অলিম্পিকে জেলখাটা ধর্ষকের অংশ নেওয়া নিয়ে তোলপাড়, আইওসিকে তদন্তের আহ্বান
শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত কেউ কীভাবে অলিম্পিকে অংশ নিতে পারে? প্যারিস অলিম্পিক শুরুর আগে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে (আইওসি) এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ব্যাপারটি তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
নেদারল্যান্ডস বিচ ভলিবল স্কোয়াডের খেলোয়াড় স্টিভেন ফন ডি ফেলডে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত। ২০১৬ সালে ১২ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ফেসবুকে পরিচয়ের পর আমস্টারডাম থেকে ইংল্যান্ডে গিয়ে মিলটন কিনেস অঞ্চলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিলেন ডি ফেলডে। আদালত তাঁকে চার বছর কারাবাসের সাজা দিলেও ১২ মাস পর বের হয়ে এসে ভলিবলে ফিরে আসেন। ২৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়কে গত জুনে ডাচদের বিচ ভলিবল অলিম্পিক স্কোয়াডে ডাকা হয়।
প্যারিস অলিম্পিকে স্টিভেন ফন ডি ফেলডের অংশ নেওয়া নিয়ে কিছুদিন ধরেই সমালোচনা হচ্ছে। ম্যারাথনে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং ব্রিটেনের সাবেক তারকা ম্যারাথনার পলা র্যাডক্লিফ যেমন রেডিও স্টেশন এলবিসিকে এর আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোপপাপীদের খেলায় ফিরে আসার উদাহরণ টেনে ‘তাঁকে দ্বিতীয়বার সাজা দেওয়া কঠিন’ বলে ‘শুভকামনা’ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে র্যাডক্লিফ এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমি খুব লজ্জিত যে বাজেভাবে বলেছি এবং জোরেশোরে ধর্ষণের নিন্দা করিনি।’
বিবিসির পণ্ডিত হিসেবে কাজ করা র্যাডক্লিফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষমা চেয়ে আরও বলেছেন, ‘শাস্তির পর দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়ায় আমি বিশ্বাস করি কিন্তু এটাও মনে করি যে অলিম্পিক তাদের জন্য হওয়া উচিত, যারা আদর্শ সমুন্নত রাখে—এ কারণে খুব বাজেভাবে ডোপের উদাহরণ টেনেছি। আমি নিজেই নিজের ওপর বিস্মিত ও হতাশ। খুব বাজেভাবে বলেছি। আমি দুঃখিত এবং ভালোভাবে বলা উচিত ছিল।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বিভিন্ন গোষ্ঠী এরই মধ্যে সতর্কতা প্রকাশ করে বলেছে, খেলাধুলার কর্তৃপক্ষ ধর্ষকদের প্রতি বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছেন এবং ঘটনার শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের ওপরও ক্ষতির প্রভাব পড়বে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের রেপ ক্রাইসিস প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিয়ারা বার্গম্যান বলেছেন, অলিম্পিকে দে ফেলদের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ অন্তর্ভুক্তির কারণে ‘বড় রকমের দায়মুক্তির ধারণা’ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘রোল মডেল হওয়ার ঘোষণাপত্রে সব অ্যাথলেট সই করার পরও শিশু ধর্ষণ করে অলিম্পিকে খেলতে পারাটা স্রেফ দুঃখজনক।’ বার্গম্যান আরও বলেছেন, ‘ঘটনার শিকার হয়েছেন যিনি, তাঁর ওপর প্রভাব তো পড়বেই। কিন্তু নারী ও শিশুদের ওপর প্রতিটি সহিংসতাই সমাজের বিরুদ্ধে করা অপরাধ। অন্যান্য নারী ও শিশুদের ওপরও এর একই রকম প্রভাব পড়ে।’
স্টিভেন ফন ডি ফেলডে কীভাবে প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেন, তা আইওসিকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন বার্গম্যান, ‘আমরা এ পর্যন্ত এলাম কীভাবে? আমরা এমন জায়গায় এলাম কীভাবে, যেখানে শিশুধর্ষণকে কম গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় এবং তারপর কেউ হয়তো অলিম্পিকে পদকও জিততে পারে? এটা বিস্ময়কর। আমি মনে করি, অবশ্যই এর তদন্ত হওয়া উচিত যে কীভাবে এটা ঘটল।’
‘এন্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেনস কোয়ালিশন’–এর নির্বাহী পরিচালক আন্দ্রেয়া সিমোনও বলেছেন, ডি ফেলডের অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্তিতে ধর্ষকেরা ‘দুশ্চিন্তার বার্তা’ পেলেন। আর সেই বার্তাটি হলো, ‘(ধর্ষণ) এর কোনো পরিণতি ভোগ করতে হবে না এবং কোনো বাধাও নেই।’ সিমোনও বার্গম্যানের সুরে সুর মিলিয়ে আইওসিকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটেনের জেলখানায় ১২ মাস কারাবাসের পর স্টিভেন ফন ডি ফেলডেকে তাঁর দেশে পাঠানো হয়। সেখানে কয়েক মাস পর কারাগার থেকে বের হয়ে নেদারল্যান্ডসের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা শুরু করেন ২৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়।
আইওসি জানিয়েছে, অলিম্পিক গেমসে অ্যাথলেটদের বাছাই করার দায়িত্বটি নিজ নিজ দেশের অলিম্পিক কমিটির। স্টিভেন ফন ডি ফেলডেকে বাছাই করা নেদারল্যান্ডস অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, সাজা খাটার পর তিনি পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন এবং বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, পুনরায় তাঁর একই অপরাধ করার সম্ভাবনা নেই।