জাতীয় দল গঠন নিয়ে টেবিল টেনিসে অস্থিরতা
বাংলাদেশের টেবিল টেনিসে খেলোয়াড়-কর্মকর্তা দ্বন্দ্ব অনেক দিনের পুরোনো। বছর দুয়েক তা আড়ালে থাকার পর আবার প্রকাশ্যে এসেছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ভবনে আজ বাংলাদেশ টেবিল টেনিস খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে ফেডারেশনের সহসভাপতি খোন্দকার হাসান মুনীরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জাতীয় টিটি খেলোয়াড় জাভেদ আহমেদ।
জাভেদের অভিযোগ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য বাংলাদেশ দল গঠনে অনিয়ম হয়েছে। জাতীয় দল গঠনে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম চারজনকে নেওয়ার কথা। কিন্তু শীর্ষ তিনজনকে নেওয়া হলেও চতুর্থজনকে নেওয়া হয়নি। চতুর্থজনের বদলে নেওয়া হয়েছে জুনিয়রের সেরা খেলোয়াড়কে। জাভেদের ক্ষোভ, তিনি চতুর্থ র্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড় হলেও তাঁর বদলে নেওয়া হয় অন্য একজনকে।
জাভেদ বলেন, ‘আমার খেলোয়াড়ি জীবনের ২০ বছরে এই অদ্ভুত নিয়ম দেখিনি। এত বছরে দেখেছি, র্যাঙ্কিংয়ের সেরা খেলোয়াড়েরাই জাতীয় দলে থাকে। কিন্তু আমি চতুর্থ র্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড় হলেও আমাকে বাদ দিয়ে ১৮ নম্বর র্যাঙ্কিংয়ের খেলোয়াড় নেওয়া হয়েছে। এটা অনিয়ম নয়তো কী!’ জাভেদ মূলত পঞ্চম র্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড়। যেহেতু র্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে থাকা মানস চৌধুরী আন্তর্জাতিক খেলা থেকে অবসর নিয়েছেন ২০২১ সালে, তাই জাতীয় দল গড়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ চারে এখন জাভেদ।
জাভেদের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ টিটি ফেডারেশনের সহসভাপতি খোন্দকার হাসান মুনীর। নিয়মমতোই কোরিয়াগামী জাতীয় দল গড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। হাসান মুনীর বলেছেন, ‘দল গঠনের ক্ষেত্রে ওঠা অভিযোগ অসত্য ও সত্যের অপলাপ মাত্র। বাংলাদেশ টেবিল টেনিস দল গড়ার ক্ষেত্রে বলা আছে, র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম তিনজন যাবে। মেয়েদের বেলায়ও একই নিয়ম। মানস যেহেতু অবসর নিয়েছে ২০২১ সালে, তাই তার পরিবর্তে পরবর্তী র্যাঙ্কিংয়ের খেলোয়াড় যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে চতুর্থজনকে নিয়ে। চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে দেশসেরা জুনিয়র খেলোয়াড়কে নেওয়ার বিধান ছিল ১৯৯২ সালেও। যখন সেরা জুনিয়র হিসেবে দেশসেরাদের সঙ্গে জাতীয় দলে ছিল মানস চৌধুরী।’
হাসান মুনীর যোগ করেন, ‘২০২১ সালে ২৫তম এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দল পাঠানোর বেলায়ও র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম তিনজনের সঙ্গে চতুর্থজন হিসেবে নেওয়া হয় তখকার দেশসেরা জুনিয়র খেলোয়াড়কে। সে সময় জুনিয়রে সেরা রামহিম লিয়ন বাম জাতীয় দলে আসে। একইভাবে এবারও প্রথম তিনের সঙ্গে দেশসেরা জুনিয়রকে নিয়েছে দলে। ২০২১ সালে টিটি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ৪ নম্বর খেলোয়াড় পাঠাতে পারলে একজন জুনিয়র পাঠানো হবে। তাই কিছুদিন আগে যুব গেমসে সেরা হওয়া নাফিস ইকবাল ও মেয়েদের বিভাগে সেরা খই খই চাকমাকে সুযোগ দেওয়া হয় কোরিয়াগামী দলে। এখানে অনিয়ম কিছু হয়নি। টিটিতে অশুভ কিছু আগেও ছিল না, এখনো নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না।’
তবে জাভেদের পাল্টা দাবি, ‘নিয়ম না মেনেই দল গঠন করা হয়েছে। ফেডারেশন সহাসভাপতি ভুল তথ্য দিচ্ছেন। জাতীয় দলে কোনো জুনিয়র কোটা নেই। র্যাঙ্কিংয়ের সেরারাই সুযোগ পাওয়ার কথা। তা ছাড়া আমাকে ক্যাম্পে ডাকা হয় না দুই বছরের বেশি সময় ধরে। এভাবে অনেক খেলোয়াড়কেই ডাকা হয় না। কারণ, তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। এমনকি আমাদের অনুশীলনের সুযোগও দেওয়া হয় না।’
ফেডারেশনের সহসভাপতি হাসান মুনীর এসব অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন, ‘গত এসএ গেমসের সময় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন নিয়ম করেছিল, যত বড় খেলোয়াড়ই হোক, ক্যাম্পে না থাকলে জাতীয় দলে খেলতে পারবে না। পরে এই নিয়মটা আমরা বহাল রেখেছি। এটা বাস্তবায়নের পর থেকে আমি খারাপ হয়ে গেলাম। গত কয়েকটি ক্যাম্প হয়েছে সিনিয়রে সেরা চারজনকে নিয়ে। এবারও সেরা চারজন ডাক পেয়েছে জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ফলে জাভেদ ডাক পায়নি।’
খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির আজকের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না সংগঠনের সভাপতি মানস চৌধুরী। তিনি একটি ভিডিও বার্তা দেন। মানস চৌধুরী তাতে বলেছেন, ‘এক ব্যক্তির খেয়ালখুশিমতো জাতীয় দল গড়া হচ্ছে। ২০২১ সালে জাতীয় দল গঠনে স্বজনপ্রীতির অভিযোগে আমি রাগে ও ক্ষোভে আন্তর্জাতিক টিটি থেকে অবসর নিই। আমার অনুপস্থিতিতে জাতীয় দলের আরেক খেলোয়াড় জাভেদকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে এবার।’
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসান মুনীরের ভাষ্য, ‘জাভেদ-মানসরা অসত্য বলছে। ২০২১ সালে যখন সিদ্ধান্ত হয় চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে জুনিয়র নেওয়া হবে, তখন মানসের প্রিয় খেলোয়াড় সজীব বাদ পড়ে যাচ্ছিল। এ কারণে সে নিজের নাম প্রত্যাহার করে সজীবকে দলে নেওয়ার অনুরোধ করে। এখানে অনিয়ম কোথায় হলো? বরং মানস স্বেচ্ছায় সরে গেছে।’
জাতীয় টিটি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য, জাতীয় টিটি দলের প্রধান কোচ এবং ফেডারেশনের টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলীরও একই ভাষ্য, ‘২০২১ সালেও আমরা তখনকার তরুণ রামহিমকে জাতীয় দলে নিই। আমরা চাই জুনিয়র খেলোয়াড় তৈরি হোক। এবারও একইভাবে একজন জুনিয়র খেলোয়াড়কে নেওয়া হয়েছে জাতীয় দলে। সেটা কোনো ব্যক্তি নয়, ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। এখানে অনিয়মের কিছু নেই।’
খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির আজকের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন টিটির খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিপন খান। ছিলেন সহসভাপতি মাহবুব বিল্লাহ, মৌমিতা আলম রুমিসহ কয়েকজন।