রেসলিং থেকে ট্রিপল এইচের অবসর
সম্প্রতি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিখ্যাত রেসলার পল মাইকেল লেভেক, সমর্থকদের কাছে যিনি ‘ট্রিপল এইচ’ নামেই বেশি পরিচিত। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নিউ ইয়েল হেভেন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাও হয়েছিল।
তখন থেকেই জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছিল না এই রেসলারকে। রেসলিং রিংয়ে নিয়মিত না লড়লেও কয়েক বছর ধরেই বিশ্বখ্যাত রেসলিং প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট’-এর (ডব্লিউডব্লিউই) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও বৈশ্বিক প্রতিভা অন্বেষণবিষয়ক নির্বাহী সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন, যে কারণে নিজে লড়ার চেয়ে আগামী দিনের প্রতিভা গড়ে তোলার দিকেই তাঁর মনোযোগ ছিল। এ দায়িত্বের কারণেই রিংয়ে না লড়লেও টিভিতে প্রায়ই দেখা যেত তাঁকে, ডব্লিউডব্লিউইর অন্যতম কর্তাব্যক্তির ভূমিকায়। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বহুদিন পর গত রাতে ইএসপিএনের স্টিফেন অ্যান্থনি স্মিথের উপস্থাপনায় টক শো ‘ফার্স্ট টেইক’-এ অতিথি হয়ে এসেছিলে ট্রিপল এইচ। তবে সেখানে যা খবর দিয়েছেন, তা রেসলিংভক্তদের মন ভেঙে দেবে নিশ্চিত।
ট্রিপল এইচ জানিয়েছেন, সরাসরি টিভিতে সম্প্রচারিত ম্যাচে আর লড়তে দেখা যাবে না তাঁকে। লড়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই তাঁর, ‘রেসলিং রিংয়ে, যে রিংয়ে আমি এখন পর্যন্ত অনেকবার লড়েছি, সেখানে লড়ার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে আমার। আমি আর কখনোই রেসল করব না। প্রথমত, আমার বুকে একটা ডিফিব্রিলেটর বসানো আছে। যে কারণে সরাসরি টেলিভিশনে এসে রেসলিং রিংয়ে লড়তে যাওয়া মনে হয় না বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
গত বছর নিজের অবস্থা যে কতটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, সেটারও একটা ধারণা দর্শকদের দিয়েছেন ট্রিপল এইচ, ‘আমার ভাইরাল নিউমোনিয়া হয়েছিল। ফুসফুসে প্রদাহ হয়েছিল। পরের দুই দিন আমার অবস্থা শুধু খারাপের দিকেই যাচ্ছিল। একদিন আমার স্ত্রী (স্টেফানি ম্যাকম্যাহন) আমার কফে রক্ত খুঁজে পায়। এরপর আমি চেকআপ করিয়ে দেখি ব্যাপারটা ওই ভাইরাল নিউমোনিয়া থেকেই হচ্ছে, আমার ফুসফুসে পানি জমে গিয়েছে। আমার হৃদ্যন্ত্রের আশপাশেও পানি জমে গিয়েছিল। হৃদ্যন্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষার পর দেখলাম আমার হৃদ্যন্ত্র “ইজেকশন ফ্র্যাকশন” প্রক্রিয়ার মাত্র ৩০ শতাংশ পাম্প করতে পারছে, যেটা স্বাভাবিক অবস্থায় ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ করতে পারা উচিত। আমি তখনই একটা টেক্সট মেসেজ পেলাম, আমাকে বলা হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে চলে এসো। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যখন আমাকে নেওয়া হলো, ততক্ষণে ওই মাত্রা নেমে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশে, যেটাকে হৃদ্রোগ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ তখন আমার অবস্থা ক্রমে খারাপ হচ্ছিল। নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়ে আপনি এমন পরিস্থিতিতে কখনোই যেতে চাইবেন না।’
সাক্ষাৎকার দিতে দিতে চোখের কোণে পানি জমে আসছিল ট্রিপল এইচের, গলা ধরে যাচ্ছিল। ওই সময় পরিবার ও মেয়েরা ছাড়া আর কোনো কিছুই চিন্তা করতে পারেননি তিনি, ‘আমাদের তিন মেয়ে, ওদের বয়স ১৫, ১৩ ও ১১। জানেনই তো, সারা জীবন ওরা দেখে এসেছে ওদের বাবা অনেক শক্তিশালী। তাদের শক্তিশালী বাবাই হুট করে অসুস্থ হয়ে গেল, হাসপাতালে চলে গেল—ব্যাপারটা ওদের কেমন লাগতে পারে। আমার মনে হয় না ওরা বুঝতে পেরেছে আমার খারাপ কিছু হলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে। ওই সময়গুলোয় শুধু এ জিনিসটাই মনে হবে, “এবারই কি তবে শেষ? জেগে উঠতে পারব তো? ফিরে আসতে পারব তো?” চিন্তাগুলো অনেক কষ্টের, চিন্তাগুলো আপনাকে সাহায্য করবে জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার জন্য।’
১৪ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ট্রিপল এইচ। জিতেছেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ট্যাগ টিম ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপও। তিনি সেই বিশেষ সাত রেসলারের মধ্যে একজন, যাঁরা একাধিকবার রয়্যাল রাম্বল ম্যাচ জিতেছেন। বাকি ছয়জন—রিক ফ্লেয়ার, শন মাইকেলস, স্টিভ অস্টিন, জন সিনা, র্যান্ডি অরটন ও বাতিস্তা।
অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহকর্মীদের শুভেচ্ছাবার্তায় ভেসে যাচ্ছেন ট্রিপল এইচ। দুর্দান্ত ক্যারিয়ারের জন্য ট্রিপল এইচকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রেসলিং তারকা মাইক মিজ্যানিন থেকে শুরু করে অ্যাডাম কোল, ড্যামিয়েন প্রিস্ট, বেইলি, রিয়া রিপলি, সাশা ব্যাংকস, মুস্তফা আলী, বিয়াঙ্কা বেলেয়ার, ফ্রেঙ্কি কাজারিয়ানসহ আরও অনেকে।