‘ইজ্জতে লাগে’ মিজানুরের
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জিমনেসিয়ামের ম্যাটে ফাইট করছিলেন মিজানুর রহমান। গ্যালারি থেকে উচ্চ স্বরে ভেসে আসছিল ‘স্যার কিক...স্যার কিক...’। গ্যালারিতে বসে থাকা বাকি প্রতিযোগীদের বেশির ভাগই মিজানুরের ছাত্র। তাই তিনি ম্যাটে নামলে ভেসে আসে ‘স্যার...স্যার...’।
দেশের সিনিয়র ফাইট ইভেন্টটায় নিজেকে অপরাজেয় করে রেখেছিলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ২০০৫ সালে ফাইট শুরু করার পর তাঁকে আর কেউ হারাতে পারেননি। আজও অনায়াসে ফাইট ঊর্ধ্ব–৮৭ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই তায়কোয়ান্দোকার। ২৩–০৯ স্কোরে বড় ব্যবধানে জেতার পথে ৩৮ বছর বয়সী মিজানুরের খেলা দেখে স্পষ্ট যে আরও কয়েক বছর তাঁর রাজত্বে ভাগ বসানোর মতো কেউ নেই। কিন্তু খেলাটি শেষ করেই ‘ফাইটিং’ ইভেন্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তিনি।
২০০৬ সালে কলম্বো সাফ গেমসে তায়কোয়ান্দো ইভেন্ট থেকে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন মিজানুর। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেটি ছিল তাঁর প্রথম পদক। এরপর আন্তর্জাতিক আসরে জিতেছেন আরও চার সোনা। জাতীয় পর্যায়ে তায়কোয়ান্দোর ‘ফাইট’ ইভেন্টে অপরাজেয় ৩৮ বছর বয়সী মিজানুর। ২০০৫ সালে খেলা শুরুর পর আজকেরটিসহ সোনা জিতেছেন মোট ২৯টি। এখানেই শেষ দেখছেন নিজের, ‘জাতীয় পর্যায়ে ফাইটিংয়ে কেউ আমাকে কখনো হারাতে পারেননি। এটাই আমার শেষ। ভবিষ্যতে আমি শুধু পুমসে ইভেন্টে খেলব।’
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেরা ফর্মে থাকা অবস্থায় অবসর নেওয়ার ঘটনা খুবই কম। সেখানে মিজানুরকে আলাদা করে রাখতে হচ্ছে। ইচ্ছা করলে অনায়াসে খেলাটি চালিয়ে যেতে পারতেন মিজানুর। তাহলে অবসর কেন? অবসরের কারণটাও অদ্ভুত, নিজের ছাত্র ও তরুণদের সঙ্গে খেলতে সম্মানে বাধে তাঁর। মিজানুরের ব্যাখ্যা, ‘এখনো আমাকে হারানোর মতো কেউ নেই। কিন্তু ফাইটিংয়ে কায়িক পরিশ্রম বেশি হয়ে যায়। এখন সেনাবাহিনীর কোচের সঙ্গে অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পালন করছি। অন্য খেলোয়াড়েরা অনেক ছোট। আমার ইজ্জতে লাগে।’
প্রায় ১৬ বছরের ফাইটিং ক্যারিয়ারের বিদায়বেলায় জমে আছে একটা আক্ষেপও। কখনো যে খেলা হয়নি অলিম্পিক। মিজানুর বলছিলেন, ‘একটা অলিম্পিক খেলতে পারলে ভালো লাগত। এর সঙ্গে এশিয়ান পর্যায় থেকে বাংলাদেশকে ভালো কোনো পদক এনে না দিতে পারার আক্ষেপও আছে আমার।’ নিজের আক্ষেপগুলো মেটাতে চান ছাত্রদের মাধ্যমে।