সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ ব্যাটিং কোচ হেম্প

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটাই বেশি হতাশ করেছে। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের রান মাত্র একবার দেড় শ ছাড়িয়েছে। গতকাল মেলবোর্ন থেকে প্রথম আলোকে হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প মোহাম্মদ জুবাইরের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণ—

প্রশ্ন:

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী ছিল এবং তা কতটা পূরণ হয়েছে?

ডেভিড হেম্প: বাংলাদেশ তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবার অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স করেছে। সুপার এইটে যাওয়া আমাদের জন্য তৃপ্তির ছিল। তবে সুযোগ হাতছাড়া করাটা ছিল হতাশার। আমরা দুটি খুব ভালো সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ রানে হার, যারা পরে ফাইনাল খেলেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার ৮ রানে, যারা সেমিফাইনাল খেলেছে। যদি বাংলাদেশ ৫ ম্যাচ জিতে আসতে পারত, তাহলে ফলাফলটা কেমন হতো ভাবুন। সেটা অবশ্যই আমাদের জন্য দারুণ অর্জন হতো। সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতি। সুপার এইটে যেতে পেরেছি, এতে খুশি। তবে খুব কাছে গিয়েও আরও দুটি ম্যাচ জিততে না পারায় কিছুটা হতাশও।

প্রশ্ন:

বিশ্বকাপে দলের ব্যাটিংটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

হেম্প: সবাই দেখেছে বিশ্বকাপের উইকেটগুলো কেমন ছিল। অন্য দলের ব্যাটসম্যানদেরও ভুগতে হয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। নিউইয়র্কে চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল, তা তো দেখেছেনই। সেন্ট ভিনসেন্টে ফ্লাডলাইটে ব্যাটিং করা ছিল খুবই কঠিন। সিম মুভমেন্ট ছিল, স্পিনও ছিল। সে মাঠে আমরা দিনেও খেলেছি। দিন আর রাতের খেলার মধ্যে বিরাট পার্থক্য ছিল। অ্যান্টিগা খুব ভালো ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। তবু সব মিলিয়ে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল।

প্রশ্ন:

বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর উইকেট সম্পর্কে নিশ্চয়ই আগে থেকে ধারণা ছিল বাংলাদেশ দলের। তারপরও কেন এই ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতা?

হেম্প: দেখুন, যেকোনো মাঠেই আপনি আগের পরিসংখ্যান থেকে তথ্য নিতে চাইবেন। খেলার আগে মাঠের উইকেট, আকৃতি দেখবেন। সেখান থেকে একটা ধারণা নেবেন। কিন্তু যখন ম্যাচ শুরু হবে, আপনাকে কন্ডিশন বুঝে খেলার চেষ্টা করতে হবে, দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে বাতাসের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাঠগুলো এক পাশ খোলা থাকায় বাতাসের একটা প্রভাব থাকে। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। ব্যাটসম্যানদের মাঠের একটা নির্দিষ্ট দিক মাথায় রেখে খেলতে হবে, বোলারদেরও।

ডেভিড হেম্পের ক্লাসে তানজিদ হাসান
প্রথম আলো
প্রশ্ন:

নাজমুল হোসেন ও লিটন দাসের ধারাবাহিক ব্যর্থতা নিয়ে কী বলবেন?  

হেম্প: দেখুন, টি-টোয়েন্টি এমন একটা খেলা, যেখানে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আশপাশের সবকিছুই দ্রুত ঘটে যায়। ম্যাচটাকে দ্রুত এগিয়ে নিতে হয়। সেটি করতে গিয়ে ছন্দে ফেরার জন্য যা করা দরকার, তা থেকে কিছুটা সরে আসতে হয়। আপনাদের মতো আমরাও একই আশা করছিলাম। সুপার এইটে ওঠার পর দলের ব্যাটিং গ্রুপের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, আমরা শুরুতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দুটি বড় দলের বিপক্ষে খেলেছি। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফ্লাডলাইটে রান তাড়া করার ব্যাপারটা তো বললামই। আমরা জানি ওরা (নাজমুল ও লিটন) আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু মাঝেমধ্যে বড় টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়দের খারাপ সময় যায়। ওদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। অনুশীলনে ঠিক কাজটাই করছিল, কিন্তু সেটা মাঠে প্রতিফলিত হচ্ছিল না।

প্রশ্ন:

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২.১ ওভারে জিততে পারলে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশের ব্যাটিং যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ছিল না। বাংলাদেশ জয়ের জন্য খেলেছে কি না, এই প্রশ্নও উঠেছে...

হেম্প: তেমন কিছু নয়। দলের মানসিকতা সব সময় একই ছিল—জয়ের জন্য খেলা, রানের জন্য খেলা। ছেলেরা জেতার জন্যই খেলেছে এবং এটাই ছিল আমাদের মানসিকতা। পুরো বিশ্বকাপেই ভিন্ন কিছু ছিল না।

খেলোয়াড়দের সঙ্গে ব্যস্ত সময় ডেভিড হেম্পের
বিসিবি
প্রশ্ন:

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ দল ৮টি টেস্ট খেলবে। টানা টি-টোয়েন্টি খেলার পর টেস্টের সঙ্গে ক্রিকেটাররা কীভাবে মানিয়ে নেবেন?

হেম্প: ছেলেরা কিন্তু অনুশীলনের মধ্যেই আছে, বিশেষ করে টেস্ট দলের খেলোয়াড়েরা। চট্টগ্রামে তাদের ক্যাম্প চলছে আরও আগে থেকে। ক্যাম্পের শুরু থেকেই তারা লাল বলের খেলা নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বকাপে যারা ছিল, তারাও দুই সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়ে সেখানে যোগ দেবে। আমরা এসে ওদের লাল বলের খেলা নিয়ে কাজ করব। ক্রিকেটারদের দুই দলে ভাগ করে কয়েকটি তিন দিনের ম্যাচ আয়োজন করব। এসবই আমাদের প্রস্তুতির অংশ। আর মানসিকতার বিষয়টা তো জানাই। আপনাকে লম্বা সময় ধরে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়ে যেতে হবে। পার্থক্য বলতে গেলে এটাই। ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আশা করছি প্রস্তুতি ম্যাচগুলো ছেলেদের সেই মানসিকতায় নিয়ে আসবে।