মৃত্যু অমোঘ। তাই বলে এমন মৃত্যু!
আগামীকাল বিকেলে ঢাকায় বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাঁর থাকার কথা ছিল। সাতক্ষীরার ফুটবল কোচ আকবর আলী পুরস্কারও পেতেন এই অনুষ্ঠানে। ২০২১ সালের তৃণমূলের সেরা কোচ হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। কিন্তু পুরস্কারটা তাঁর আর নেওয়া হলো না। পুরস্কার নিতে ঢাকা আসার জন্য আজ বিকেলে যখন তৈরি হচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান।
পাশেই হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আকবর আলীর স্ত্রী প্রথম আলোকে টেলিফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি, আমার স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে ঢাকা আসার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। উনি ব্লেজারও পরেছেন। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ মাটিতে পড়ে যান। সম্ভবত তখনই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। অবিশ্বাস্য এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।’
বাংলাদেশের নারী ফুটবলে অনেক অবদান আকবর আলীর। জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ অনেক খেলোয়াড় তাঁর হাতে গড়া। দেশের সাবেক দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারও তাঁর হাতে তৈরি। সাতক্ষীরায় একটি ফুটবল একাডেমি তৈরি করেছেন এই কোচ, যেখানে নিজ উদ্যোগে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের খেলায় নিয়ে আসেন। তাঁর দুই যমজ মেয়ে রিক্তা–মুক্তা খেলেছেন বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দলে। এই দুজনসহ সাতক্ষীরার অনেক মেয়ে জাতীয় খো খো দলেও খেলেছেন। হ্যান্ডবলেও তিনি ঢাকায় দল নিয়ে আসতেন। বলতে গেলে তিনি ছিলেন খেলার ফেরিওয়ালা।
দেশের খেলাধুলায় বিপুল অবদান রেখেও এই মানুষটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা জেলা-বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের কোনো স্বীকৃতি পাননি। এবার তাঁকে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি মনোনীত করলেও পুরস্কারটা আর হাতে তোলা হলো না।
এমন ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ আকবর আলীর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দেশের ফুটবলাঙ্গনে।