যেভাবে আমেরিকান ফুটবলের সুপারবোল ‘জিতলেন’ টেইলর সুইফট
ব্রিটিশ টেনিস তারকা অ্যান্ডি মারে টুইট করলেন, ‘৫৮তম সুপারবোল জেতার জন্য টেইলর সুইফটকে অভিনন্দন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।’
স্বাভাবিকভাবেই এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পপতারকা সুইফটের আমেরিকান ফুটবলের (এনএফএলের) শিরোপা জেতার কথা নয়। হাফটাইম শোতেও পারফরম্যান্স করেননি তিনি। এরপরও মারের মনে হচ্ছে, জিতেছেন সুইফটই।
লাস ভেগাসের অ্যালেজায়ান্ট স্টেডিয়ামে সুইফটের উপস্থিতি শিরোনাম কাড়ারই কথা ছিল। তিনি ছিলেন টোকিওতে, তাঁর বিখ্যাত ‘এরাস’ ট্যুরে। সেখান থেকে বিশ্বের আরেক প্রান্তে তিনি উড়ে আসেন কানসাস সিটি চিফসের তারকা প্রেমিক ট্রাভিস কেলসির সুপারবোল ফাইনাল দেখতে। সান ফ্রান্সিস্কো ফোরটিনাইনারসকে ওভারটাইমে ২৫-২২ ব্যবধানে হারিয়ে এনএফএলের (আমেরিকান ফুটবল) শিরোপা জিতেছে চিফস। সর্বশেষ পাঁচ মৌসুমে এটি তাদের তৃতীয় শিরোপা।
গত সেপ্টেম্বরে কেলসির সঙ্গে সুইফটের সম্পর্কের গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমেরিকান ফুটবলের দিকে ঝুঁকেছে নতুন এক শ্রেণির দর্শক। কারও কাছে এনএফএলকে নতুন দর্শকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দারুণ এক উপায় এটি। কেউ বলছেন, মাঠের যে আসল গল্প, সে সব থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে তা। ৫৮তম সুপারবোলের পরও অবশ্য দুই পক্ষের কারোরই অবস্থান বদলানোর কথা নয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পপ তারকা ও কোনো খেলার অন্যতম সেরা তারকা-এ যেন ডেভিড বেকহাম ও ভিক্টোরিয়া বেকহামের সেই গল্প। তবে আরও বেশি আমেরিকান রসদে ভরপুর।
মৌসুমের একটা বড় অংশে চিফসের অ্যারোহেড স্টেডিয়ামে সুইফটের উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। কেলসির মা ও চিফসের কোয়ার্টারব্যাক প্যাট্রিকের স্ত্রী ব্রিটানি মাওমেসের সঙ্গে বসে খেলা দেখেছেন সুইফট। পাপারাজ্জিদের কাছে যা ছিল স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার।
কেলসির সঙ্গে সম্পর্কের কথা সুইফট নিশ্চিত করেন গত ডিসেম্বরে। মাত্রই টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের খেতাব পেয়েছেন তিনি তখন। কীভাবে তাঁদের সম্পর্ক তাঁকে আমেরিকান ফুটবলে আনল, সুইফট ব্যাখা করেন সেটিও। দুটি আলাদা জগত মিলে যায় এভাবেই।
সুইফটের অনুসারীরা নাকি চাইলে প্রভাব ফেলতে পারেন ডিমের দাম বাড়ানো-কমানোতেও। সেই সুইফটের প্রভাব পড়েছে আমেরিকান ফুটবলের টেলিভিশন দর্শকসংখ্যাতেও। বিশেষ করে তরুণীদের উপস্থিতি এনএফএল ও চিফসের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রায় ৩৩ কোটি ১০ লাখ ইউএস ডলার। প্রথম যে ম্যাচে সুইফট স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন, এরপর কেলসির চিফস জার্সির রেপ্লিকা বিক্রির হার বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ।
বাড়তি এই মনযোগের ব্যাপারটি কেলসি উপভোগই করছেন। সুপারবোলের আগে তিনি যেমন বলেছেন, ‘সুইফটিদের চিফসের রাজ্যে জড়ো করতে পারা এবং ফুটবল দুনিয়ার সামনে হাজির করাটা উপভোগ্য।’
সুপারবোলের আগে সবচেয়ে বড় প্রশ্নও ছিল-সুইফট কি জাপান থেকে সময়মতো পৌঁছাতে পারবেন? কদিন আগেই খবর এসেছে, সুইফটের ব্যক্তিগত প্লেনের অবস্থান ট্র্যাক এক করা এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এমনিতে প্যাসিফিক সময়ের চেয়ে জাপান ১৭ ঘণ্টা এগিয়ে। ১২ ঘণ্টার ফ্লাইটের পর সুইফট লাস ভেগাসে পৌঁছাতে পেরেছেন সময়মতোই।
তবে এই যুগলকে ঘিরে সংবাদমাধ্যমের যে আগ্রহ, তা সবাইকে খুশি করতে পারছে না।
সুপারবোলের আগে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ও সামনে আসে। ডানপন্থী সমালোচকেরা বলেন, সুইফটের এ সম্পর্ক আসলে জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত করার পরিকল্পনার অংশ। এনএফএল কমিশনার রজার গুডেল সেটিকে উড়িয়ে দিয়েছেন ‘ননসেন্স’ বলে।
অবশ্য এনএফএলের শুদ্ধবাদীদের মতে, সুইফটের উপস্থিতি ঘিরে এ আলোড়ন দৃষ্টিকে সরিয়ে নেবে। তাঁদের মতে, এ সবের কারণে আমেরিকান ফুটবল তারকারা কম মনযোগ পাবেন।
যিনি মঞ্চ কাঁপিয়ে চলেন বারবার, সেই সুইফটও ভেগাসের ক্যামেরাম্যানদের হতাশ করেননি। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে মাঠের বড় পর্দায় দেখানো হয়েছে সুইফটকে। মাঠে ফোরটিনাইনারসের সমর্থকদের সংখ্যাই ছিলেন বেশি, তাঁরা অবশ্য তাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়াই দেখিয়েছেন।
এমনিতে ম্যাচের বড় একটা অংশে সুইফটের প্রেমিক কেলসির সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল কোচ অ্যান্ডি রিডের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া। তবে চতুর্থ কোয়ার্টারে এসে বদলে যায় তাঁর পারফরম্যান্স। ওভারটাইমে গিয়ে জেতে চিফস।
সুইফটের প্রতিক্রিয়া ছিল দেখার মতোই। অনেকেই আশা করেছিলেন, সুপারবোলের ট্রফিকে পাশে রেখে বিয়ের প্রস্তাবও আসবে। সেটি হয়নি।
তবে নতুন সমর্থকেরা দারুণ এক ম্যাচই দেখেছেন মাঠে। যেটি আমেরিকান ফুটবলের বড় একটা বিজ্ঞাপনই হতে পারে। অন্তত পরের মৌসুম পর্যন্ত ওই সমর্থকেরা এনএফএলের সঙ্গে থাকবেন, তা আশা করাই যায়!
এনএফএলের ফাইনালে তো জিতলেন সুইফটও।