নেপাল দলের ‘বাঙালি’ ম্যানেজার
প্রশ্নগুলো ইংরেজিতে করা হলেও নেপাল জাতীয় রাগবি দলের ম্যানেজার গোপাল ছেত্রী উত্তর দিলেন শুদ্ধ বাংলায়। আগামী পরশু বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হবে নেপাল-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাগবি সিরিজ।
এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ হয়েছে সিরিজ–পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন। সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলায় কথাবার্তা বললেন গোপাল ছেত্রী।
গোপালের জন্ম কাঠমান্ডুতে। কিন্তু বাবা একসময় চাকরি করতেন ভারতে। সেই সুবাদে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, গুয়াহাটি, শিবচর, মিজোরামে থাকতেন তিনি। কলকাতায় ছিলেন একটানা পাঁচ বছর। পড়াশোনা করেছেন নাগাল্যান্ডে।
কলকাতায় হোটেল ম্যানেজমেন্টের চাকরি করেছেন। বাংলা ভাষা তাই ভালোমতোই রপ্ত করেছেন। শুধু বাংলা নয়, অহমিয়া, মিজো, হিন্দি, ইংরেজিতেও অনর্গল কথা বলতে পারেন গোপাল।
এতগুলো ভাষা জানলেও বাংলার প্রতি আলাদা টান রয়েছে গোপালের, ‘আসলে এই ভাষা অনেক মিষ্টি লাগে আমার কাছে। বাঙালি সংস্কৃতিও অনেক ভালো লাগে। এই ভাষার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা।’
বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন প্রথমবার দেশের মাটিতে আয়োজন করছে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এমন একটা ইতিহাসের অংশ হতে পেরে গর্বিত গোপাল, ‘আমি বাংলা জানা নেপালি ম্যানেজার। দলের সঙ্গে ঢাকায় আসতে পেরে এ জন্য গর্ব হচ্ছে। এই দেশে আমার অনেক বন্ধু আছে।’
নেপালে রাগবি জনপ্রিয় করতে বর্তমানে কাঠমান্ডুতে কাজ করে যাচ্ছেন গোপাল। বর্তমানে নেপালে ৫৫টি রাগবি ক্লাব রয়েছে বলে জানালেন তিনি। নিজেও একটা রাগবি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছেন।
যদিও একসময় বডিবিল্ডার ছিলেন গোপাল। কাঠমান্ডুতে ২৬ বছর ধরে ফিটনেস সেন্টার ও জিম পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি নেপাল আর্মি রাগবি দলের ফিটনেস ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
নেপালে জনপ্রিয়তার তালিকায় ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল সবার ওপরে। রাগবি খুব বেশি মানুষ খেলে না। তবে যারা খেলে, মনের আনন্দেই খেলে, এমনটাই বললেন গোপাল, ‘অনেকে মনে করে রাগবি ভয়ংকর একটা খেলা। এখানে চোটে পড়ার ভয় আছে। এ জন্য অনেকে খেলতে চায় না। তবে যারা খেলে, মনের আনন্দেই খেলে।’
নেপাল রাগবি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা ১৯৯২ সালে। কিন্তু সে দেশের ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল থেকে অনুমোদন পায় ১৯৯৫ সালে। অথচ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নেপাল রাগবি সেভেন দলটার অভিষেক হয়েছে ২০১৫ সালে!
সেবার চেন্নাইয়ে প্রাক্–অলিম্পিক বাছাই টুর্নামেন্টে খেলে নেপাল। পরের বছর চেন্নাইয়ে এশিয়া রাগবি ডেভেলপমেন্ট সেভেনস টুর্নামেন্টে অংশ নেয় নেপালের ছেলে ও মেয়েদের দল। ২০১৭ সালে কাতারে সেভেনস রাগবি দল খেলেছে এশিয়ান রাগবি টুর্নামেন্টে। ২০১৮ সালে ছেলেদের দল সিঙ্গাপুরে ও মেয়েদের দল ব্রুনেইয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
গত কয়েক বছর নেপালের ছেলে ও মেয়েদের রাগবি দল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও সেভাবে সাফল্য পাচ্ছে না। ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে কেমন খেলবে নেপাল? প্রশ্নটা শুনে হেসে উত্তর দিলেন, ‘এখানে ছেলেরা হারুক জিতুক সমস্যা নেই। এটা আমাদের জন্য অভিজ্ঞতার একটা সিরিজ।’