‘কোচ বলাতেই ফুটবলার থেকে অ্যাথলেট হয়েছি’

বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমানছবি: শামসুল হক

‘ভিনি, ভিডি, ভিসি’—এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। ইংল্যান্ডপ্রবাসী অ্যাথলেট ইমরানুর রহমানের সঙ্গে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের এ কথাটা বেশ মিলে যাচ্ছে।

কাল প্রথমবারের মতো জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই দ্রুততম মানব হয়েছেন ইমরানুর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জার্সিতে সেরা হওয়ার পথে সময় নিয়েছেন ১০.৫০ সেকেন্ড (ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডে), ভেঙেছেন প্রয়াত অ্যাথলেট মাহবুব আলমের ২২ বছর আগের রেকর্ড।

কাল বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে নিজের অ্যাথলেটিকস ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন ইমরানুর।

প্রশ্ন :

রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ–অধ্যায় শুরু করলেন। আপনার নতুন পরিচয় বাংলাদেশের দ্রুততম মানব। এতটা আশা করেছিলেন?

ইমরানুর রহমান: রেকর্ডের বিষয়টি পরে শুনেছি। তবে ভালো কিছু করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। নিজের যোগ্যতার ওপর আস্থা আছে। আমি কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে শৃঙ্খলার মধ্যে জীবন যাপন করি। আজ সকালে হিটে ভালো করার পর থেকেই ভালো কিছু হবে, এই বিশ্বাস ছিল।

জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই দ্রুততম মানব হয়েছেন ইমরানুর
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে এই অল্প কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তো কঠিন। নিজের সেরাটা কি দিতে পেরেছেন?

ইমরানুর: ঢাকায় থাকলেও আমি এখনো ইংল্যান্ডের জীবনযাপনের মধ্যে আছি। প্রতিদিন ভোররাত সাড়ে চারটায় আমার ঘুম ভেঙে যায়। এরপর আর ঘুমাতে পারি না। আসলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। এর চেয়েও ভালো করার সামর্থ্য আছে আমার। এ সময়ে আমি কখনো ১০০ মিটারে দৌড়াইনি, সেভাবে প্রস্তুতিও নেই। এত দিন এপ্রিল, মে, জুন মাসে আমি ১০০ মিটার দৌড়েয়েছি। সাধারণত এই সময়টাতে আমি ৬০ মিটার ইভেন্টে দৌড়াই।

প্রশ্ন :

গত ২৯ নভেম্বর আপনাকে বাংলাদেশি হিসেবে খেলার ছাড়পত্র দিয়েছে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস সংস্থা। তখনই কি সিদ্ধান্ত নেন এবার জাতীয় অ্যাথলেটিকসে খেলবেন?

ইমরানুর: এই বিষয়টা নিয়ে এক বছর ধরে কাজ চলছিল। ছাড়পত্রের অপেক্ষায় ছিলাম। পাওয়ার পরই ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মন্টু ভাই (অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব) আমার সঙ্গে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে খেলার ব্যাপারে আলাপ করেন। শেষ পর্যন্ত সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলাম। আল্লাহ আমাকে ভালো কিছু উপহার দিয়েছেন।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ নিয়ে আপনার নিজের স্বপ্ন কী?

ইমরানুর: আমি বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ান গেমস থেকে মেডেল আনার স্বপ্ন আছে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ান ইনডোর গেমস আছে। সেখানে ৬০ মিটারে আমার খুব ভালো করার সুযোগ দেখছি আমি। এই ইভেন্টে জাপান, কোরিয়া, চীনের সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য আছে আমার। ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ইনডোর অ্যাথলেটিকস ৬০ মিটারে আমার সেরা সময় ৬.৬৮ সেকেন্ড। আমার মূল ইভেন্ট ৬০ ও ১০০ মিটার।

প্রশ্ন :

অ্যাথলেটিকসে আসা কীভাবে?

ইমরানুর: ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে থাকি। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সেখানে ফুটবল খেলতাম। আমার দ্রুতগতি দেখে কোচ বললেন অ্যাথলেটিকসে চেষ্টা করতে। কোচ বলাতেই ১৯ বছর বয়স থেকে অ্যাথলেট হওয়ার চেষ্টা শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইনডোরে ৬০ মিটারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতাম বেশি। কয়েক বছর আগে থেকে ১০০ মিটারেও জোর দিয়েছি।

ইমরানুর ইংল্যান্ডে অনুশীলন করতে বেশি আগ্রহী
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই। বাংলাদেশে যাওয়া-আসা শুরুটা কবে থেকে?

ইমরানুর: আমরা তিন ভাই-বোন (ছোট দুই বোন)। বাবা ইংল্যান্ডে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করেন। মা গৃহিণী। দাদা ও নানাবাড়ি সিলেটে। সেখানে নানা-নানি, মামা-মামি আছেন। এবারসহ পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। বাংলাদেশে প্রথমবার এসেছিলাম ১৯৯৬-৯৭ সালে। তখন আমার ৩ বছর বয়স।

প্রশ্ন :

আপনাকে জাতীয় দলে ডাকা হচ্ছে নিশ্চিত, সে ক্ষেত্রে আপনাকে বেশি সময় অবস্থান করতে হতে পারে বাংলাদেশে। শুনেছি আপনি প্রাইভেট কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করছেন। মানিয়ে নেবেন কীভাবে?

ইমরানুর: চাকরি নিয়ে আমার কোনো সমস্যা সেই। তবে আমি ইংল্যান্ডে অনুশীলন করতে বেশি আগ্রহী। সেখানে অনেক ভালো সুযোগ–সুবিধা আছে। ভালো পারফরম্যান্সের জন্য সহায়ক হবে। বাংলাদেশ ডাকলেই আমি আসার জন্য প্রস্তুত আছি।

প্রশ্ন :

ডেনমার্ক থেকে এসে প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া এখন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

ইমরানুর: পত্রিকায় পড়েছি তাঁর কথা। ইংল্যান্ড থেকে একজন ফুটবলারও এসেছেন বলে জানি। আমার মা-বাবা চান আমি বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড়াচ্ছেন ইমরানুর (ডানে)
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এখন আপনার বয়স ২৮। আর কত দিন নিজের সেরাটা দিতে পারবেন বলে মনে করেন?

ইমরানুর: গত বছর লন্ডনে লিভেলি অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ১০.২৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজের সেরা টাইমিং করেছি। ৩৪ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের সেরাটা দিতে পারব বলে আশা করি। ক্রীড়াবিজ্ঞান উন্নতি হওয়ায় খেলোয়াড়েরা এখন ৩৪-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবে খেলতে পারছেন। ফুটবলে রোনালদো, মেসিকে দেখুন। অ্যাথলেটিকসে জাস্টিন গ্যাটলিন।