ধর্ষণ মামলায় কারাগারে বাংলাদেশের অলিম্পিয়ান জহির রায়হান
বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসে এসেছিলেন জহির রায়হান। ৪০০ মিটার দৌড়ে দেশসেরা তরুণ চোখ কাড়েন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও। তাঁকে নিয়ে আস্তে আস্তে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, তা এতটাই যে দেশের দ্রুততম মানব–মানবীকে বাদ দিয়ে গত টোকিও অলিম্পিকে একমাত্র অ্যাথলেট হিসেবে বাংলাদেশ থেকে জহিরকে পাঠায় অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।
এ নিয়ে আপত্তি তুলে দ্রুততম মানব মোহাম্মদ ইসমাইল নিষিদ্ধও হয়েছিলেন। যাঁকে নিয়ে দেশের অ্যাথলেটিকসের এত আশা, সেই জহির কিনা একটি ধর্ষণ মামলায় গতকাল গ্রেপ্তার হয়ে এখন গাজীপুর কারাগারে!
গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পিপি এ বি এম আফফান আজ প্রথম আলোকে বলেন, জহির রায়হান হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। বুধবার তিনি নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে এলে আদালতের বিচারক তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় আদালতে মামলার বাদী ওই নারী উপস্থিত ছিলেন। গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার বজলুর রশিদ বলেন, ‘গতকাল অ্যাথলেট জহির রায়হানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
জানা গেছে, ২০১৯ সালে এক নারী অ্যাথলেট জহিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইবুন্যালে করা অভিযোগে বাদী বলেন, ২০১৭ সালে সাভার বিকেএসপিতে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস দলের প্রশিক্ষণ চলাকালে জহিরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান তাঁরা। এরপর তাঁকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সংসার করার প্রতিশ্রুতি দেন বলে বাদীর অভিযোগ।
২০১৯ সালের ৩ মে বিয়ে করার কথা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জহির তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে বাদী উল্লেখ করেন। সেই মামলায় গতকাল গাজীপুরের নারী ও শিশুবিষয়ক ট্র্যাইব্যুনালে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে জামিন নামঞ্জুর করে জহিরকে হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
শুধু এই ঘটনা নয়, জহিরের বিরুদ্ধে আরও এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী গত ২ সেপ্টেম্বর জহিরের কর্মস্থলে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় এবং পরের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুবার জহির ধর্ষণ করেন বলে ওই নারীর অভিযোগ।
বিকেএসপিতে গত ২০ নভেম্বর শুরু হওয়া অ্যাথলেটদের আবাসিক ক্যাম্পে ছিলেন জহির। সেই ক্যাম্প থেকে হঠাৎ গতকাল নিরুদ্দেশ তিনি। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন বলছে, জহির কোথায় আছেন, তা জানে না তারা। যোগাযোগ করা হলে আজ বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব বলেন, ‘আজ সকালে বিকেএসপি থেকে জাতীয় দলের কোচ ফৌজিয়া হুদা জুঁই লিখিতভাবে আমাদের জানিয়েছে, জহির বুধবার থেকে ক্যাম্পে নেই। কিছু না জানিয়ে সে চলে গেছে।’
যদি সেটাই হয়, থানায় ডায়েরি করেছেন কি না, জানতে চাইলে রকিবের কথা, ‘আমরা সেটা করিনি।’ কেন করেননি প্রশ্ন করলে এবার তাঁর উত্তর, ‘শুনেছি, সে গ্রেপ্তার হয়েছে। চেষ্টা করছি, আসল খবরটা জানতে।’ জহিরের ব্যাপার এখন কী সিদ্ধান্ত হবে, জানতে চাইলে রকিবের কথা, ‘আমরা ফেডারেশনের জরুরি সভা ডেকেছি। সেখানেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেব।’
প্রশ্ন আসছে, ২০১৯ সালে জহিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হলেও তাঁকে টোকিও অলিম্পিকে কেন পাঠানো হলো? ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দাবি, ‘মামলার বিষয়টা আমরা জানতাম না। আমাদের কেউ কিছু বলেনি।’