আইপিএলে এবার এত রান হচ্ছে কেন, ব্যাখ্যা দিলেন মুরালিধরন

লঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনএক্স

ব্যাটিংয়ে নামলেই দলীয় সংগ্রহ ন্যূনতম ২০০—এবারের আইপিএলে ব্যাপারটা একরকম ‘ট্রেন্ড’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৫০ রানের বেশি দলীয় স্কোর দেখা গেছে ৯ বার। আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এবার যেমন দুবার ভাঙতে দেখা গেছে, একইভাবে স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের বিশ্ব রেকর্ডও গড়তে দেখা গেছে। পাওয়ারপ্লেতেও হয়েছে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড।

পাওয়ারপ্লের বাইরের ওভারগুলোতেও একই অবস্থা। কী পেস, কী স্পিন—ব্যাটসম্যানদের খুনে মেজাজের সামনে কোনো কিছুই কাজে আসছে না। বিশেষ করে স্পিনারদের এবার বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। ভারতের পিচগুলোর স্পিনবান্ধব হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এবার স্পিনারদের বোলিং কোটা পূরণে অধিনায়কদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এ মৌসুমে শীর্ষ ২০ উইকেট শিকারির মধ্যে মাত্র ৩ জন স্পিনার (যুজবেন্দ্র চাহাল, কুলদীপ যাদব ও সুনীল নারাইন) সেটারই প্রমাণ।

আইপিএলের এবারের মৌসুমে কেন এত রান হচ্ছে? কেন রানের রেকর্ড ভাঙা–গড়ার খেলা থামানো যাচ্ছে না—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন মুত্তিয়া মুরালিধরনও। টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি মুরালিধরন আইপিএলেও বেশ ‘কিপটে’ ছিলেন। ৬৬ ম্যাচে ৬৩ উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ৬.৬৮ ইকোনমি রেটে। লঙ্কান এই কিংবদন্তি বর্তমানে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের স্পিন বোলিং ও কৌশলগত কোচের দায়িত্বে আছেন। তাই খুব কাছ থেকেই বোলারদের অসহায়ত্ব দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। বলা বাহুল্য, তাঁর দল হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যানরাই এবার বোলারদের জীবন সবচেয়ে বেশি দুর্বিষহ করে তুলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুত্তিয়া মুরালিধরন
বিসিসিআই

রান–উৎসবের প্রধান দুই কারণ হিসেবে ফ্ল্যাট উইকেট আর ছোট বাউন্ডারির বিষয় তো আছেই; মুরালিধরন মনে করেন, পিচে স্পিনারদের সহায়তা ও বাঁক না থাকায় তাঁরাও বল ঘোরানোর চেষ্টা করছেন না। এ জন্য মাঝের ওভারগুলোতে তাঁরা সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারছেন না।

আরও পড়ুন

আজ রাতে মোস্তাফিজ–ধোনিদের চেন্নাই সুপার কিংসের মুখোমুখি হচ্ছে মুরালির হায়দরাবাদ। এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে ৫২ বছর বয়সী কিংবদন্তি বলেছেন, ‘ভারতে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ স্পিনারই বল ঘোরানোর চেষ্টা করছে না। আমার কাছে বল ঘোরানোটাই (ভালো করার) প্রধান মাপকাঠি। ওরা কিছুটা জোরে বল করছে, কিন্তু ঘোরাচ্ছে না। বল বাঁক খাওয়াতেও দেখা যাচ্ছে না।’

নেট অনুশীলনে ব্যাটসম্যানরা যে ধরনের বলে খেলে থাকেন, মূল ম্যাচেও তেমনই বল হচ্ছে বলে মনে করেন মুরালিধরন। ব্যাপারটা ব্যাটসম্যানদের কাজ আরও সহজ করে তুলছে বলে মত তাঁর, ‘আপনি যদি অনুশীলন দেখে থাকেন, তাহলে বুঝবেন ব্যাটসম্যানরা সব থ্রো ডাউন বলে পাওয়া হিটিংয়ের অনুশীলন করছে। তাই ম্যাচেও যখন ৮০ থেকে ৯০ কিংবা ৯৫ (কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) গতিতে সোজা বল আসে, তখন ওদের মাথায় শুধু পেশিশক্তি ব্যবহারের চিন্তা আসে। কারণ, এর সঙ্গে ওরা (অনুশীলনেই) অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ওরা প্রতিদিন ১০০টির বেশি বলে পাওয়ার হিটিংয়ের অনুশীলন করে। ওদের মতিষ্ক ভালোভাবেই জানে, কী করতে হবে। কিন্তু স্পিনাররা যদি বল ঘোরাত ও বাঁক খাওয়াত, তাহলে ব্যাটসম্যানদের মতিষ্ক আগে থেকেই এটা জানতে পারত না। আমার মনে হয়, এ কারণেই স্পিনারদের বল ঘোরানো শিখতে হবে। যদি ওরা এটা করতে পারে, তাহলে আরও ভালো করার সুযোগ থাকবে।’

এবারের আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের স্পিন বোলিং ও কৌশলগত কোচের দায়িত্বে আছেন মুরালিধরন
বিসিসিআই

ডট বলের নিরিখে এবারের আইপিএলে স্পিনারদের অবস্থা আরও বাজে। ডট বল দেওয়ায় শীর্ষ পাঁচে কোনো স্পিনার নেই। কলকাতা নাইট রাইডার্সের রহস্যময় স্পিনার নারাইন ৭৩টি ডট বল দিয়ে আছেন ৬ নম্বরে। গুজরাট টাইটানসের আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান আছেন ১১ নম্বরে। প্রতি ওভারে ৬.৯৬ রান দিয়ে (কমপক্ষে ১০ ওভার বল করে) ইকোনমি রেটের দিক থেকেও স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নারাইন।

আরও পড়ুন

ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে ইকোনমি রেট সবচেয়ে ভালো দিল্লি ক্যাপিটালসের অক্ষর প্যাটেলের (৭.৩৬)। এরপর আছেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের ক্রুনাল পান্ডিয়া (৭.৪২), চেন্নাই সুপার কিংসের রবীন্দ্র জাদেজা (৭.৮৫), দিল্লির ‘চায়নাম্যান’ বোলার কুলদীপ যাদব (৮.০৩) এবং রাজস্থান রয়্যালসের দুই স্পিনার চাহাল (৮.৮৩) ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৮.৮৮)। অশ্বিন তো টানা ৬ ম্যাচ ছিলেন উইকেটশূন্য।

মুরালিধরনের দল হায়দরাবাদের স্পিনারদের পারফরম্যান্সও আশাব্যঞ্জক নয়। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা চোটের কারণে আইপিএল থেকে ছিটকে পড়ায় হায়দরাবাদে স্বীকৃত স্পিনার আছেন শুধু একজন—মায়াঙ্ক মারকান্ডে। শাহবাজ আহমেদ, আবদুল সামাদ, অভিষেক শর্মা ও ওয়াশিংটন সুন্দরদের পার্টটাইমার বোলার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্পিনারদের মধ্যে এবার শুধু সুনীল নারাইনের ইকোনমি রেট ৭–এর কম
বিসিসিআই

অভিজ্ঞ স্পিনারদের অভাবকেও রান–উৎসবের অন্যতম কারণ মনে করেন মুরালিধরন, ‘গত মৌসুমে তবু কিছু স্পিনবান্ধব পিচ ছিল। এবার তো সবাই ফ্ল্যাট উইকেট তৈরি করছে। এমনকি বাউন্ডারি বড় হলেও ফ্ল্যাট পিচ ও গতিময় আউটফিল্ড বাড়তি ৩০–৪০ রানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আপনি অভিজ্ঞ স্পিনারদের কথা বলতে পারেন। আইপিএলে কয়জন অভিজ্ঞ স্পিনার খেলানো হচ্ছে? আমি তো বলব, ব্যাটসম্যানরাই আধিপত্য বিস্তার করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়। মানে আপনাকে কমপক্ষে ৮ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে মাত্র ১২০ বল খেলতে হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

আইপিএলে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়ের নিয়ম চালু হয়েছে গত বছর। মুরালির মতে, গতবার এমন অভিজ্ঞতা নতুন হওয়ায় দলগুলোর অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছে। কিন্তু এবার দলগুলো ভালোভাবেই পরিকল্পনা সেরে নিয়েছে, কখন, কীভাবে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় কাজে লাগাতে হবে।