এমবাপ্পের ‘ঔদ্ধত্য’ দেখে খেপেছেন রুনি
কিলিয়ান এমবাপ্পে কি তাঁর চারপাশে উত্তাপটা টের পাচ্ছেন?
গত মে মাসে পিএসজি তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করে। তখন জানা গিয়েছিল, পিএসজি তাঁকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছে। স্কোয়াড ও একাডেমি নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। ফরাসি তারকা কি একটু বেশি বেশি করে ফেলছেন? এই প্রশ্ন এখন উঠছে। দলে লিওনেল মেসি ও নেইমারের মতো তারকা আছেন, এমবাপ্পে তাঁদের পাত্তা না দিয়ে নিজের কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করছেন—গত রোববার ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ–তে মঁপেলিয়েরের বিপক্ষে পিএসজির ৫–২ গোলে জয়ের ম্যাচে বিষয়টি দৃষ্টিকটুভাবেই ফুটে উঠেছে।
ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক স্ট্রাইকার ওয়েন রুনির চোখেও দৃশ্যটা বিঁধেছে। ম্যাচে দুটি পেনাল্টি পেয়েছে পিএসজি। এমবাপ্পে নিজে প্রথম পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি। এরপর পিএসজি আরেকটি পেনাল্টি পায়, যেখান থেকে গোল করেন নেইমার। এই পেনাল্টি নেওয়া নিয়েই একটু বেশি বেশি করে ফেলেছেন এমবাপ্পে। রুনি তা দেখে একটু শাসনের সুরেই কড়া কিছু কথা বলেন এমবাপ্পের প্রতি।
আগে ঘটনাটা খুলে বলা যাক। ম্যাচের আধঘণ্টার মাথায় প্রথম পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি এমবাপ্পে। মঁপেলিয়ে গোলকিপার জোনাস ওমলিন তাঁর শট প্রতিহত করেন। ৪৩ মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি পায় পিএসজি। এমবাপ্পে এই পেনাল্টিটিও নিজে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। পড়িমরি করে যাওয়ার সময় মেসির কাঁধে হালকা ধাক্বা মারেন, বিষয়টি যে আর্জেন্টাইন তারকা খেয়াল করেননি, তা নয়। ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, মেসি মুখ ঘুরিয়ে এমবাপ্পের দিকে তাকিয়েছেন। এমবাপ্পে তা পাত্তা না দিয়ে স্পটকিক নেওয়ার জন্য নেইমারের সঙ্গেও মৃদু কথা–কাটাকাটি করেন। তবে এ যাত্রায় আর পেনাল্টি নিতে পারেননি। নেইমার নিজেই শট নিয়ে গোল করেন।
ম্যাচে ওই মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সমালোচনা শুরু হতে সময় লাগেনি। এমএলএসের দল ডিসি ইউনাইটেডের কোচ রুনিও তাতে গলা মিলিয়ে ‘দেপার স্পোর্টস’কে বলেছেন, ‘২২–২৩ বছর বয়সী কোনো খেলোয়াড় মেসির কাঁধে ধাক্কা মারছে...এমন অহম আমি জীবনে কখনো দেখিনি। কেউ এমবাপ্পেকে মনে করিয়ে দিন, ২২ বছর বয়সে মেসির চারটি ব্যালন ডি’অর ছিল।’
২৩ বছর বয়সী এমবাপ্পে ২০১৮ বিশ্বকাপ জিতেছেন, দুবার ফ্রান্সের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি। তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনের ভান্ডারে ফিফার ‘বেস্ট’ ট্রফিও নেই। মেসি ২২ বছর বয়সে অর্থাৎ ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। রুনি মেসিকে নিয়ে ‘চারটি ব্যালন ডি’অর’ জয়ের যে কথা বলেছেন, তাতে তথ্যগত ভুল থাকলেও সেটি যে কথার কথা, তা বলে দিতে হয় না। রুনি হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন, ২২ বছর বয়সে এমবাপ্পে যে অহম দেখাচ্ছেন, মেসি সে বয়সে তাঁর বেশি ব্যক্তিগত অর্জন নিয়েও বিনয় প্রকাশে কখনো এতটুকু কুণ্ঠা করেননি।
সংবাদমাধ্যম ‘আরএমসি স্পোর্ত’–এর ফরাসি সংবাদকর্মী দানিয়েল রিওলো জানিয়েছেন, চুক্তি নবায়নের সময় এমবাপ্পেকে ক্লাবের ‘সকল কাজের কাজি’ হওয়ার যে প্রতিশ্রুতি পিএসজি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই জানি, এমবাপ্পে ও নেইমার এক অপরের সঙ্গে কথা বলে না। তারা (পিএসজি) বলেছিল, এমবাপ্পে ক্লাবের হর্তাকর্তা। তার বাবা–মাকেও সে কথা বলা হয়েছে। সে জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এক কোচকেও (মরিসিও পচেত্তিনো) বিদায় করা হয়েছে এবং বলা হয়েছিল নেইমারও থাকবে না। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।’
সেই ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, এমবাপ্পে ও নেইমারের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে ফেলেছে পিএসজি। এখন কোথাকার জল কোথায় গড়ায় সেটাই দেখার বিষয়।