একটা একটা করে সিঁড়িতে পা রাখছেন। দেখাচ্ছেন ঝলকও। এ বছরই এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে চমকে দিয়েছেন। এশীয় শীর্ষস্তরে এই প্রথম বাংলাদেশি কোনো অ্যাথলেট হিসেবে পাওয়া ওই সাফল্য ইমরানুর রহমানকে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে সাহস জোগাচ্ছে।
সেই ধারাবাহিকতায় ৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন স্বীকৃত একটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১০.১১ সেকেন্ড টাইমিং করেছেন। যেটিকে নতুন জাতীয় রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।
এই টাইমিং এ বছরের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এশীয় র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে এনেছে ইমরানুরকে। যৌথভাবে আরও দুজনের সঙ্গে সপ্তম স্থানে এখন ইমরানুর, ক্রমতালিকার নয়ে। ১০.১১ সেকেন্ড টাইমিং জাপানের ইউকি কোইকি ও মালয়েশিয়ার মোহাম্মদ আজিম ফাহমিরও। জাপানের আবদুল হাকিম সানি ব্রাউন ৯.৯৭ সেকেন্ড নিয়ে আছেন শীর্ষে। ইমরানুর ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো অ্যাথলেট নেই এশিয়ার সেরা দশে।
তাহলে তো হাংজু এশিয়ান গেমসে ১০০ মিটারে ইমরানুরের সেরা আটে থাকা খুবই সম্ভব। যে কেউ তা মানবেন। আর সেরা আট মানে তো ফাইনাল। সেই লক্ষ্য নিয়েই নিজের প্রথম এশিয়ান গেমসে যাচ্ছেন বাংলাদেশের তিনবারের দ্রুততম মানব। ২৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন থেকে সরাসরি যাবেন হাংজু, ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর ১০০ মিটার।
লড়াইয়ের মঞ্চে নামার আগে লন্ডন থেকে ইমরানুর বললেন স্বপ্নের কথা, ‘আমার যা সামর্থ্য, তাতে মনে করছি এশিয়ান গেমসে ১০০ মিটারে ফাইনালে ওঠা সম্ভব। তবে একই সঙ্গে আমি সতর্কও। কারণ, এটি উঁচু মানের প্রতিযোগিতা, এশিয়ার সেরা অ্যাথলেটরা খেলবেন, খুব চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আমি পুরো মনোযোগ রাখছি ভালো টাইমিংয়ের দিকে।’
বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেট অতীতে কখনো এশীয় পর্যায়ে ১০০ মিটারের ফাইনালে যেতে পারেননি। হিটেই মূলত বাদ পড়ে যেতেন সবাই। তবে ইমরানুর যে আলাদা, আরেকটি তথ্যে তা বোঝা যাচ্ছে। বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের ওয়েবসাইটে ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বের অ্যাথলেটদের ১০০ মিটারের যে টাইমিং দেওয়া আছে, তাতে এশিয়ানদের মধ্যে ইমরানুরের অবস্থান ৩৫তম। সেটা আসলে সম্ভব হয়েছে উন্নত প্রশিক্ষণের কল্যাণে।
লন্ডনে বেড়ে ওঠা ইমরানুরের নিজস্ব কোচ আছে, বাংলাদেশের অন্য অ্যাথলেটদের জন্য যা দূর কল্পনা। তবে এশিয়াডে তিনি পাচ্ছেন না নিজের কোচকে। যখন তাঁর কোচকে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় এশিয়াডে, তত দিনে নাকি নাম পাঠানোর সময় শেষ। তাই কোচ ছাড়াই তাঁকে যেতে হচ্ছে।
কোচ যান বা না যান, ইমরানুরের চেষ্টা থাকবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজের ছাপ রাখার। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যা তিনি এরই মধ্যে কিছুটা রেখেছেন।
১৯ আগস্ট হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রাথমিক রাউন্ডে নিজের হিটে হয়েছেন প্রথম। যদিও টাইমিং ভালো নয়, ১০.৫০ সেকেন্ড। জুলাইয়ে থাইল্যান্ডে এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটারে ইমরানুর টাইমিং করেন ১০.২৫ সেকেন্ড, যেটিকে জাতীয় রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। তারপর লন্ডনে ক্যারিয়ার–সেরা ১০.১১ সেকেন্ড টাইমিং তাঁকে নিয়ে এসেছে আরও ওপরের দিকে।
এখন সময় এশিয়ান গেমসে নিজেকে মেলে ধরার। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার। এ জন্য দরকার ছিল ভালো প্রস্তুতির। এশিয়াড প্রস্তুতি নিয়ে ইমরানুর সন্তুষ্টই, ‘সঠিক প্রস্তুতিটাই আমি নিচ্ছি। যাতে আমি এশিয়ান গেমসে ভালো পারফর্ম করতে পারি। আসলে সব সময়ই চেষ্টা করি টাইমিং ও র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি আনতে। দেখা যাক, এশিয়াডে কত দূর কী করতে পারি। আমি আমার সেরাটা দেব।’
হাংজু এশিয়াডে ১৭টি খেলায় বাংলাদেশের ২৪০ জনের বিশাল যে বহর অংশ নিচ্ছে, তাতে দলীয় ইভেন্ট ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি। ব্যক্তিগত ইভেন্টে কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছেন না ফাইনালে উঠবেন। ইমরানুরের যা টাইমিং, তাতে তাঁর পক্ষে বাজি ধরছে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব বলছেন, ‘আমরা আশা করছি ইমরানুর এশিয়াডে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ফাইনালে উঠবে।’ কিন্তু ইমরানুরের সমস্যা হলো, ৬০ মিটার পর্যন্ত খুব ভালো দৌড়ান। যার প্রমাণ এশিয়ান ইনডোরে তাঁর সোনা জয়। ১০০ মিটারে শেষ দিকে পিছিয়ে পড়েন। গত কয়েকটি প্রতিযোগিতায় তা দেখা গেছে। ইমরানুর বললেন, শেষ কয়েক মিটারে আরও ভালো করতে চান।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবার শুধু অ্যাথলেটিকসে ইমরানুরকেই এশিয়াডে পাঠাচ্ছে। ‘অন্যরা কিছু করতে পারবে না’ বলে বাদ। তাই অন্যরা ক্ষুব্ধ, হতাশ, মর্মাহত।