু ঠিকই আছে। গত বছর ৩৪তম স্থানে থেকে যে টাকা আয় করেছি, এ বছর ৮৩তম স্থানে থেকে তার চেয়ে বেশি আয় করেছি।
এশিয়ান গেমসে ১৩তম হয়েছি। গত মাসে চীন ওপেনে ১৩তম। নভেম্বরে তাইওয়ান ওপেনে ২১তম, এই টুর্নামেন্টগুলো ভালোই কেটেছে।
কয়েক দিন আগে তো আপনিই বলেছেন, ২০২৩ আপনার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে বছর...
সিদ্দিকুর: সেটা বলেছি র্যাঙ্কিংয়ের পেছনে চলে যাওয়ার দিক থেকে। টাকা আয়ের দিক থেকে নয়।
এ বছর ১৮টি টুর্নামেন্ট খেলে কোনোটিতেই সেরা দশে নেই আপনি। সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার শিনহান ওপেনে ১২০তম, এপ্রিলে ভিয়েতনামে আন্তর্জাতিক সিরিজে হয়েছেন ১০৪তম হয়েছন। ৩০-এর ঘরে ছিলেন একটি টুর্নামেন্টে। ৪০-এর ঘরে তিনটিতে...
সিদ্দিকুর: বছরের ১৯তম টুর্নামেন্ট খেলতে রিয়াদ গিয়েও পিঠের চোটের কারণে সৌদি ওপেনে খেলা হয়নি। যেটা ছিল আমার জন্য হতাশার। বাকিগুলোতে ওঠানামা ছিল। ভালো অবস্থায় থেকেও অনেক টুর্নামেন্টের শেষটা হয়েছে বাজে। এশিয়ান গেমসে ১৩তম হয়েছি। গত মাসে চীন ওপেনে ১৩তম। নভেম্বরে তাইওয়ান ওপেনে ২১তম, এই টুর্নামেন্টগুলো ভালোই কেটেছে।
গত ২০ নভেম্বর আপনি ৪০–এ পা দিয়েছেন। দ্বিতীয় এশিয়ার ট্যুর জয়ের ১০ বছর হয়ে গেল। তৃতীয় এশিয়ান ট্যুর কি আদৌ আসবে? আগের সিদ্দিকুর হওয়া কি আর সম্ভব মনে করেন?
সিদ্দিকুর: এটা বলা কঠিন। তবে না হওয়ার তো কিছু দেখছি না। সত্যি বলতে এশিয়ান ট্যুর জেতার স্বপ্ন এখনো দেখি। না দেখলে তো খেলাই ছেড়ে দিতাম। এশিয়ান ট্যুরে যে অনেক টাকা পাই, তা–ও নয়। কিছু পাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে এখনো খেলে যেতাম না। খেলাটা নেশা, যে কারণে খেলছি।
নতুন বছরে কীভাবে ফিরে আসবেন বলে ভাবছেন...
সিদ্দিকুর: ফিটনেস নিয়ে আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে। কোথায় সমস্যা, সেটা বিশ্লেষণ করতে হবে। আপাতত জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত খেলা নেই। তারপর হয়তো খেলা পড়বে। শারীরিক, মানসিক, টেকনিক্যাল সব দিক থেকেই নতুন বছরে নতুনভাবে ফিরে আসতে চাইব।
আগামী বছর কোন টুর্নামেন্টগুলো খেলতে পারবেন?
সিদ্দিকুর: টুর্নামেন্টের অর্থ পুরস্কারের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায় টুর্নামেন্ট হলে ৪০জন খেললে আমি সুযোগ পাব না বা জাপানে ৬০জন খেললে সুযোগ পাব না। তবে কিছু টুর্নামেন্টে পাব। এশিয়ান ট্যুরের সূচি হলে পরিষ্কার ধারণা মিলবে।