ইংল্যান্ডের বিদায়ে নিজেকেই দুষছেন কেইন
‘সিংহরা রাতভর কাঁদছে’—ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের একটি খবরের শিরোনাম।
কাঁদারই তো কথা। পেনাল্টি–বিশেষজ্ঞ হিসেবে যাঁর এত সুনাম, ইংল্যান্ডের যে কেউ পেনাল্টি আদায় করলেও একমাত্র যিনি শট নিতে যান, সেই হ্যারি কেইনই স্পট কিকটা উড়িয়ে মারলেন! তাঁর এই ব্যর্থতায় ‘থ্রি লায়ন্সদের’ বিশ্বকাপ অভিযানও থেমে গেছে।
ম্যাচ শেষে হারের সব দায় নিজের কাঁধেই নিয়েছেন কেইন। তবে অধিনায়কত্ব বা আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নেননি।
আল খোরের আল বায়ত স্টেডিয়ামে গত রাতের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২–১ ব্যবধানে হেরে বিদায় নিয়েছে ইংল্যান্ড। সেই ১৯৭০ সাল থেকে ‘ইটস কামিং হোম’ স্লোগান হৃদয়ে ধারণ করে বিশ্ব মঞ্চে গিয়ে আরেক দফা শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে তৃতীয় চালর্স রাজা হয়েছেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের ভাগ্যের শিকে কিছুতেই ছিড়ছে না।
অথচ অরেলিয়েঁ চুয়ামেনির দূরপাল্লার দুর্দান্ত শটে ফ্রান্স এগিয়ে যাওয়ার পর অধিনায়ক কেইনের পেনাল্টি গোলেই সমতা ফিরিয়েছিল ইংল্যান্ড। এ গোলে আবার ইংলিশদের সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা ওয়েন রুনিকে ছুঁয়ে ফেলেন কেইন। দুজনের গোলসংখ্যা তখন সমান ৫৩টি।
৭৮ মিনিটে অলিভিয়ের জিরুর হেডারে ফ্রান্স আবার এগিয়ে গেলেও পেনাল্টি থেকেই দ্বিতীয়বার ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। রুনিকে ছাড়িয়ে যাওয়ারও সুবর্ণ সুযোগ তখন কেইনের সামনে। তবে স্নায়ুচাপেই হোক কিংবা নিজ ক্লাব টটেনহাম সতীর্থ উগো লরিসকে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক হিসেবে পাওয়ার কারণেই হোক, এ দফায় সফল হতে পারেননি কেইন।
লরিস ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ঠেকিয়ে দিলেও না হয় মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু কেইনের শট থেকে মনে হতে পারে বায়ুমণ্ডলকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন তিনি।
ম্যাচ শেষে হতাশা লুকাতে পারেননি কেইন। বলেছেন, ‘এ রাত (গত রাত) সহজে শেষ হবে না। আমি সাহসী ছিলাম, গোটা দল চাঙা ছিল। সবার বিশ্বাস ছিল, আমরা এবার বিশেষ কিছু অর্জন করতে যাচ্ছি। কিন্তু গল্পটা সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল।’
ম্যাচ হারলেও ফ্রান্সের চেয়ে ইংল্যান্ডই ভালো খেলেছে দাবি কেইনের, ‘মনে হয়েছে, ওদের চেয়ে আমরা বেশি সুযোগ সৃষ্টি করেছি। টুকরা টুকরা সময় বিবেচনায় নিলেও আমরাই ভালো ফুটবল খেলেছি। কিন্তু ফিনিশিংয়ে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছি।’
ইংল্যান্ডের বিদায়ে নিজেকেই দুষছেন কেইন, ‘অধিনায়ক হিসেবে দুর্ভাগ্যকে সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করছি। পেনাল্টি মিসের দায় আমার। এই হার মেনে নেওয়া কঠিন। তবে দল নিয়ে আমি গর্বিত।’
নেতৃত্ব ছাড়া বা জাতীয় দলের হয়ে আর না খেলার মতো আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নেননি কেইন, ‘এটা আমাদের কিছু দিন কষ্ট দেবে। তবে এটাকে এক পাশে সরিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’
দল হারলেও ইংল্যান্ডের যৌথ শীর্ষ গোলদাতা হওয়ায় কেইনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রুনি। টুইটারে লিখেছেন, ‘শিগগিরই সে আমাকে ছাড়িয়ে যাবে।’
ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করেন, দ্বিতীয় পেনাল্টি কেইন নিজে না নিয়ে সতীর্থকে দিয়ে নেওয়ালে ইংল্যান্ড সফল হতো। কিন্তু এখন এসব বলে কী লাভ? ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়লে’ চলবে!