নিজেদের দল অন্য শহরে খেলায় ৫১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার মামলা

এই স্টেডিয়াম নিয়েই যত আপত্তি সমর্থকদেরছবি: টুইটার

একজন ক্রীড়ানুরাগী একটি দলের সমর্থক হন কীভাবে? একটি দলের খেলা ভালো লাগায়, দলের কোনো খেলোয়াড়ের দক্ষতায় মুগ্ধ হওয়ায়। তবে সবচেয়ে বড় কারণ নিজ এলাকার প্রতি আনুগত্য। নিজের এলাকা বা শহরের প্রতি ভালোবাসা থেকেই স্থানীয় ক্লাব বা দলের সমর্থক বনে যান সবাই। সেটা ফুটবলে দেখা যায় লিভারপুল, ম্যানচেস্টার, লন্ডন, মাদ্রিদ বা বার্সেলোনার ক্ষেত্রে। কাতালুনিয়ায় জন্ম নেওয়া কেউ রিয়াল মাদ্রিদকে সমর্থন দেওয়ার কথা কল্পনাই করতে পারেন না। লিভারপুলের কেউ কখনো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের থিয়েটার অব ড্রিমস নিয়ে স্বপ্ন দেখেন না।

সাবেক ক্রিকেটার ও বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার ডেভিড লয়েড বড় বড় সব ক্লাব ফেলে ফুটবলে ইংলিশ ফুটবলের তৃতীয় স্তরের ক্লাব অ্যাক্রিংটন স্ট্যানলিকে সমর্থন দেন, সেটি নিজ শহরের ক্লাব বলেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যতই ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক দল হোক না কেন, নিজের এলাকার দল বলেই সমর্থন পায় আইপিএলের মুম্বাই ইন্ডিয়ানস বা চেন্নাই সুপার কিংস, অথবা বিপিএলের ঢাকা, বরিশাল বা কুমিল্লা।

এ দিকটি ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না বলেই হয়তো খেপেছেন আবদিয়েল সুয়েরো। ভদ্রলোক নিউইয়র্কের নাগরিক। এই রাজ্যের দুই দল নিউইয়র্ক জায়ান্টস ও নিউইয়র্ক জেটস রাগবিতে বেশ বড় নাম। কিন্তু নামে নিউইয়র্ক থাকলেও তারা খেলছে অন্য রাজ্যের স্টেডিয়ামে। রাগে-ক্ষোভে দুই দলের বিরুদ্ধে ৬০০ কোটি ডলার বা ৫১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার মামলা করে দিয়েছেন তিনি।

নিউ ইয়র্ক জায়ান্টসরা মেট লাইফ স্টেডীয়ামে খেলেন
ছবি: টুইটার

একদিকে নিউইয়র্ক, ওদিকে নিউ জার্সি—হাডসন নদীর এপার আর ওপার। তাই বলে তাদের এক করে দেখার উপায় নেই। ভিন্ন দুই শহর ও ভিন্ন দুই রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিয়ে হলিউডের চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজে বেশ রসিকতা করা হয়। নিউইয়র্কবাসীর ‘জাত্যাভিমান’ আরও একবার টের পাওয়া গেল নতুন করে।
রাগবি লিগ ন্যাশনাল ফুটবল লিগে (এনএফএল) এই রাজ্যের দুটি দল নিউইয়র্ক জায়ান্ট ও নিউইয়র্ক জেটস বেশ পরিচিত নাম। কিন্তু দুই দলই নিজেদের ম্যাচ খেলে মেটলাইফ স্টেডিয়ামে। যে স্টেডিয়ামের অবস্থান নদীর ওপারে নিউ জার্সির পূর্ব রাদারফোর্ডে।

নিজ শহরের দলের খেলা দেখার জন্য অন্য রাজ্যে যাওয়া-আসার এই ঝামেলা, তার চেয়েও বড় কথা এই ‘অপমান’ আর সহ্য হচ্ছে না সুয়েরোর। দুই দল আসলেই কোন রাজ্যের হয়ে খেলছে, সেটার ব্যাখ্যা চেয়েছেন সুয়েরো। ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে ৬০০ কোটি ডলারের মামলাও করে দিয়েছেন! মামলায় সুয়েরো দাবি জানিয়েছেন, নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়াম থেকে দুই দল যেন ম্যাচ সরিয়ে নেয় এবং ২০২৫ সালের মধ্যে নিউইয়র্কে ফেরে। মামলার কাগজে এটাও বলা হয়েছে, দুই দল যত দিন নিউ জার্সিতে খেলবে, তত দিন যেন ইস্ট রাদারফোর্ড জায়ান্টস ও ইস্ট রাদারফোর্ড জেটস নামে খেলে!

আদালতে জমা দেওয়া কাগজে গ্রিনউইচ গ্রামের সুয়েরো বলেছেন, ‘যদি জায়ান্টস ও জেটস নিউইয়র্কের দল হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে চায়, তাহলে তাদের নিউইয়র্কে ফিরে আসতে হবে। আমি গণপরিবহন ও গাড়ি ব্যবহার করে মেটলাইফ স্টেডিয়ামে যাওয়া-আসা করেছি। দুটি পথই দুঃস্বপ্নের মতো। ম্যাচের দৈর্ঘ্যের চেয়ে যাতায়াতেই সময় বেশি যায়। পুরো দিনটাই নষ্ট হয়ে যায়। যাতায়াতের পেছনে ম্যাচের টিকিটের মতোই খরচ হয়।’

মামলার বিবৃতিতে লেখা, ‘ম্যাচের দিন গণপরিবহন বা গাড়ি ব্যবহার করে নিউইয়র্ক শহর ও রাজ্য থেকে নিউ জার্সির পূর্ব রাদারফোর্ডে যেতে বাধ্য হওয়ায় মামলার বাদী ও লাখ লাখ সদস্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে, কারণ এটা ব্যয়বহুল ও এতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বাদীর মতোই জায়ান্টস ও জেটসের ৯০ ভাগ সমর্থকই নিউইয়র্কে বাস করেন।’

মামলায় বলা হয়েছে, দুই দলের কারণে বাদীর মতো এই দুই দলের সব সমর্থক ‘মানসিক ও আবেগজনিত ক্ষতির শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে অবসাদ, মন খারাপ ও দুশ্চিন্তার মতো ব্যাপারও আছে।’ মামলায় ২০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে। আর বাড়তি শাস্তি হিসেবে আরও ৪০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ক্ষতিপূরণের অর্থ নিউইয়র্কে বাস করা দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেটস কোনো জবাব দেওয়ার প্রয়োজন দেখেনি। তবে জায়ান্টস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই এবং আমরা এর কড়া জবাব দেব।’ জায়ান্টস রাদারফোর্ডে ১৯৭৬ সাল থেকেই খেলছে। আর জেটস তাদের সঙ্গী হয়েছে ১৯৮৪ সালে।