ডিন এলগার সিরিজের আগে বলেছিলেন, ‘বাজবল’-এর মতো সাহসী ক্রিকেট কতটা টেকসই হবে, সেটি নিয়ে তাঁর সংশয় প্রবল। বেন স্টোকস অবশ্য সেসব নিয়ে কথা বলতে চাননি। শুধু বলেছিলেন, ‘আমাদের একটা খেলার ধরন আছে, তাদেরও একটা আছে।’ ইংল্যান্ডের এ মৌসুমের খেলার ধরনটা কী, সেটি অবশ্য দেখা গিয়েছিল আগের চার ম্যাচেই। ‘বাজবল’ বা যে নামেই ডাকুন না কেন, তাতে বিধ্বস্ত হয়েছে নিউজিল্যান্ড, ভারত।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকা হাজির হয়েছে বাড়তি পেস নিয়ে। ২০০৬ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো বিদেশি পেস আক্রমণের ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি গতি নিয়ে। আর তাতেই বিধ্বস্ত হলো ইংল্যান্ড। লর্ডসে আড়াই দিনেই গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। আনরিখ নর্কিয়া, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, মার্কো ইয়ানসেনের গতির সঙ্গে কেশব মহারাজের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৯ রানেই থেমেছে তারা। ইনিংস ও ১২ রানে জিতে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রথম ইনিংসে ১৬১ রানের লিড, এমন কন্ডিশনে বেশ বড়ই। তবে ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বলছিল, বড় নয় কোনো কিছুই। শেষ পর্যন্ত অবশ্য উড়েই গেছে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে প্রথম পাঁচজনের একজন তবুও ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে সেখানে সর্বোচ্চ ইনিংসটি অ্যালেক্স লিসের ৩৫ রানের। শেষ দিকে ২৯ বলে ৩৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন ব্রড, তবে ইনিংস পরাজয় আটকায়নি তাতেও।
দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের জবাব দিতে পারেনি ইংল্যান্ড। ইনিংসের অষ্টম ওভারেই কেশব মহারাজকে আনেন ডিন এলগার, কাজেও লেগে যায় সে কৌশল। তাঁর তৃতীয় বলে সুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন জ্যাক ক্রলি, হন এলবিডব্লু। সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে এ নিয়ে দশমবার দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই ফিরলেন এ ওপেনার।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ওলি পোপকেও হারায় ইংল্যান্ড। মহারাজকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু তিনিও, সে উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকা পায় রিভিউ নিয়ে। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে, ১২৩ রানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড।
বিরতির পর ইংল্যান্ড পড়ে প্রোটিয়া পেসের তোপে। লুঙ্গি এনগিডির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে শক্ত হাতে পুশ করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন জো রুট। অ্যালেক্স লিস ও জনি বেয়ারস্টো সে চাপ সামাল দেওয়ার আগেই এরপর ধস নামে, ৫ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ড হারায় ৩ উইকেট। তিনটিই নেন আনরিখ নর্কিয়া, তিনটিই কট বিহাইন্ড। লাইন ধরে রাখা বলে প্রথমে ফেরেন বেয়ারস্টো, প্রথম ইনিংসে ০ রানের পর এবার করেন ১৮ রান। শুরুতে জীবন পাওয়া লিস করেন ৩৫, বেন ফোকস আউট মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে কোনো রান না করেই।
এরপর প্রতি আক্রমণের চেষ্টা করেন ব্রড। স্টোকসের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ৪৫ বলে ৫৫ রান। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ রান করা ব্রডকে থামতে হয় রাবাদার স্লোয়ারে। এরপর গুটিয়ে যেতে বেশি সময় নেয়নি ইংল্যান্ড। ৮ রানের ব্যবধানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা।
এর আগে সকালটা ছিল ব্রডের—দুটি উইকেটের সঙ্গে নেন দুর্দান্ত একটি ক্যাচ। ৩ উইকেট বাকি রেখে ১২৪ রানে এগিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা লিডটা নিয়ে যায় ১৬১ রান পর্যন্ত। ইংল্যান্ড প্রথম ব্রেকথ্রু পায় ব্রডের ওই দুর্দান্ত ক্যাচে। ম্যাথু পটসকে পুল করেছিলেন কাগিসো রাবাদা, মিড অনে থাকা ব্রডের নাগালের বাইরে দিয়েই যেতে পারত সেটি। তবে লাফিয়ে উঠে এক হাতে সেটি ধরেন ব্রড। নর্কিয়াকে নিয়ে ইয়ানসেন অবশ্য লিড বাড়িয়ে নেন আরেকটু। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিটি পাননি, স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৪৮ রান করেন ৭৯ বলে। পরের ওভারে এসে এনগিডিকে ফেরান ব্রড, অন্যপাশে নর্কিয়া অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ২৮ রানে। শেষ পর্যন্ত দিনটা নিজের করে নিয়েছেন নর্কিয়ারাই।